শিক্ষা ও চরিত্রগঠনে খেলাধূলার ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা
‘চল কোদাল চালাই, ভুলে মানের বালাই, ঝেড়ে অলস মেজাজ, হবে শরীর ঝালাই।’
‘সুস্থ দেহে সবল মনের বাস’-দেহগঠন ও মনের বিকাশের জন্য খেলাধুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রাচীন ভারতের ছাত্রজীবনের আদর্শ ছিল অধ্যয়ন-‘ছাত্রানাম অধ্যয়নং তপঃ’, কিন্তু একমাত্র অধ্যয়নকে ছাত্রজীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য বলে মনে করলে ভুল হবে। শিক্ষালাভ ও খেলাধুলো একে অপরের পরিপূরক। শরীর ও মন ঠিক না থাকলে কখনও লেখাপড়া সম্ভব নয়। তাই জন্য স্বামীজি বলেছেন-“গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে।”
খেলাকে শুধু খেলা হিসাবে দেখলে হবে না। আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞানীরা খেলাকে শিক্ষার বাহন করে তুলেছেন। সুস্থ শরীরের অধিকারীরাই পারে সুন্দর কিছু করতে ও লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হতে। আর এই সুস্থ শরীরের জন্য চাই নিয়মিত খেলাধুলো। দেহকে সুস্থ, কর্মক্ষম ও প্রাণবন্ত করতে খেলাধুলো অপরিহার্য। অধ্যয়ন ও শরীরচর্চায় সুসামঞ্জস্য বিকাশ ঘটলে মানসিক বিকাশ সম্ভব।
খেলাধুলো ছাত্রজীবনে শরীর ও মনকেই শুধু সুস্থ রাখে না, চরিত্রগঠনেও বড়ো ভূমিকা নেয়। দলকে নেতৃত্ব দেওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া, সহানুভূতি ও সহমর্মিতাবোধ খেলাধুলো থেকেই জন্ম নেয়। খেলাধুলোর মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীদের নিয়মশৃঙ্খলাবোধ, সময়ানুবর্তিতা জাগ্রত হয়। প্রত্যেক খেলায় আছে জয়-পরাজয়। এই জয়-পরাজয়কে সহজে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয় তাদের মধ্যে। পরবর্তীকালে জীবনে সাফল্য-ব্যর্থতাকে ছাত্রছাত্রীরা সহজেই মেনে নিতে পারে। নিয়মিত শৃঙ্খলা ও সংযম মেনে খেলাধুলোর মধ্য দিয়ে চারিত্রিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। খেলাধুলোর মাধ্যমে প্রগাঢ় হয় সংহতি, সম্প্রীতি, ঐক্য, জাতীয়তাবোধ ও সৌভ্রাতৃত্ববোধ।
অসুস্থ শরীর নিয়ে সুখের মুখ দেখা যায় না, জীবনে সফলতাও লাভ করা যায় না। খেলাধুলো শারীরিক ও মানসিক সুস্থ ছাত্রসমাজ গড়তে সক্ষম। গৃহে বিদ্যালয়ে চার দেয়ালের দম বন্ধ মানসিকতাকে কাটিয়ে একটু মুক্তির উপায় বাতলে দেয় খেলাধুলো। মানসিক বিকাশে চাই আনন্দের খোরাক, আর খেলাধুলো একমুঠো যেন বাতাস এনে দেয়। মানুষের মনে নির্মল নির্ভেজাল আনন্দ দিতে পারে একমাত্র খেলাধুলো।
আধুনিক যুগে বিকল্প জীবিকা হিসাবে খেলাধুলোর ভূমিকা অনবদ্য। আগে খেলা ছিল নিছক খেলা, যা মানুষের মনে আনন্দ দান করে। বর্তমান দিনে সেই ধারণা পালটে গেছে। আজ অনেকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে খেলাধুলোকে। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ভর করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে খেলোয়াড়ের খ্যাতি। দেশ ক্লাব, আন্তর্জাতিক সংস্থা খেলাধুলোর পিছনে বহু অর্থ ব্যয় করছে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার রোজগার করছে অনেক খেলোয়াড়। এমনকি খেলোয়াড়রাও বিভিন্ন চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। তাই পেশা হিসাবে ভারতবর্ষে তথা সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে খেলাধুলো।
পড়াশোনা ও খেলাধুলোর মধ্যে অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধ। উভয়ের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। উদার নীল আকাশে উড়ন্ত পাখির দুটি ডানার মতো এই দুটি বিষয়ের পাখায় ভর করে শিক্ষার্থীরা পাখির মতো জীবনাকাশে নির্ভয়ে ভেসে বেড়াতে পারে। ছাত্রজীবনের সার্বিক বিকাশে ও উন্নতিতে খেলাধুলো অত্যন্ত প্রয়োজন। আজ দিন এসেছে শুধু বই-এর পাতায় মুখ গুঁজে থাকলে চলবে না, বিশ্বের দরবারে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলোকে দরকার। পরিশেষে বলা যায় জীবনের উন্নতির সোপান খেলাধুলো। তাই কবিগুরুর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি-
“চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু,
সাহসবিস্তৃত বক্ষপট।”
আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা