সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ফ্রান্স ও হল্যান্ডের ভূমিকা লেখো

সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ফ্রান্স ও হল্যান্ডের ভূমিকা লেখো

সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ফ্রান্স ও হল্যান্ডের ভূমিকা লেখো
সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ফ্রান্স ও হল্যান্ডের ভূমিকা লেখো

সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ফ্রান্সের ভূমিকা

ফ্রান্সের সামুদ্রিক অভিযানের সূচনা ঘটেছিল অনেকটাই পরে। তাই ভৌগোলিক সম্প্রসারণে তারা বিশেষ কোনও নজির স্থাপন করতে পারেনি। তাছাড়া তেমন রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ার বিষয়টিও এক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল ছিল। তবে তা সত্ত্বেও ফ্রান্সের সামুদ্রিক অভিযানের পশ্চাতে কিছু উদ্দেশ্য ছিল এবং এক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন ফরাসি অভিযাত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

(1) উদ্দেশ্য: ফ্রান্সের সামুদ্রিক অভিযানের পিছনে বাণিজ্যবিস্তারের বিষয়টি বিশেষভাবে কার্যকরী ছিল।। তাছাড়া ফ্রান্সও পোর্তুগাল, স্পেন ও ইংল্যান্ডের মতোই উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে অগ্রসর হয়। তারা কানাডা, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। তাছাড়া খ্রিস্ট ধর্মপ্রচার, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ফ্রান্সের সামুদ্রিক অভিযান পরিচালিত হয়েছিল।

(2) ফরাসি অভিযাত্রীদের ভূমিকা:

  • জ্যাকুইস কার্টিয়ার: ফরাসি নাবিক জ্যাকুইস কার্টিয়ার (Jacques Cartier) ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আমেরিকার সেন্ট লরেন্স উপত্যকায় উপস্থিত হন এবং কানাডায় ফ্রান্সের প্রাধান্য বিস্তার করেন। এরপর দ্বিতীয় অভিযানে তিনি সেন্ট লরেন্স নদী ধরে আরও গভীরে যাত্রা করে বর্তমান কুইবেক ও মন্ট্রিয়াল অঞ্চলে উপস্থিত হন। বলাবাহুল্য, এই সকল স্থানে কার্টিয়ার ফ্রান্সের আধিপত্য স্থাপন করেন।
  • স্যামুয়েল ডি শ্যামপ্লেইন: বিশিষ্ট ফরাসি নাবিক ও অভিযাত্রী স্যামুয়েল ডি শ্যামপ্লেইন (Samuel De Champlain) ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের জন্য উত্তর আমেরিকা অভিযান শুরু করেন ও সেন্ট লরেন্স নিকটস্থ ভূখণ্ডের অধিবাসীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর তিনি ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে কুইবেক (Quebec) শহর প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীকালে ফ্রান্সের প্রধান উপনিবেশে পরিণত হয়। অন্যদিকে, এশিয়া ও আফ্রিকারও বেশকিছু স্থানে ফ্রান্স নিজেদের উপনিবেশ স্থাপনে সক্ষম হয়েছিল।

সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে হল্যান্ডের ভূমিকা

হল্যান্ড, যা বর্তমানে নেদারল্যান্ডস নামে পরিচিত সপ্তদশ শতক থেকে সামুদ্রিক অভিযানে উৎসাহী হয়ে ওঠে।

(1) উদ্দেশ্য: নৌ-অভিযান তথা ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পোর্তুগাল ও স্পেনের উপনিবেশ গড়ে উঠলে হল্যান্ডও নিজেদের বাণিজ্যিক ও ঔপনিবেশিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে সমুদ্র অভিযানে উদ্যোগী হয়। এসময় শক্তিশালী নৌবাহিনীর মাধ্যমে ডাচরা ইউরোপের অন্যান্য শক্তিগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সমুদ্রপথে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়।

(2) ওলন্দাজদের আধিপত্য স্থাপন: হল্যান্ডের ডাচেরা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পোর্তুগিজ আধিপত্যের উপর প্রথম আঘাত হানে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ওলন্দাজ VOC কোম্পানি (১৬০২ খ্রিস্টাব্দ)। ১৬১২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আবার ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোম্পানি আফ্রিকা ও আমেরিকায় পোর্তুগাল এবং স্পেনের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে আক্রমণ করে। নিউ আমস্টারডামে ওলন্দাজদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ডাচরা ব্রাজিল, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালায়। পরবর্তীতে ১৬৪০-৪১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পোর্তুগালকে পরাস্ত করে তারা মালাক্কায় নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। বাংলার চুঁচুড়া এবং করমণ্ডল উপকূলে ডাচদের বাণিজ্যিক ঘাঁটি ছিল- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে তাদের বাণিজ্য চলত এখান থেকেই।

(3) আবেন তাসমানের ভূমিকা: হল্যান্ডের সামুদ্রিক অভিযানের ক্ষেত্রে প্রখ্যাত ওলন্দাজ অভিযাত্রী আবেল তাসমান (Abel Tasman)-এর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে তাসমান হল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণে যাত্রা করে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ উপকূলে একটি দ্বীপ আবিষ্কার করেন, প্রথমে যা পরিচিত ছিল ভ্যান ডিয়েমেন্স ল্যান্ড (Van Diemen’s Land) নামে। পরবর্তীকালে এটি তাসমানিয়া (Tasmania) নামে পরিচিত হয়।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment