স্থাপত্যশিল্পের ওপর রেনেসাঁর প্রভাব উল্লেখ করো
অথবা, রেনেসাঁ যুগে ইউরোপে স্থাপত্যের অগ্রগতি সম্পর্কে কী জান

ভূমিকা
পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে রেনেসাঁ প্রসূত মানবতাবাদ চিন্তাভাবনার জগতে যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল, তার প্রভাব লক্ষ করা যায়-শিল্পস্থাপত্যের ক্ষেত্রেও। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের প্রথমদিকে ইটালির ফ্লোরেন্সে নতুন নতুন স্থাপত্য সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে রেনেসাঁ যুগের স্থাপত্যরীতি ইউরোপের অন্যত্র বিস্তারলাভ করে।
(1) রেনেসাঁর প্রাথমিক পর্যায়ের স্থাপত্য : শিল্প ইতিহাসবিদরা রেনেসাঁর যুগকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। সেই অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ে (Quttrocento) রেনেসাঁর স্থাপত্যরীতির ভিত্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলি তৈরি হয়। এ কাজে যারা প্রণম্য তাঁরা হলেন-বুনেলেশি, মাইকেল এঞ্জেলো এবং বাতিস্তা অ্যালবার্টি।
- পঞ্চদশ শতকের শুরুতে ফ্লোরেন্সে স্থাপত্যশিল্পে এক নতুন ধারার সূচনা করেন ফিলিপ্পো ব্রুনেলেশি (Filippo Brunellesehi)। আগের আমলের গথিক ও রোমানেস্ক স্থাপত্যরীতির থেকে এই নতুন রীতির মধ্যে পার্থক্য হল স্থাপত্যের প্রতিটি অংশের মধ্যে সমতা ও আনুপাতিক হারের সামঞ্জস্যতা। গথিক রীতির আকাশছোঁয়া উচ্চতার পরিবর্তে গ্রিক মন্দিরের আদলে অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার সোজা কলাম ব্যবহার করা হয়। গোলাকৃতি খিলান বা arch-এর ব্যবহারও শুরু করেন ব্রুনেলেশি। ফ্লোরেন্সের ক্যাথেড্রালে ইট দ্বারা নির্মিত বিশাল ‘ডোম’ বা গম্বুজ তাঁর অনন্য কীর্তি। এ ছাড়া সান লরেঞ্জো (San Larenzo) গির্জা ইত্যাদি তাঁর নির্মিত অন্যতম স্থাপত্য।
- মাইকেল অ্যাঞ্জেলো ধনী মেদিচি বণিক পরিবারের কথামতো তাঁর স্থাপত্যজীবন শুরু করেন। যদিও ভাস্কর হিসেবে ‘ডেভিড’-এর মূর্তিনির্মাণ করে তিনি অমর হয়ে আছেন, তাঁর স্থাপত্য প্রতিভার পরিচয় রয়েছে-ভিলা মেডিচি, সান মার্চ্চো গ্রন্থাগার ইত্যাদি। তিনি পাথরের ব্যবহারে বৈচিত্র্য আনেন এবং ত্রিকোণাকৃতি কার্নিসবিশিষ্ট জানালার (Pedimented window) ব্যবহার শুরু করেন।
- লিয়ন বাতিস্তা অ্যালবার্টি শিল্পীর জগৎ ও মানবতাবাদী বিদ্যাচর্চার মধ্যে সেতুবন্ধন করেছিলেন। তাঁর রচিত ‘De re Aedificatoria’ স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসে একটি আকরগ্রন্থ। তাঁর নির্দেশনায় গঠিত মান্টুয়ার সান্তা আন্দ্রিয়া ব্যাসিলিকা অন্যতম রেনেসাঁ স্থাপত্য।
(2) পরিণত রেনেসাঁ পর্যায়ের স্থাপত্য: পঞ্চদশ শতকের শেষ ও ষোড়শ শতকের শুরুতে এই পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য স্থপতি হলেন-ব্রামান্তে, সাঙ্গালো, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো এবং রাফায়েল।
- দোনাতো ব্রামান্তের উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হল মিলানের সান্তা মারিয়া গির্জা, যা ইট দ্বারা তৈরি। গোলাকার গম্বুজ, অষ্টভুজাকার খিলান এবং স্থানীয় পোড়ামাটির অলংকরণ এই স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়া রোমের ‘টেম্পিত্তো’ তাঁর স্থাপত্যকীর্তির উদাহরণ। রোমের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার জন্য তাঁর পরিকল্পনাতেই কাজ শুরু হয়, কিন্তু ব্রামান্তের মৃত্যু হলে সে কাজ মাইকেল অ্যাঞ্জেলো কিছু পরিবর্তিত নকশায় সম্পন্ন করেন।
- অ্যান্তোনিও সাঙ্গালোর মূল কীর্তি হল ২৯৫ মিটার উঁচু কারনিম প্রাসাদ তৈরি করা, যার দরজা ও জানালার সূক্ষ্ম কারুকার্য ছিল অপূর্ব।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর