স্পার্টার শাসনতন্ত্র বা সংবিধানের উপর একটি টীকা লেখো
স্পার্টার শাসনতন্ত্র বা সংবিধান
স্পার্টানরা ছিল মনেপ্রাণে রক্ষণশীল এবং এই রক্ষণশীলতার পরিচয় মেলে তাদের সংবিধানেও। একেবারে বিকশিত অবস্থায় স্পার্টার সংবিধান প্রধানত চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়েছিল। এগুলি হল-
(i) রাজা
হোমারীয় যুগের শেষের দিকে সর্বত্র রাজার ক্ষমতা সংকুচিত হলেও স্পার্টায় কিন্তু রাজতন্ত্র টিকে ছিল। নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার সময়কাল থেকেই স্পার্টায় দুটি প্রধান গোষ্ঠী থেকে দুজন রাজা নিয়োগের রীতি প্রচলিত ছিল। রাজপদ ছিল বংশানুক্রমিক। স্পার্টায় রাজাদের ধর্মীয় অধিকার তো বটেই এমনকি সামরিক ও বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা বা অধিকারগুলিও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাজার ক্ষমতা নানাভাবে নিয়ন্ত্রিত হত বলে জানা যায়।
(ii) গেবুসিয়া
স্পার্টার শাসন পরিষদ বা সিনেট গেরুসিয়া (Gerousia) নামে পরিচিত ছিল। দুজন রাজা এবং ৬০ বছর বয়সি অভিজাতবংশীয় ২৮ জন প্রবীণদের নিয়ে গঠিত হত এই পরিষদ। অ্যাপেলা বা সাধারণ সভায় আলোচ্য বিষয়গুলি গেরুসিয়া স্থির করত। ফৌজদারি মামলার বিচার, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ, আইন প্রণয়ন ও যুদ্ধ ঘোষণা-সহ রাজার বিচারের একমাত্র অধিকার ছিল এই পরিষদের।
(iii) অ্যাপেলা
স্পার্টার রাষ্ট্রীয় পরিষদ অ্যাপেলা (Apella) নামে পরিচিত ছিল। ৩০ বছর বয়সি কোনও সুপ্রতিষ্ঠিত স্পাটার্ন অ্যাপেলার সদস্য ও এর অধিবেশনে যোগ দিতে পারতেন। প্রতি মাসে অন্তত একবার এর অধিবেশন বসত। এই পরিষদের সদস্যবৃন্দ গেরুসিয়ার সদস্য, ইফর ও অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচন, আইন প্রণয়ন ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করত।
(iv) পাঁচজন ইফর
স্পার্টার রাজনৈতিক সংবিধানের বিভিন্ন অংশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাঁচজন ইফর (Ephor) বা ইফরেট এই বিভাগটি। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে রাষ্ট্রের অসামরিক প্রশাসন পরিচালনার জন্য স্পার্টায় ইফর নামক একটি পদ সৃষ্টি করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্পার্টার সংবিধানের মূল চারটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম তিনটি সংগঠন গ্রিসের সকল নগররাষ্ট্রেও ছিল। কেবলমাত্র ইফরেট বা ইফর এই ব্যবস্থাটি স্পার্টার নিজস্ব বিষয়। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তারা রাজার কাজের তত্ত্বাবধান করতেন, যুদ্ধের সময় রাজার সহগামী হতেন, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলারক্ষা-সহ দেওয়ানি মামলার সর্বোচ্চ বিচারকের ভূমিকা পালন করতেন।