স্বাধীনতার শ্রেণিবিভাগ করো

স্বাধীনতার শ্রেণিবিভাগ করো
স্বাধীনতার শ্রেণিবিভাগ করো

স্বাধীনতার শ্রেণিবিভাগ/স্বাধীনতার বিভিন্ন দিক

লাতিন ‘Liber’ শব্দটি থেকে ইংরেজি ‘Liberty’ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হল ‘স্বাধীন’। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটিকে নানা অর্থে ব্যবহার করা হয় বলে এর কোনো সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। তবে ‘স্বাধীনতা’ বলতে এমন এক সামাজিক পরিবেশকে বোঝায়, যেখানে প্রত্যেকে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটিয়ে সমান সুযোগসুবিধা লাভ করে।
স্বাধীনতাকে বিভিন্ন দিক থেকে দেখা হয়। তবে সার্বিক দিক থেকে স্বাধীনতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা- [1] পৌর স্বাধীনতা বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, (2) রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং [3] অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।

[1] পৌর বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা: 

যে স্বাধীনতা অনুসারে বাস্তি হিসেবে মানুষ আইনস্বীকৃত স্বাধীনতা ভোগ করে তখন তাকে বলা হয় পৌর বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। যেমন-[a] জীবনের নিরাপত্তার স্বাধীনতা, [b] দৈহিক স্বাধীনতা, [c] ভোগ ও হস্তান্তরের স্বাধীনতা। হ্যারল্ড ল্যাস্কি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলতে ব্যক্তির স্বার্থসমন্বিত স্বাধীনতাকে বুঝিয়েছেন। আবার ইংরেজ আইনবিদ ব্ল‍্যাকস্টোন তিনটি বিষয়কে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলে উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল-প্রথমত, বাক্তির নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা; দ্বিতীয়ত, বাক্তির নিজের সম্পত্তি ভোগের স্বাধীনতা; তৃতীয়ত, বাস্তির সম্পত্তি অপরকে প্রদান করার স্বাধীনতা।

[2] রাজনৈতিক স্বাধীনতা: 

যে স্বাধীনতার মাধ্যমে বাস্তি রাষ্ট্রীয় কার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণের সুযোগসুবিধা লাভ করতে পারে, তাকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলে। অধ্যাপক বাকার বলেছেন যে, যেসমস্ত অধিকার ব্যক্তি সমাজের সভা হিসেবে লাভ করে এবং আইনগত সংগঠনে অংশগ্রহণের সুযোগসুবিধা লাভ করে, তাকে বলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মূলত, রাজনৈতিক স্বাধীনতা সরকারের গঠন ও কার্যপ্রণালীর সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক স্বাধীনতার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল- প্রথমত, জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে প্রতিটি প্রাপ্তবয়ক নাগরিকের ভোটদানের স্বাধীনত।। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যোগদানের স্বাধীনতা; তৃতীয়ত, সভা ও সমিতি গঠনের স্বাধীনতা; চতুর্থত, ব্যক্তির নিজ পছন্দ অনুসারে মতাদর্শে বিশ্বাসের স্বাধীনতা প্রভৃতি।

[3] অর্থনৈতিক স্বাধীনতা: 

যার দ্বারা বাক্তি অর্থনৈতিক দিক থেকে অনিশ্চিত জীবনযাপন ও অভাব থেকে মুক্ত পায়, এরূপ অধিকারকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে অন্যান্য স্বাধীনতা যুক্তিহীন হয়ে যায়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কেবল ব্যক্তিগত নয়, তা রাজনৈতিক বিষয়ের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। এই কারণেই বাকার বলেছেন যে, এই স্বাধীনতা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক-উভয় ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই ধরনের স্বাধীনতা প্রযুক্ত হতে পারে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কয়েকটি উদাহরণ হল- [a] যোগ্যতা অনুসারে বৃত্তিলাভের স্বাধীনতা, [b] অভাব থেকে মুক্তিলাভের স্বাধীনতা, [c] শোষিত না হওয়ার স্বাধীনতা, [d] অসুস্থ অবস্থায় বা অবসরকালীন অবস্থায় রাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার স্বাধীনতা।

Leave a Comment