সাম্যের বিভিন্ন ধরন ব্যাখ্যা করো। |
সাম্যের বিভিন্ন ধরন
সাম্য বলতে সাধারণভাবে বোঝায়, সমাজে সমস্তপ্রকার বৈষম্যের অবসান।
সাম্য বিভিন্নপ্রকার হতে পারে। তবে সাম্যকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-[1] স্বাভাবিক সাম্য, [2] সামাজিক সাম্য এবং [3] আইনগত সাম্য। আইনগত সামাকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়- [a] ব্যক্তিগত সাম্য, (b) রাজনৈতিক সাম্য এবং [c] অর্থনৈতিক সাম্য।
[1] স্বাভাবিক সাম্য:
সাম্যের যে ধারণা দ্বারা এ কথা ব্যক্ত হয় যে, “সমস্ত মানুষ সমান হয়ে জন্মেছে”, তাকে বলে স্বাভাবিক সাম্য। তবে এই ধারণাটির অনেকে সমালোচনা করেছেন। স্বাভাবিক সামোর মূল কথা হল-সমাজে কোনোপ্রকার কৃত্রিম বৈষম্য থাকবে না।
[2] সামাজিক সাম্য:
সাম্যের যে ধারণা অনুসারে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশমর্যাদা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষ সমাজের কাছে সমান, তাকে বলা হয় সামাজিক সামা। অর্থাৎ, সামাজিক সাম্য অনুসারে জাতিগত বিভেদ, বর্ণগত বৈষম্য, ধর্মীয় কারণে কোনোরূপ পার্থক্য করা হয় না। সমাজের প্রতিটি মানুষই সমান সুযোগসুবিধা লাভের অধিকারী।
[3] আইনগত সাম্য:
সাম্যের যে ধারণা অনুসারে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমমর্যাদার অধিকারী, তাকে আইনগত সামা বলে। এই সাম্য অনুসারে সংবিধানে উল্লিখিত অধিকারসমূহ যেমন সকলে ভোগ করতে পারবে, তেমনই বিচারের ক্ষেত্রে কোনো অপরাধীকে বিশেষভাবে শাস্তি ভোগ থেকে রহিত করা যাবে না।
[a] বাক্তিগত সাম্য: কোনো সমাজে ব্যক্তিগত সাম্য আছে তখনই বলা যাবে, যখন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি প্রভৃতি নির্বিশেষে সমাজের সকলেই নিজ নিজ ব্যক্তিত্ববিকাশের অধিকারগুলি সমভাবে ভোগ করতে পারে। বাক্তিগত সাম্যপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনের অনুশাসনের প্রয়োজন আছে। মার্কসবাদীদের মতে, বাক্তিগত সামা কেবল সমাজতান্ত্রিক সমাজেই বাস্তবায়িত হওয়ার পরিবেশ পায়।
(b) রাজনৈতিক সামা: নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে যখন প্রতিটি ঝুক্তি রাষ্ট্রের কার্যকলাপে অংশ নেওয়ার সমানাধিকার লাভ করে, তখন তাকে বলে রাজনৈতিক সাম্য। যেমন- রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের নির্বাচন করার অধিকার, নির্বাচিত হওয়ার অধিকার, সরকারকে সমালোচনা করার অধিকার প্রভৃতি।
[c] অর্থনৈতিক সামা: সমাজে সকলপ্রকার অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসানই হল অর্থনৈতিক সামা। অর্থনৈতিক সাম্যের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। যেমন- [1] অর্থনৈতিক সাম্য হল সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে সাম্য, (i) প্রত্যেকের তার নিজ পছন্দ ও যোগ্যতা অনুসারে কাজ পাওয়ার সুবিধা, [m] ধনী শ্রেণি বা গোষ্ঠীর শোষণের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন জীবিকানির্বাহের সুযোগ।