Jadavpur Vidyapith
বিভাগ-ক
1 (i) বুরবোঁ শাসনাধীন ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ (Museum of Economic Errors) বলে অভিহিত
করেছেন – (b) অ্যাডাম স্মিথ।
(ii) ‘আমিই রাষ্ট্র’ এই উক্তিটি করেছেন – (a) চতুর্দশ লুই। (iii) পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয় (d) ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে।
(iv) কনস্যুলেট নামে নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন (b) নেপোলিয়ন।
(v) নেপোলিয়নের পতনের পর বুরবোঁ বংশের যে শাসক রাজা হন, তিনি হলেন – (d) অষ্টাদশ লুই।
(vi) বিসমার্ক যে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তা হল – (c) প্রাশিয়া।
(vii) ‘ মুক্তিদাতা জার’ প্রসিদ্ধ হিসেবে (d) দ্বিতীয় আলেকজান্ডার।
(viii) ‘শিল্পবিপ্লব’ কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন – (b) অগাস্তে ব্ল্যাঙ্কি।
(ix) একসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ হিসেবে পরিচিত ছিল (b) আফ্রিকা।
(x) বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ইউরোপীয়রা সর্বপ্রথম ভারতে আসে, তারা হল – (a) পোর্তুগিজ।
(xi) ‘আধুনিক রাশিয়ার জনক’ বলা হয় – (a) জার পিটার দ্য গ্রেটকে।
(xii) চোদ্দো দফা নীতির প্রবক্তা হলেন (d) উড্রো উইলসন।
(xiii) রোমানভ বংশ রাজত্ব করত – (d) রাশিয়ায়।
(xiv) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল – (b) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে।
(xv) হিটলার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন – (c) জার্মানির।
(xvi) হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয় (b) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
(xvii)
জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গ ‘আন্তর্জাতিক অবস্থিত ছিল – (b) হেগ-এ।
(xviii) আটলান্টিক সনদ ঘোষণা করেছিলেন (b) রুজভেল্ট ও চার্চিল।
(xix) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রথম মহাসচিব ছিলেন (d) ট্রিগভি লি।
(xx) রাশিয়ার মুদ্রার নাম – (a) রুবেল।
বিভাগ-খ
উপবিভাগ : A
(i) ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে পরবর্তী ১৭৫ বছর স্টেটস্ জেনারেল বা ফরাসি জাতীয় প্রতিনিধি সভার কোনো অধিবেশন আহ্বান করা হয়নি।
(ii) আমি বিপ্লবের সন্তান, আমিই বিপ্লবের ধ্বংসকারী উক্তিটি করেছেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
(iii) ‘Big Four’ বা ‘চার প্রধান’ শক্তির মধ্যে সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন মেটারনিখ।
(iv) ইটালির ঐক্য আন্দোলনের মস্তিষ্ক’ বলে অভিহিত করা হয় কাউন্ট ক্যামিলো বেনসো ডি ক্যাভুরকে।
উপবিভাগ : B
(i) রাশিয়ার জমিদারদের মির নামে অভিহিত করা হয়। মিথ্যা।
(ii) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন চোদ্দো দফা শর্ত পেশ করেন। – মিথ্যা।
(iii) ইয়ং ইটালি দল গঠন করেন ক্যাভুর। মিথ্যা ।
(iv) রাশিয়ার পার্লামেন্টের নাম ডুমা। – সত্য।
উপবিভাগ : C
নামস্তম্ভের সঙ্গে ডানস্তম্ভের মিলকরণ :
(i) কাঁদিদ (b) ভলতেয়ার
(ii) নেপোলিয়নের অভিষেক (a) নোটরডাম গির্জা
(iii) রক্ত ও লৌহ নীতি (d) বিসমার্ক
(iv) এপ্রিল থিসিস (c) লেনিন
উপবিভাগ : E
(i) ‘সমুদ্রের রানি’ বলা হয় ইংল্যান্ড-কে।
(ii) কার্লসবাড ডিক্রি জারি করেন প্রিন্স মেটারনিখ।
(iii) জার্মানির সম্রাটকে বলা হয় কাইজার।
(iv) নিরাপত্তা বাতি আবিষ্কার করেন হামফ্রে ডেভি।
উপবিভাগ : F
(i) ব্যাখ্যা – (c) এই কালপর্বে ইউরোপীয় দেশগুলি রণসাজে সজ্জিত হলেও ইউরোপে বড়ো ধরনের কোনো যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হয়নি।
(ii) ব্যাখ্যা – (c) জোলভেরাইন অর্থনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জার্মানিতে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল।
(iii) ব্যাখ্যা (b) জার সরকার অ-রুশদের ওপর ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি চাপিয়ে দেয়।
(iv) ব্যাখ্যা (c) এখানে সাধারণত শহুরে দরিদ্র শ্রমিকদের বাস ছিল।
বিভাগ-গ
3 (i) ফরাসি সমাজে তৃতীয় সম্প্রদায় বা থার্ড এস্টেটকে বলা হয় অধিকারহীন শ্রেণি। থার্ড এস্টেট বলতে বোঝায় যাজক বা অভিজাত ছাড়া সমাজের সমস্ত সাধারণ প্রজাদের যেমন— বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার, সাঁকুলোত্ ইত্যাদি। রাষ্ট্রের মোট রাজস্বের শতকরা ৯৬ ভাগ তৃতীয় সম্প্রদায়কে দিতে হত, কিন্তু রাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা কোনো সুযোগসুবিধা পেত না। সমস্ত কর মিটিয়ে তাদের হাতে থাকত আয়ের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ যা দিয়ে তাদের গ্রাসাচ্ছাদন সম্ভব ছিল না। তাই তৃতীয় সম্প্রদায়কে অধিকারহীন শ্রেণি বলা হয়।
(ii) Bantra MSPC High School-এর 3. (vi) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iii) Baita MN High School (HS) -এর 3. (vi) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iv) নৈরাজ্যবাদের জনক বলা হয় পিয়ারে জোসেফ প্রুধোঁকে।
(v) গেস্টাপো হল হিটলারের নেতৃত্বাধীন জার্মানির গুপ্ত পুলিশ বাহিনী।
(vi) Falakata Girls’ High School (HS) -এর 3. (xi) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(vii) WHO-এর পুরো নাম হল World Health Organisation। 1948 খ্রিস্টাব্দের 7 এপ্রিল WHO প্রতিষ্ঠিত হয়। WHO-এর সদর দপ্তর সুইটজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত।
(viii) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্রে -এর 3. (xii) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ix) অঁসিয়া রেজিম : ‘অঁসিয়া রেজিম’ বা ‘Ancient Regime’ বলতে বোঝায় পুরাতনতন্ত্র বা সাবেকি ব্যবস্থা। ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা ও ত্রুটিপূর্ণ অর্থনীতি ছিল পুরাতনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। একেই বলা হয় ‘অঁসিয়া রেজিম’।
(x) Balurghat High School-এর 6. (xii) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xi) ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুন মিত্রপক্ষীয় সেনা ফ্রান্সে অবতরণ করে পশ্চিম ইউরোপে তার দ্বিতীয় রণাঙ্গনের সূচনা করে। অক্ষশক্তির হাত থেকে ফ্রান্স মুক্ত হয় বলে ওই দিনটি ডি ডে(D Day) বা মুক্তি দিবস নামে পরিচিত।
(xii) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্রে -এর 3. (iv) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xiii) Falakata Girls’ High School (HS)-এর 3. (v) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xiv) নেপোলিয়ন ১০ মাস এলবা দ্বীপে কাটিয়ে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ হঠাৎ ফ্রান্সে ফিরে এলে ফ্রান্সের বুরবোঁ বংশীয় রাজা অষ্টাদশ লুই ফ্রান্সের সিংহাসন ছেড়ে পালিয়ে যান ইংল্যান্ডে। অতঃপর নেপোলিয়ন তার অনুগত সেনাদের নিয়ে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ প্যারিসে উপস্থিত হন। নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করে মোট একশো দিন অর্থাৎ ২০ মার্চ থেকে ২৯ জুন ১৮১৫ পর্যন্ত রাজত্ব করেন ফ্রান্সে। একেই বলে একশত দিবসের রাজত্ব।
বিভাগ-ঘ
4 (i) মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ঘোষিত (৮ জানুয়ারি, ১৯১৮ খ্রি) ‘চোদ্দো দফা শর্ত’-র শেষ দফার শর্তানুসারে জাতিসংঘ (League of Nations) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতিসংঘ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধ নিবারণে ব্যর্থ হয়েছিল।
ব্যর্থতার কারণ : জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণগুলি হল
আমেরিকা-সহ অনেক রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি : বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা জাতিসংঘের সদস্যপদ গ্রহণ করেনি। তা ছাড়া জার্মানি, ইটালি, লাতিন আমেরিকার অনেক রাষ্ট্র জাতিসংঘ ত্যাগ করেছিল এবং রাশিয়া বহিষ্কৃত হয়েছিল।
সাংবিধানিক ত্রুটি : জাতিসংঘ শক্তিধর ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির দ্বারা পরিচালিত হত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী রাষ্ট্রগুলি জাতিসংঘকে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় ব্যবহার করেছিল বলে পরাজিত রাষ্ট্রগুলি জাতিসংঘের বিরোধিতা করেছিল। এ ছাড়া আক্রমণকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধ ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
নিজস্ব সামরিক বাহিনীর অভাব : নিজস্ব সামরিক বাহিনী ছিল না বলে জাতিসংঘ প্রয়োজনে, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারেনি।
তোষণনীতি : ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জাতিসংঘকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। জাতিসংঘ দুর্বল সংস্থা ছিল বলে শক্তিশালী দেশগুলির অন্যায় কাজের বিরোধিতা করতে পারেনি। ফ্রান্স জার্মানির রূঢ় শিল্পাঞ্চলে এবং জাপান চিনের মাঞ্চুরিয়ায় সামরিক আগ্রাসন চালায়। জার্মানি রাইন অঞ্চলে সেনা অভিযান চালায় (১৯৩৬ খ্রি) এবং অস্ট্রিয়া দখল করে (১৯৩৮ খ্রি) । এ ছাড়া ইটালি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে আবিসিনিয়া দখল করে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বা তোষণনীতি অনুসরণ করে।
নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা : জাতিসংঘের উদ্যোগে জেনেভা শহরে নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (১৯৩২-৩৩ খ্রি)। এই সম্মেলনে ইটালি ও জার্মানির অস্ত্র মজুতের পরিমাণের প্রশ্নে মতভেদ দেখা দেয়। ফলে হিটলারের নির্দেশে জার্মান প্রতিনিধি সম্মেলন ত্যাগ করেন এবং নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ব্যর্থ হয়।
ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক স্বার্থসংঘাত, নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা, জার্মানি ইটালির সদস্যপদ ত্যাগ এবং সর্বোপরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা জাতিসংঘের পতনকে । { সম্পূর্ণ করেছিল।
অথবা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র -এর 4. (x) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ii) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি : সোভিয়েত সাম্যবাদ ও সোভিয়েত সরকারের প্রতি বিরোধী মনোভাব পোষণ করলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট জার্মানি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপ) রাশিয়ার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ) সঙ্গে সমগ্র বিশ্বকে চমকিত করে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।
এই চুক্তি দ্বারা স্থির হয়, জার্মানি ও রাশিয়া পরবর্তী দশ বছরে একে অপরকে আক্রমণ করবে না। তৃতীয় কোনো শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে তৃতীয় পক্ষকে কেউ সাহায্য করবে না। নিজেদের মধ্যেকার বিবাদ শান্তিপূর্ণ উপায়ে মীমাংসা করবে। পোল্যান্ডকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেবে।
তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পশ্চিম সীমান্তে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী বলে হিটলার রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের দ্বারা পূর্ব সীমান্তে যুদ্ধের সম্ভাবনা আপাতত দূর করেন। সমগ্র ইউরোপে সাম্যবাদ বিরোধী আবহাওয়ায় ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির সঙ্গে জোট গঠনে ব্যর্থ হয়ে রাশিয়া নিজের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে জার্মানির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে। তবে চূড়ান্ত আগ্রাসী হিটলার অনাক্রমণ চুক্তি বলবৎ থাকা সত্ত্বেও ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন রাশিয়া আক্রমণ করেন।
অথবা, ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর পরাজিত জার্মানির সঙ্গে মিত্রপক্ষের যে ‘ভার্সাই সন্ধি’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাকে জার্মান জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা অপমানজনক এবং জবরদস্তিমূলক বলে অভিহিত করেছেন।
জবরদস্তিমূলক চুক্তি বলার যৌক্তিকতা :
প্রতিহিংসা : পরাজিত জার্মানির মতামতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মিত্রশক্তিবর্গ ভার্সাই সন্ধির শর্তগুলি একতরফাভাবে রচনা করেছিল।
অপমান : যে সকল জার্মান প্রতিনিধি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্যারিসে এসেছিলেন তাদের সঙ্গে ঘৃণ্য অপরাধীর মতো ব্যবহার করে চরম অপমান করা হয়েছিল।
সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করা : জার্মান প্রতিনিধিদের কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে একটি ঘরে ঢুকিয়ে উদ্ধত বেয়োনেটের সামনে একপ্রকার জোর করে এই সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
বিমান আক্রমণের ভয় দেখানো : জার্মান প্রতিনিধিদের ভয় দেখানো হয়েছিল, যদি তারা চুক্তি স্বাক্ষর না করে তাহলে মিত্রপক্ষ পুনরায় জার্মানিতে বিমান আক্রমণ চালাবে।
ন্যায়নীতি লঙ্ঘন : ন্যায়নীতি লঙ্ঘন করে মিত্রপক্ষ তাদের সামরিক শক্তি বিন্দুমাত্র না কমিয়ে শুধুমাত্র জার্মানির সামরিক শক্তি হ্রাস করে জার্মানিকে দুর্বল করে তুলতে চেয়েছিল।
অন্যান্য কারণ : জার্মানির খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ সার অঞ্চল দখল করে নেওয়ার পাশাপাশি, জার্মানির ওপর বিপুল পরিমাণ করের বোঝাও চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফ্রান্স দখল করে আলসাস ও লোরেন। পোল্যান্ড পায় পোজেন ও পশ্চিম প্রাশিয়া, ডেনমার্ক পায় স্লেজউইগ, বেলজিয়াম পায় মেলমেডি। ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির প্রায় ২৫ হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ড, ৭০ লক্ষ অধিবাসী, ১৫% কৃষিজমি ও ১২% শিল্পকেন্দ্র কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
উপরিউক্ত কারণগুলির জন্য প্রতিটি জার্মান নাগরিকের কাছে ভার্সাই সন্ধি ‘জবরদস্তিমূলক সন্ধি’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
(iii) মহামন্দা : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলিতে যে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছিল তাকে ঐতিহাসিকরা ও অর্থনীতিবিদরা ‘মহামন্দা’ বা Great Depression বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সামরিক বিপর্যয়ের ধাক্কা সামাল দেওয়ার পর বিশের দশক থেকে মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রপতি হুভারের ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটের মার্কিন শেয়ার বাজারে ধস নামে। ফলে গুজব রটতে শুরু করে যে, বাজারের তেজিভাব দ্রুত কমে আসছে। এর ফলে শেয়ারের দর খুব বেশি কমে যাওয়ার আগেই সবাই শেয়ার বিক্রির জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। ২৪ অক্টোবর (এই দিনটি কালো বৃহস্পতিবার নামে খ্যাত) প্রায় ৩ কোটি, ২৯ অক্টোবর ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লক্ষ লক্ষ সাধারণ জনগণ এক নিমেষে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। এমনকি বিভিন্ন ব্যাংক যারা শেয়ার বাজারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছিল, তারাও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এর ফলে লক্ষ লক্ষ আতঙ্কিত মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে আগ্রহী হয়, কারণ তারা বুঝতে পারে যে ব্যাংকের তুলনায় বাড়িতে টাকা রাখা বেশি নিরাপদ। কিন্তু ব্যাংকগুলির হাতে অত টাকার জোগান না থাকায় তারা চিরতরে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমেরিকা থেকে এই মন্দা সমগ্র ইউরোপ এবং সমগ্র বিশ্বে ভূমিকম্পের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
এই মহমন্দার প্রভাবে ১৯২৯-১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমেরিকার ৫০০০টি ব্যাংক ফেল করে এবং আরও প্রায় ৩৫০০টি ব্যাংক তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়। মহামন্দার প্রথম দুমাসে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা ৪ হাজার কোটি ডলার হারায়। ব্যাংক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় আমানতকারী সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি ব্যাংকের ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। শিল্পদ্রব্য বিক্রি না হওয়ার ফলে কলকারখানা বন্ধ হতে থাকে এবং শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে। কৃষিজাত পণ্যের মূল্যও অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পাওয়ায় লক্ষ লক্ষ কৃষক জমি হারিয়ে ভিখারি হয়ে যায়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে বেকারের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪০ লক্ষ।
এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য হুভার কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন যেমন – শিল্পপতিদের নির্দেশ দেন শ্রমিকদের বেতন হ্রাস ও ছাঁটাই না করতে, পুনর্নির্মাণ অর্থ কর্পোরেশন গঠনের মাধ্যমে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যের উন্নতির জন্য ঋণদানের ব্যবস্থা করেন, ব্যাংক, শিল্পপতি ও কৃষকদের ঋণদানের ব্যবস্থা করেন। যদিও এইসব ব্যবস্থার দ্বারা মার্কিন অর্থনৈতিক অবস্থার বিশেষ কিছু উন্নতি হয়নি।
অথবা, ফ্যাসিস্ট দলের লক্ষ্য : মুসোলিনির নেতৃত্বে ইটালিতে ফ্যাসিস্ট দল ক্ষমতা লাভ করে। একনায়কতন্ত্রী এই দলের লক্ষ্য ছিল • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইটালির মর্যাদা বৃদ্ধি করা। ও রাষ্ট্রকে সর্বময় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। ও কমিউনিস্ট প্রভাব থেকে ইটালিকে রক্ষা করা। ও ইটালিকে বিশ্বে হৃত মর্যাদা ফিরিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে শক্তিশালী বিদেশনীতি গ্রহণ করা ইত্যাদি।
ফ্যাসিবাদের আদর্শ :
সর্বশক্তিমান ও সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : ফ্যাসিবাদের মূলনীতি হল রাষ্ট্রের চূড়ান্ত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে জনগণের ওপর রাষ্ট্রের অধিকার সর্বাধিক। ‘ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র নয় – রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি’– এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা: ফ্যাসিবাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে যে-কোনো বিরোধী দলের অস্তিত্ব লুপ্ত করার জন্য গ্রেফতার, হত্যা এবং সন্ত্রাস সৃষ্টির পথ অনুসরণ করা হয়।
ব্যক্তিস্বাধীনতার উপেক্ষা : ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের কাছে জনগণের আত্মসমর্পণ বাধ্যতামূলক। ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য বলিপ্রদত্ত।
উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদে সমর্থন: ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রকৃতিগতভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী। তাদের মতে, সাম্রাজ্যবিস্তার জাতির ‘পবিত্র কর্তব্য’ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ‘কাপুরুষের স্বপ্ন’।
কর্পোরেট রাষ্ট্র: ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য সার্বিক চেষ্টা করে। খাদ্যসংকট, নৈরাজ্য ও বেকার সমস্যার সমাধান, শিল্পের জাতীয়করণ, শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কাজ ও বিভিন্ন সুযোগসুবিধা প্রদান, বাণিজ্যের উন্নতি, পথ ও পরিবহণের উন্নতি, জনমানসে রাষ্ট্রের জৌলুস বৃদ্ধি করে। কিন্তু ক্ষমতা থাকে একনায়কের হাতে। এখানে খ্রিস্টধর্ম প্রধান হলেও চার্চের কর্তৃত্ব হ্রাস পায়। চার্চের সম্পত্তির জাতীয়করণ করা হয়।
(iv) Bankura Zilla School -এর 4. (iv) অথনা-এর উত্তরটি দ্যাখো।
অথবা, Burdwan Raj Collegiate School -এর 4. (ix) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(v) নেপোলিয়নের পতনের পর ইউরোপীয় শক্তিবর্গ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা শহরে এক সম্মেলনে (১৮১৪-১৫ খ্রি) সমবেত হন। এই সম্মেলনে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর তিনটি নীতি গৃহীত হয় – @ ন্যায্য অধিকার নীতি, ও শক্তিসাম্য নীতি ও ও ক্ষতিপূরণ নীতি। এর মধ্যে ন্যায্য অধিকার নীতি’ বিভিন্ন দেশে প্রযুক্ত হলেও সব দেশকে তা সমানভাবে প্রভাবিত করেনি।
ন্যায্য অধিকার নীতির প্রয়োগ : ভিয়েনা সম্মেলনে বলা হয় যে, ফরাসি বিপ্লবের আগে যে রাজা বা রাজবংশ যেখানে রাজত্ব করতেন, সেখানে তাঁর বা ওই রাজবংশের রাজত্ব করার অধিকার আছে। ভিয়েনা সম্মেলনের এই নীতি ন্যায্য অধিকার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতি অনুসারে– (ক) ফ্রান্সে বুরবোঁ বংশের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। (খ) বুরবোঁ বংশীয় শাসক অষ্টাদশ লুই ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। (গ) স্পেন, সিসিলি, নেপলস-এও বুরবোঁ বংশীয় শাসকেরা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন। (ঘ) সিসিলি ও নেপলসে ফার্দিনান্দের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। (ঙ) অস্ট্রিয়ায় হ্যাপসবার্গ বংশকে তাঁদের আগের রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়া হয়। (চ) অস্ট্রিয়া উত্তর ইটালির আধিপত্য ফিরে পায়। (ছ) মহামান্য পোপ মধ্য ইটালিতে তাঁর রাজ্য ফিরে পান। (জ) হল্যান্ডে অরেঞ্জ বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। (ঝ) স্যাভয়, জেনোয়া পিডমন্ট ও সার্ডিনিয়ায় স্যাভয় বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ভিক্টর ইমান্যুয়েল শাসক পদে প্রতিষ্ঠিত হন। ইটালি আবার ‘ভৌগোলিক সংজ্ঞায়’ পরিণত হয়।
ন্যায্য অধিকার নীতি প্রয়োগে বৈষম্য : তবে ন্যায্য অধিকার নীতি সবক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হয়নি।
ভেনিস ও জেনোয়ায় প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি।
জার্মান রাজ্যগুলিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। নবগঠিত ৩৯টি জার্মান রাজ্য নিয়ে একটি ‘বুন্ড’ (Bund) বা সমবায় গঠন করা হয়। এর ওপর অস্ট্রিয়ার সভাপতিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেলজিয়ামকে হল্যান্ডের সঙ্গে এবং নরওয়েকে ডেনমার্কের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সুইডেনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
ন্যায্য অধিকারের কথা বলা হলেও আসলে ভিয়েনা সম্মেলনের নেতৃবৃন্দ তাদের স্বার্থেই এই নীতিকে ব্যবহার করেছিলেন।
অথবা,
Chakdaha Bapuji Balika Vidyamandir -এর 4. (vi) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(vi) Balurghat High School -এর 7. (ii) অথনা-এর উত্তরটি দ্যাখো।
অথবা, কোড নেপোলিয়নের গুরুত্ব : ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল কোড নেপোলিয়ন প্রবর্তন। কোড নেপোলিয়নের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
কোড নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সে একই ধরনের আইনব্যবস্থা চালু করে। ফলে ফরাসি প্রশাসন একটি সুবিন্যস্ত রূপ লাভ করে। ফরাসি বিপ্লবকালে যে সমস্ত ঘোষণা ও আইনগত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল সেগুলি একটি আইনগ্রন্থে সংকলিত হয়। এইভাবে কোড নেপোলিয়নের প্রবর্তন বিপ্লবী আদর্শকে উজ্জীবিত ও রক্ষা করেছিল। ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রবর্তন ফ্রান্সের বুর্জোয়া শ্রেণি ও কৃষকসহ অধিকাংশ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। এইভাবে তা ফরাসি সমাজের বাইবেল’-এ পরিণত হয়। এই আইনের ফলে পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় ঠিক তেমনি সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্যও প্রতিষ্ঠিত হয়। ওব্যক্তি বা পরিবারের বিশেষ অধিকারের পরিবর্তে সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা ও সুযোগ লাভের অধিকার স্বীকৃত হয়। বংশকৌলীন্যের পরিবর্তে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরি প্রদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে কেবল অভিজাত বংশীয়রাই নয়, নিম্ন সম্প্রদায়ের যোগ্য ব্যক্তিরাও সামাজিক মর্যাদা অর্জন করার সুযোগ ও অধিকার লাভ করে। বিপ্লবের ফলে সামন্তপ্রথা লোপ করে যে নতুন ভূমি বন্দোবস্ত চালু করা হয়, কোড নেপোলিয়নে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে সামন্তপ্রথার অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত হয়। ও বিচারক্ষেত্রে জুরি ব্যবস্থার প্রবর্তন করে সামাজিক ন্যায়প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিকে আরও সুদৃঢ় করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল কোড নেপোলিয়নে।
বিভাগ- ঙ
5 (1) Burdwan Raj Collegiate School -এর 5. (i) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ii) ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের একটি যুগান্তকারী ঘটনা হল ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লব (Russian Revolution)। এই রুশ বিপ্লবের পিছনে নানাবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল।
রুশ বিপ্লবের কারণ :
স্বৈরাচারী জারতন্ত্র : রাশিয়ার জার ছিলেন দৈবস্বত্বে বিশ্বাসী ও স্বৈরাচারী শাসক। তাঁদের অত্যাচারী শাসনে সাধারণ মানুষের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছিল।
কৃষকদের অসন্তোষ : রাশিয়ায় কৃষকদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাসপ্রথার উচ্ছেদ (১৮৬১ খ্রি) করলেও কৃষকরা জমির মালিকানা না পাওয়ায় তাদের অবস্থার বিশেষ উন্নতি ঘটেনি।
শ্রমিকদের অসন্তোষ : রাশিয়ার শিল্পায়নের ফলে শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে কম মজুরিতে দীর্ঘ সময় কাজ, অনাহার-অর্ধাহার, বস্তিজীবনের দুরবস্থা, শ্রমিকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এ ছাড়া তাদের কাজের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। ফলে তারা উপলব্ধি করে যে, জারতন্ত্রের পতন না ঘটলে এই অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটবে না।
দার্শনিকদের প্রভাব : রুশ বিপ্লবে দার্শনিকদের প্রভাব ছিল অপরিসীম। গোর্কি (Gorky), টলস্টয় (Tolstoy), তুর্গেনেভ (Turgenev), গোগোল ( Gogol ), পুসকিন (Puskin), বাকুনিন (Bakunin) প্রমুখ সাহিত্যিক ও দার্শনিকগণ স্বৈরাচারী জার শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
বলশেভিক দলের প্রভাব : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে রাশিয়ার জনগণের ওপর করভার বৃদ্ধি পায়। ফলে রাশিয়ার কৃষক ও শ্রমিকদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে। সেইসময় লেনিন ও বলশেভিক দলের যোগ্য নেতৃত্ব সর্বস্তরের অসন্তোষকে সংগঠিত করে বিপ্লবে পরিণত করেছিল।
প্রত্যক্ষ কারণ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের অভাবও প্রকট হয়ে ওঠে। এই অসন্তোষ থেকে কৃষক, শ্রমিক, সামরিক বাহিনী ও সাধারণ মানুষ মিলিত হয়ে লেনিনের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে জারতন্ত্রের অবসান ঘটে ও বিপ্লব সফল হয়।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লব পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন—জার্মানি, ইটালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা, পূর্ব ইউরোপ এবং এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
সামাজিক প্রভাব : বলশেভিক বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার সর্বহারা শ্রেণির অন্তর্গত শ্রমিক ও কৃষক সম্প্রদায় সামাজিক ক্ষেত্রে সমান অধিকার লাভ করে। ও রাশিয়াতে বসবাসকারী অরুশ { জাতিগুলি রুশ বিপ্লবের পরে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি মতো সমমর্যাদা ও সমান অধিকার লাভ করে। ও বলশেভিকদের এক অনন্য ঐক্যবদ্ধ মরণপণ প্রচেষ্টায় একদিকে রাশিয়া রক্ষা পায়, অন্যদিকে জার্মানি, ইটালি, ব্রিটেন, ফ্রান্স সর্বত্রই সাম্যবাদী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক প্রভাব : বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সর্বপ্রথম শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজতন্ত্রের আদর্শ ছড়িয়ে পড়ে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ইউরোপে ও এশিয়ার কোনো কোনো দেশে সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ও রুশ বিপ্লবের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উপনিবেশগুলিতে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ভারত-চিন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পরাধীন জাতিগুলি নতুন উদ্দীপনার সঙ্গে মুক্তি সংগ্রাম শুরু করে। ও রুশ বিপ্লবের ফলে বিশ্ব সমাজতন্ত্র ও ধনতন্ত্র এই দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যার ফলস্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই-এর সূত্রপাত ঘটে।
অর্থনৈতিক প্রভাব : ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাবে রাশিয়ার অর্থনীতিতে সামরিক সাম্যবাদ (যুদ্ধ জয়ের লক্ষ্যে পরিচালিত অর্থনীতি) প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মতাদর্শগত কারণে ইউরোপের অন্যান্য ধনতান্ত্রিক দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাবসাবাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। ফলে রাশিয়াতে ব্যাবসাবাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়। ও রুশ বিপ্লবের পরে রাশিয়ায় গৃহীত সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রভাবে কৃষিজমি ও শিল্পের ওপর যেভাবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা ইউরোপীয় পুঁজিপতিদের আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পরিশেষে তাই বলা যায় যে, রুশ বিপ্লব সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে বিশ্ব ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে।
(iii) Balurghat High School -এর ৪. (i) -এর উত্তরটি দ্যাখো।