প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা | প্রদত্ত মানস মানচিত্র অবলম্বনে

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

“বিজ্ঞানই বর্তমান জগতের উন্নতির মাপকাঠি, বিজ্ঞানের অগ্রগতিতেই সভ্যতার অগ্রগতি।”

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। তবে বিজ্ঞান থেকে সার্বিক সুবিধা পেতে গেলে অবশ্যই মানুষকে আগে বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। ‘বিজ্ঞান’ শব্দের অর্থ বিশেষ জ্ঞান। বিজ্ঞান মানে মানুষের বিশেষ ধরনের জ্ঞান, যা তত্ত্ব ও তথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করে বাস্তব সত্যকে ধারণ করে, আর বিজ্ঞানকে মানুষের জীবনে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলাই হল প্রযুক্তি। জীবনের সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিবিড়। মানুষ তার জীবনের প্রয়োজনে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছে। মানুষ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জীবনের বিচিত্র বিকাশ ঘটিয়েছে, জীবনকে সুখকর ও আনন্দময় করে তুলেছে। বিজ্ঞানী মাদাম ক্যুরি বলেছেন- “আমার চোখে বিজ্ঞান অনিন্দ্যসুন্দর।”

‘বিজ্ঞান’ আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে বড়ো অবদান। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক, সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে আজ অবধি বিজ্ঞানের অসংখ্য আবিষ্কার ও উদ্ভাবন মানবজীবনকে ক্রমাগত উন্নত করে চলেছে। আমরা রোজ ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠি মোবাইলে অ্যালার্মের কিংবা ঘড়ির ক্রিং ক্রিং শব্দে। বিছানা থেকে উঠে দাঁত মাজার যে ব্রাশ ও পেস্ট নিই, সেটাও বিজ্ঞানের দান। প্রতিদিন সকালে ঘরে ঘরে – পৌঁছে যায় সংবাদপত্র, যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের সব খবর পাওয়া যায়।

এতেও রয়েছে বিজ্ঞানের পরশ। রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার, ওভেন, ইলেকট্রিক কেটলি, প্রেশার কুকার, ফোয়ারার জলে অনুভব করা, লিফটের মাধ্যমে বহুতল বাড়িতে ওঠা, পাখার তলায় বসে আরাম করা- সবই তো বিজ্ঞানের দান। বিনোদনের নানা উপকরণ যেমন- রেডিয়ো, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল, কাগজ, কলম, বই-সব দিয়েছে বিজ্ঞান। আধুনিক পরিবহন বাস, ট্রেন, মোটর সাইকেল, এরোপ্লেন- সবকিছুই বিজ্ঞানের অবদান। প্রতিদিনের গৃহকার্য থেকে শুরু করে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান-সবক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞানের হাত ধরেই এসেছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তি বিশ্বে এক বিপ্লব নিয়ে এসেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে আধুনিক মানুষের জীবন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রযুক্তির সংস্পর্শে মানুষের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় মানুষ অল্প সময়ে, কম খরচে বাসস্থান নির্মাণ বা রাস্তাঘাট নির্মাণ করছে। প্রযুক্তির সহায়তার কৃষিক্ষেত্রে ঘটেছে সবুজ বিপ্লব। বীজবপন, ফসল কাটা, ফসল তোলা, ফসল ঝাড়াই-মাড়াই ইত্যাদিতেও ব্যবহৃত হয় প্রযুক্তি।

প্রযুক্তির সাহায্যে চিকিৎসার, স্নান, থালা-বাসন, পরিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য প্রতিটি উপকরণই বিজ্ঞানের আশ্চর্য অবদান। এ ছাড়া এয়ার কন্ডিশনড ঘরে আরাম-এর ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বড়ো বড়ো অপারেশন করা হচ্ছে, মুমূর্ষু রোগীকেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলে উৎপাদনের প্রধান চালিকাশক্তিও প্রযুক্তি। বর্তমানে শিল্পক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও বিশাল উন্নতি ঘটেছে ই-মেল ও ইনটারনেট ব্যবহার করে।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করছি। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশ, জাতি, এমনকি সমগ্র বিশ্ব উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছোতে পেরেছে। প্রযুক্তি এখন মানবজীবনের সব সমস্যাকে সফলভাবে সমাধান করছে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সুফলের পাশাপাশি কুফলও আছে। বিজ্ঞানের সৃষ্ট যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে করতে আমরাও যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হারিয়ে যাচ্ছে। তথাপি বলা যায়, বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে মানবসভ্যতা একেবারে অচল।

আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো

Leave a Comment