বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা
"অসতো মা সদগময়। 
তমসো মা জ্যোতির্গময়।”

আমাকে নিয়ে চলো অসত্য থেকে সত্যে, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। বিজ্ঞানই পারে সত্য ও আলোর পথ দেখাতে। বিজ্ঞান হচ্ছে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে যুক্তি সমৃদ্ধ, পরীক্ষালব্ধ, নিরপেক্ষ জ্ঞান। বিজ্ঞান মানুষকে করেছে যুক্তিবাদী, জীবনকে করেছে বাস্তবমুখী। মানুষ যখন বিজ্ঞানকে নিজস্ব চেতনা দিয়ে গ্রহণ করে তখন বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হয়, মানুষও সমৃদ্ধ হয় তখন সভ্যতা এগিয়ে চলে। বিজ্ঞানচেতনা আমাদের সমস্ত অন্ধকার, কুসংস্কার, অজ্ঞানতার অবসান ঘটাতে পারে।

কুসংস্কার একটা ছেলেমানুষি ব্যাপার। একটা বোকামি। কেউ কেউ বলেন নির্বুদ্ধিতা যে বিশ্বাসের পিছনে কোনো যুক্তি নির্ভরতা নেই, কোনো তথ্যভিত্তিক প্রমাণ নেই, তাকে আমরা কুসংস্কার বলি, অর্থাৎ যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসই হল কুসংস্কার। মানুষের মনের অজ্ঞানতা বিবেক বুদ্ধির অভাব ও অন্ধবিশ্বাস থেকেই কুসংস্কারের জন্ম। ইংরেজিতে একটা কথা আছে-‘Superstition is the religion of feeble mind’, অর্থাৎ কুসংস্কার দুর্বল মনের ধর্ম। তবে যে-কোনো অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করাই বিজ্ঞানের কাজ।

একবিংশ শতাব্দীর সময়কালকে বলা হয় বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিপ্লবকাল। আমরা প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক হলেও মানসিক-পারিবারিক-সামাজিকভাবে বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারেনি। আধুনিক সময়ে এসেও সমাজের রন্ধ্রে রন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কুসংস্কার। কুসংস্কার শুধু গ্রামীণ সমাজ বা অশিক্ষিতদের মধ্যেই নয় শহুরে অঞ্চল ও শিক্ষিত মানুষও এই ব্যাপারে কম যায় না। বহু মানুষ পত্রিকায় রাশিফল না দেখে বাড়ি থেকে বাইরে যায়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় চৌকাঠে হোঁচট খেলে, হাঁচি পড়লে, টিকটিকি ডাকলে, পিছন থেকে কেউ ডাকলে কেউ কেউ খানিকটা বসে তারপর যাত্রা শুরু করেন।

এভাবে অসংখ্য কুসংস্কার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছড়িয়ে আছে। গণেশ ঠাকুর দুধ খায়, গুরুবাবা, পিরবাবার মন্ত্রে রোগ সারে, বন্ধ্যা নারী মা ডাক শুনতে পায়, সাপে কামড়ানো রোগী বেঁচে ওঠে ওঝার ঝাড়ফুকে- এ তো আমাদের সমাজে প্রায়শই চলছে। দৈবদুর্বিপাক, গ্রহের ফের কাটানোর জন্য মাদুলির কবচ, যাগযজ্ঞ, হোমস্বস্ত্যয়ন করে মানুষ বহু টাকা ব্যয় করছে। আবার কিছু মানুষের কোপে পড়ে সাধারণ নারী ডাইনিতে পরিণত হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক লাগে যখন আমরা দেখি কোনো বিজ্ঞানের শিক্ষক গ্রহের ফের থেকে বাঁচার জন্য শ্রেণিকক্ষে আসেন আঙুলে পাথর দেওয়া আংটি পরে। বহু উচ্চশিক্ষিত মানুষ ছেলেমেয়েদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন কিন্তু বিয়ের সময় কোষ্ঠী বিচার করেন।

কুসংস্কার ব্যাপকভাবে সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করে। কুসংস্কারের ফলে ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক জীবনে বহু ক্ষতিসাধন হয়। কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ হয়ে মানুষ জ্যোতিষ বা ওঝার বাড়ি যায়। সেখানে মিথ্যা প্রলোভন ও প্রতিশ্রুতিতে তারা সর্বশান্ত হয়। বহু মানুষ কুসংস্কারের প্রকোপে পড়ে মারা যায়। কুসংস্কারের প্রভাবে মনে যে সংকীর্ণতা দেখা দেয় তা প্রতিফলিত হয় তার আচার-আচরণে ও তার কাজকর্মে। কুসংস্কারের ফলে মানুষের সুষ্ঠ বিকাশের অন্তরায় হয়।

কুসংস্কার যেমন ব্যক্তি জীবনে উন্নতির পথে বাধা, তেমনই জাতীয় জীবনে অগ্রগতিরও প্রতিবন্ধক। তাই জাতীয় জীবন থেকে অবশ্যই কুসংস্কারকে দূর করতে হবে। বিজ্ঞান তথা বিজ্ঞানচেতনাই পারে কুসংস্কার থেকে মুক্তি দিতে। এজন্য সবার আগে মানুষকে হতে হবে বিজ্ঞানমনস্ক। শিক্ষার আলোকে আলোকিত হলে কুসংস্কার দূর হবে। তাই দরকার প্রত্যেক মানুষকে শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসা। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমগুলিকে সক্রিয় হতে হবে। বিজ্ঞানমঞ্চকে এগিয়ে আসতে হবে। গ্রামগঞ্জে সভা করে মানুষকে সচেতনতার দায়িত্ব নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে ধর্মীয় স্থানগুলি যেন গুজব না ছড়ায়। যদিও মানব থেকে কুসংস্কারে জগদ্দল পাথরটিকে সরানো খুব সহজ নয়। তথাপি মানুষের মধ্যে সার্বিক চেতনা যদি আসে তবে কুসংস্কার একদিন অপসৃত হবে।

আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment