বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা
"গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও আমাদের দরকার শুধু গাছ দেখা।"
-শক্তি চট্টোপাধ্যায়
আমরা সভ্য হয়েছি, সভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী নাগরিক সভ্যতায় মেতেছি প্রাকৃতিক সম্পদ নিধন যজ্ঞে। প্রতিনিয়ত চলছে বৃক্ষচ্ছেদন উৎসব-‘শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়’। ফলত পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর এই ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার বৈজ্ঞানিক পরিভাষা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ামিং।
বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলতে বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন-কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং মিথেন নির্গমনের কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন হল বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন। এটি তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধি যা সমগ্র বিশ্বকে প্রভাবিত করে। ইতিমধ্যে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার হবে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়নের মূলত দুটি কারণের উল্লেখ করেছেন- (ক) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ এবং (খ) প্রাকৃতিক কারণ।
(ক) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ
(১) বিশ্ব উষ্ণায়নের একটি প্রধান কারণ হল অরণ্য ধ্বংস। বন বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে অক্সিজেন দান করে। অতিরিক্ত অরণ্য ধ্বংস মানে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট। গাছের অভাবে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে শোষিত হয়ে বিশ্বকে উন্নায়নের দিকে ঠেলে দেয়।
(২) জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, সালফার অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা পরিবেশকে দূষিত করে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
(৩) কৃষিকাজে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও নাইট্রোজেন ব্যবহারের ফলে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
(৪) অতিরিক্ত জনসংখ্যা মানে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি, যা বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ।
(খ) প্রাকৃতিক কারণ
(১) আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বায়ুমণ্ডলকে দুষিত করে।
(২) দাবানলের ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয় যা বিশ্বকে উষ্ণ করে তোলে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ামিং-এর ফলে আজ আমাদের জীবন বিপন্ন। বিশ্ব উন্নায়নে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলতে শুরু করেছে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ছোটো ছোটো দ্বীপগুলির জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। বহু উদ্ভিদ, প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতির দুর্যোগ যেমন বাড়ছে তেমনই বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।
বিশ্ব উষ্ণায়ন কমানোর প্রচেষ্টায় অনেক দেশ সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলে ও রিও ডি জেনেরোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বসুন্ধরা শীর্ষ সম্মেলন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে সম্মেলনটি হয় জোহানবার্গে। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের ১৯১টি দেশ গ্রিনহাউস রোধ করার চুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমানে ভারত সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত করার চেষ্টা করছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নে আজ পৃথিবী তার অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। গবেষক ও পরিবেশবিদরা বিশ্ব উন্নায়ন রোধে কয়েকটি বিষয়ের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে-মানব সচেতনতা, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, সিএফসি নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া, গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি কমিয়ে দেওয়া। আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য কবি সুকান্তের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে সমবেতভাবে বলতে হবে-
“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা