টীকা লেখো-ভাস্কো-ডা-গামা

টীকা লেখো-ভাস্কো-ডা-গামা

টীকা লেখো-ভাস্কো-ডা-গামা
টীকা লেখো-ভাস্কো-ডা-গামা

ভাস্কো-ডা-গামা

ভাস্কো-ডা-গামা (Vasco da Gama, আনুমানিক ১৪৬০/১৪৬৯-১৫২৪ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একজন বিখ্যাত পোর্তুগিজ সমুদ্র অভিযাত্রী। পঞ্চদশ শতকের শেষদিকে মূলত তাঁর অভিযানের সূত্রেই পাশ্চাত্য দুনিয়ার সামনে খুলে গিয়েছিল প্রাচ্যের সমুদ্রপথের দরজা।

(1) প্রথম অভিযান: জানা যায় যে, ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পোর্তুগালরাজ প্রথম ম্যানুয়েল (Manuel 1) ভাস্কো-ডা-গামার এশিয়া অভিযানের জন্য পুঁজি বিনিয়োগ-সহ অন্যান্য দায়িত্বভারও গ্রহণ করেছিলেন। প্রথম ম্যানুয়েলের উদ্যোগেই ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-ডা-গামা ৪টি জাহাজ ও ১১৮ জন নাবিক-সহ অভিযান শুরু করেন। দিয়াজের পথ ধরেই ১৪৯৭-তে তিনি উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রম করে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে পৌঁছোন। সেখান থেকে মালিন্দি হয়ে আরব নাবিক আহমেদ ইবন মাজিদ-এর সাহায্যে ভাস্কো-ডা-গামা ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হন (২০ মে, ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দ)। এই সময় কালিকটে এশিয়া ও ইউরোপের মশলা বাণিজ্য ছিল অনেক পুরোনো এবং সংগঠিত। ভারত মহাসাগরে পোর্তুগিজদের আবির্ভাব মশলা বাণিজ্য ও পুরোনো বণিকদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল। তা সত্ত্বেও বলা যায়, ভৌগোলিক অভিযানের ইতিহাসে এ ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পোর্তুগালে প্রত্যাবর্তন করেন ভাস্কো-ডা-গামা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, তিনি তাঁর অভিযানের মোট খরচের প্রায় ৬০ গুণ পরিমাণ পণ্যসামগ্রী, যথা-গোলমরিচ, আদা, লবঙ্গ, দারচিনি প্রভৃতি মশলা ও দামি পাথর নিয়ে দেশে ফিরে যান।

(2) দ্বিতীয় অভিযান: এরপর ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-ডা-গামা পুনরায় নৌ-অভিযানের মাধ্যমে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলবর্তী কয়েকটি শহর লুণ্ঠন করেন। এমনকি ৬০০ যাত্রী-সহ একটি আরব জাহাজে লুণ্ঠন চালিয়ে সেটিকে ডুবিয়ে দেন। এসময় ভাস্কো-ডা-গামা দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতে আসেন। ইতিমধ্যে কালিকট ও কোচিনের রাজারা পারস্পরিক বিবাদে লিপ্ত হলে সেই সুযোগ গ্রহণ করে তিনি ভারতে প্রথম পোর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠির পত্তন করেন।

(3) তৃতীয় অভিযান: ভাস্কো-ডা-গামা ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ১৪টি জাহাজ-সহ ভারতে তাঁর সর্বশেষ অভিযানটি পরিচালনা করেন। ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে কোচিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

(4) ভাস্কো-ডা-গামার অভিযানের গুরুত্ব: ভাস্কো-ডা-গামার সাফল্য প্রকৃতপক্ষে ভারতে বিদেশি পোর্তুগিজ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেয়। এই সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করে রাজা ম্যানুয়েল দ্য ফরচুনেট ‘Lord of the Conquest’ উপাধি গ্রহণ করেন। এই পর্বে পোর্তুগালের রাজা তাঁর প্রতিনিধি (Viceroy) নিয়োগ করে ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের কর্মসূচি নেন। তাছাড়া ভাস্কো-ডা-গামা ভারত মহাসাগরে আরব বণিকদের একাধিপত্যও ভেঙে দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment