অষ্টম শ্রেণির প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নে ইতিহাস বিষয়ে মোট 15 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। এই 15 নম্বরের মধ্যে ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা অধ্যায় থেকে মোট 12 নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষায় এখান থেকে একটি বড়ো প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। বড়ো প্রশ্নের ধরন হবে 5 নম্বরের এবং মাঝারি প্রশ্নের ধরন হবে 3 নম্বরের। ছোটো প্রশ্নের ধরন হবে গোটা 2 ও 1 নম্বরের। আজকের এই প্রশ্নোত্তর পর্বে অষ্টম শ্রেণির প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন ও তৃতীয় পর্বের পরীক্ষার জন্য এই অধ্যায় থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উত্তরসহ তুলে ধরা হল।
ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা

চার্লস উডের প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছিল? এর ফল কী হয়েছিল?
বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। এই নির্দেশনামা চার্লস উডের প্রতিবেদন (Wood’s Despatch) নামে খ্যাত।
চার্লস উডের সুপারিশ: উডের নির্দেশনামা বা প্রতিবেদনের সুপারিশগুলি হল-
- শিক্ষার প্রসারের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাবিভাগ গঠন করা।
- কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
- সুদক্ষ শিক্ষক তৈরির জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ স্থাপন করা।
- দেশীয় ভাষার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষা প্রদান করা।
- নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো।
চার্লস উডের সুপারিশের ফলাফল: চার্লস উডের নির্দেশনামা প্রকাশিত হওয়ার ফলে-
- ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি বাংলা, বোম্বাই, পঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে দফতর প্রতিষ্ঠা করেন।
- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ইতিহাসে উডের প্রতিবেদনের ফলে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সারা ভারতে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা হয় ১৩৬৩টি, যা ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ছিল মাত্র ১৬৯টি। এই সময়ে বেসরকারি উদ্যোগেও বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
মেকলের প্রতিবেদন এবং উডের প্রতিবেদনে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কী কী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল?
মেকলের প্রতিবেদন: ভারতে বড়োেলাট বেন্টিষ্কের আইনসচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতের শিক্ষানীতি সম্পর্কে প্রাচ্যবাদী এবং পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে সকল প্রকার বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের জন্য বড়োলাট উইলিয়ম বেন্টিষ্কের কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন, যা মেকলে মিনিটস নামে পরিচিত। মেকলে তাঁর প্রতিবেদনে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে যে বক্তব্যগুলি রাখেন তা হল-
- মেকলের বক্তব্য অনুযায়ী ভারতবর্ষে একমাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমেই ভারতীয় জনগণের মধ্যে প্রকৃত জ্ঞানের উন্মেষ ঘটবে।
- তিনি মনে করেছিলেন যে, পাশ্চাত্য শিক্ষাকে ভারতবর্ষের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিলে ‘ক্রম পরিস্তুত নীতি’ অনুযায়ী তা সাধারণ মানুষ তথা নিম্নবিত্তদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষাকে পৌঁছে দেবে।
- ব্রিটিশরাই জাতিগতভাবে উন্নত এবং তাদের হাত ধরেই ভারতে আধুনিকতা আসবে। এইজন্য প্রাচ্যবিদ্যা শেখার প্রয়োজন নেই।
উদ্যোগ : টমাস মেকলের প্রতিবেদনের ফলে লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি শিক্ষাকে সরকারি শিক্ষানীতি হিসেবে ঘোষণা করলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা হয়।
উডের প্রতিবেদন: ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য যে নির্দেশনামা প্রকাশ করেন, তা উডের প্রতিবেদন নামে পরিচিত।
উডের প্রতিবেদনে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়-
- কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
- প্রাথমিক থেকে বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত একটি সুগঠিত শিক্ষাকাঠামো গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- দেশীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের কথা বলা হয়।
উদ্যোগ:
উডের প্রতিবেদনের ফলে-
- বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বোম্বাই, পাঞ্জাবে শিক্ষাদফতর প্রতিষ্ঠা করেন।
- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ভারতে উচ্চবিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়।
উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে এশিয়াটিক সোসাইটির ভূমিকা কী ছিল?
বাংলার নবজাগরণে এশিয়াটিক সোসাইটির ভূমিকা
আঠারো শতকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে সংযোগের ফলে বাংলায় শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে এক অভাবনীয় জাগরণের সূচনা হয় তা সাধারণভাবে নবজাগরণ নামে পরিচিত। যদিও এই কালপর্বে ভারতবাসীর মধ্যে এক অংশ পাশ্চাত্যের ধ্যানধারণার বিরোধিতা করতে থাকেন অন্যদিকে অপর অংশ ভারতীয় শিক্ষা ও সমাজের পুনরুজ্জীবনের জন্য পাশ্চাত্যের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়ম জোনস কর্তৃক কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠা ভারত তথা বাংলার শিক্ষা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ভারতের প্রাচীন গৌরবময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ইতিহাস তুলে ধরে এশিয়াটিক সোসাইটি ভারতবাসীর মনে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সঞ্চার করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
উদ্দেশ্য: এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পশ্চাতে উদ্দেশ্যগুলি ছিল নিম্নরূপ-
- সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যগুলি আধুনিক ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা ছিল উইলিয়ম জোনসের প্রধান লক্ষ্য। কারণ তিনি মনে করতেন এই চর্চার ফলে ভারতের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে ব্রিটিশদের সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।
- এশিয়ার প্রাচীন সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানানো ইত্যাদি।
কার্যাবলি :
- এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন।
- এশিয়াটিক সোসাইটির তত্ত্বাবধানে ইংরেজিতে ১৮টি পুরাণ অনুবাদ করা হয়।
- শকুন্তলা, মনুসংহিতা, ভগবদগীতা প্রভৃতি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়।
এইভাবে এশিয়াটিক সোসাইটির উদ্যোগে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা- সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটানোর কাজ শুরু হয়, ফলে ভারতীয় জনগণ প্রাচীন ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে।
ভারতে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা তথা পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে লেখো।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষা তথা ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারে কিছুটা উদাসীনতা দেখা গেলেও পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করলে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিকাশের পথ সুগম হয়।
পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ:
ভারতে কোম্পানির আমলে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ ঘটতে থাকে।
ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগ: ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ফারসি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিদের রাজস্ব দফতরের কাজে নিয়োগ করেন। এ ছাড়া কোম্পানির কর্মচারীদের সুবিধার জন্য হিন্দু ও মুসলিম আইনগুলিকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করানোর উদ্যোগও গ্রহণ করেন।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিকাশের এই কালপর্বে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদ্রাসা গড়ে তোলেন। জোনাথন ডানকান বেনারসে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
মিশনারিদের উদ্যোগ: শ্রীরামপুরের মিশনারিরা ব্রিটিশ কোম্পানির তরফে শিক্ষাবিস্তারের বিভিন্ন উদ্যোগে যোগদান করেন। উইলিয়ম কেরি ভারতীয় মহাকাব্যগুলি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন। এ ছাড়া স্কটিশ মিশনারি সোসাইটির সদস্য আলেকজান্ডার ডাফ অনেকগুলি মিশনারি স্কুল তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা: ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার এডওয়ার্ড হাইড ইস্ট এবং ডেভিড হেয়ারের প্রচেষ্টায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে ইংরেজি তথা আধুনিক শিক্ষার প্রসার আরও দ্রুত হয়।
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের পর ইংরেজি শিক্ষার প্রসার: ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ইংরেজি ভাষা নির্ভর পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। কিছুদিন পর এক প্রতিবেদনে বলা হয় ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারের পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতেও সরকারি অনুদান দেওয়া হবে। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড হার্ডিঞ্জ সরকারি চাকরিতে ইংরেজি ভাষাকে প্রাধান্য দিলে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের পথ আরও প্রশস্ত হয়।
মেকলে মিনিটস: ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মেকলে তাঁর বিখ্যাত ‘মেকলে মিনিটস’-এ প্রাচ্যের শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে মত প্রকাশ করেন।
উডের প্রতিবেদন: ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উডের প্রতিবেদনে প্রাথমিক থেকে বিদ্যালয়স্তর পর্যন্ত একটি সুনির্দিষ্ট শিক্ষাকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ও ভারতীয় -এই দু-ধরনের ভাষাচর্চার কথা বলা হয়।
এইভাবে কোম্পানির শাসনকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশের পথ সুগম হয়েছিল।
উনিশ শতকের ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব কী ছিল?
উনিশ শতকের ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাবে ভারতে শিক্ষা, সমাজ, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক জীবনে উন্নতি হয়েছিল।
পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব :
পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার: ব্রিটিশ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে ভারতে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটেছিল। দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসায় সাহিত্য, ব্যাকরণ, ধর্মগ্রন্থ, তর্কশাস্ত্র, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র প্রভৃতির পঠনপাঠন চলত। পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তনের ফলে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজি, ইউরোপীয় সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত, দার্শনিক তত্ত্ব প্রভৃতির প্রসার ঘটে, যার প্রভাবে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছিল।
ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব: পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের ফলে ভারতে ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয়েছিল। ভারতীয়দের এক অংশ সরকারি চাকরি লাভের আশায় পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভ করেছিল। তা ছাড়া অনেকে ইংরেজি শিখে উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক, সাংবাদিকতার পেশায় নিযুক্ত হয়েছিল। ব্যাবসাবাণিজ্যের সুবিধার জন্য ব্যবসায়ীরাও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেছিল। বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ছিল ইংরেজি-শিক্ষিত চাকরিজীবী, উকিল, ডাক্তার, সাংবাদিক, লেখক, ব্যবসায়ী প্রভৃতি শ্রেণি।
দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার অবনতি: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের ফলে দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। কারণ- সরকারি উদ্যোগে তখন ইংরেজি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। অপরদিকে সরকারি অনুদান ও উৎসাহের অভাবে দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। তা ছাড়া ভারতীয়রাও তখন চাকরি ও নানারকম সুযোগসুবিধা লাভের জন্য ইংরেজি স্কুলমুখী হয়েছিল এবং দেশীয় শিক্ষার প্রতি অনীহা প্রকাশ করেছিল।
ইংরেজ সরকারের প্রশাসনিক সুবিধা: ইংরেজি শিক্ষাপ্রসারে ফলে ভারতে ইংরেজ শাসনের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়েছিল। ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতে কম বেতনের কর্মচারী সৃষ্টি করা। ইংরেজদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষেরা ভারতে ইংরেজ শাসনের স্তম্ভস্বরূপ ছিল। তারা ইংরেজ শাসন ও সভ্যতাকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং ইংরেজ শাসনের গোঁড়া সমর্থকে পরিণত হয়েছিল।
নারীশিক্ষার প্রসার: ভারতীয় সমাজে বাল্যবিবাহ, পর্দাপ্রথা, রক্ষণশীল মানসিকতা নারীশিক্ষার প্রসারে প্রধান বাধা ছিল। উনিশ শতকে ইংরেজ সরকার, খ্রিস্টান মিশনারি ও কয়েকজন প্রগতিশীল ব্যক্তি নারীশিক্ষার প্রসারে সচেষ্ট হয়েছিলেন। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের উদ্যোগে বিদ্যাসাগর মহাশয় ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ৪টি জেলায় ২০টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চার্লস উডের প্রতিবেদনে নারীশিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বাংলার বাইরে আগ্রা, বোম্বাই, পুণে প্রভৃতি অঞ্চলেও নারীশিক্ষার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল।
কোম্পানির শাসনকালে জমি জরিপের জন্য যে ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা হয়েছিল তা লেখো।
ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোয় রাজস্বসংক্রান্ত যে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছিল, তার মধ্যে জমি জরিপ ও তার ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
কোম্পানির শাসনকালে জমি জরিপ সংক্রান্ত ব্যবস্থা:
কোম্পানির আমলে জমি জরিপ সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যবস্থাগুলি হল-
নতুন জমিদারি এলাকা মাপজোখ: ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধের পর ব্রিটিশ কোম্পানি মির জাফরকে বাংলার নবাব পদে বসিয়েছিলেন। কোম্পানির প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বাংলার নবাব তখন কোম্পানিকে কলকাতা থেকে কুলপি পর্যন্ত ২৪টি পরগণার জমিদারি প্রদান করেন। তখন রবার্ট ক্লাইভ নতুন জমিদারি এলাকার মাপজোখের ব্যবস্থা করেন। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্কল্যান্ড নতুন ২৪ পরগণার জমি জরিপের কাজ শুরু করেন। তার মৃত্যুর পর এই কাজ শেষ করেন হগ্ ক্যামেরন।
নদীপথ জরিপ: ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতের জমি জরিপ বিভাগের প্রধান বা সার্ভেয়ার জেনারেল পদে জেমস রেনেলকে নিয়োগ করে। জেমস রেনেল বাংলার নদীপথ জরিপ করে মোট ১৬টি মানচিত্র তৈরি করেছিলেন।
‘কমিটি অফ রেভেনিউ’ গঠন: ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে বাংলার জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ণয় বিষয়ে কোম্পানি তৎপর হয়ে ওঠে। ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে ‘কমিটি অফ রেভেনিউ’ গঠিত হয়। ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে কমিটি অফ রেভেনিউকে নতুন করে সাজিয়ে তার নাম দেওয়া হয় বোর্ড অফ রেভেনিউ। এই বোর্ড অফ রেভেনিউ-ই রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করতে থাকে।
ইজারাদারি ব্যবস্থা: ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস নদিয়া জেলায় একটি নতুন ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত চালু করেন। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী যে ব্যক্তি জমির নিলামে সবথেকে বেশি খাজনা দেওয়ার ডাক দেবে তার সঙ্গে কোম্পানি পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত করবে। ওই ব্যক্তিকে পাঁচ বছরের জন্য জমি ইজারা দেওয়া হত বলে একে ইজারাদারি ব্যবস্থা বা পাঁচসালা বন্দোবস্ত বলা হত।
ক্রমশ ইজারাদারি ব্যবস্থায় নানারকম সমস্যার ফলে ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে পাঁচসালা বা ইজারাদারি বন্দোবস্তের অবসান ঘটিয়ে একসালা বন্দোবস্ত চালু করেন। এরপরে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দশসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে এবং শেষপর্যন্ত এই সকল বন্দোবস্ত তুলে দিয়ে লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন। ফলে বাংলার ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
কোম্পানির শাসনের সঙ্গে জমি জরিপের সম্পর্ক কী ছিল? ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করা ও তা তুলে দেওয়ার পিছনে কী কী কারণ ছিল?
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সঙ্গে জমি জরিপের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। কারণ— ① ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার শাসনাধীন এলাকার নির্দিষ্ট আয়তন সম্পর্কে ধারণা, ② কোম্পানি তার এলাকার জমি জরিপ করে তার ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ণয় এবং ③ কোম্পানির শাসনাধীন এলাকায় কতটা জমি চাষযোগ্য তা পরিমাপ করতে চেয়েছিল।
কোম্পানির জমি জরিপ:
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধের পর ব্রিটিশ কোম্পানি মির জাফরকে বাংলার নবাব পদে বসিয়েছিল। কোম্পানির প্রতি কৃতজ্ঞ নবাব কোম্পানিকে কলকাতা থেকে কুলপি পর্যন্ত ২৪টি পরগনার জমিদারি দিয়েছিল। রবার্ট ক্লাইভ তখন এই নতুন জমিদারি এলাকার মাপজোখের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্কল্যান্ড ২৪টি পরগনার জমি জরিপের কাজ শুরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই কাজ শেষ করেন হগ্ ক্যামেরন।
১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতের জমি জরিপ বিভাগের প্রধান বা সার্ভেয়ার জেনারেল পদে জেমস রেনেলকে নিয়োগ করে। জেমস রেনেল বাংলার নদীপথ জরিপ করে মোট ১৬টি মানচিত্র তৈরি করেছিলেন।
ইজারাদারি ব্যবস্থা : ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস যে নতুন ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত চালু করেন তাতে বলা হয়- জমির নিলামে যে ব্যক্তি বেশি খাজনা দেওয়ার ডাক দেবে তার সঙ্গে কোম্পানি পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত করবে। ওই ব্যক্তিকে পাঁচ বছরের জন্য জমি ইজারা দেওয়া হত বলে, একে ইজারাদারি ব্যবস্থা বা পাঁচসালা বন্দোবস্ত বলা হত।
ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করার কারণ: ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করার কারণ ছিল-
- নিলামের মাধ্যমে জমির ইজারা দিয়ে সর্বাধিক রাজস্ব আদায় করা।
- বাংলার ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির স্বার্থে পরিচালিত করা।
- ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পর রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করা।
ইজারাদারি বন্দোবস্ত তুলে দেওয়ার কারণ : ইজারাদারি বন্দোবস্তে নানারকম সমস্যা থাকার জন্য এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছিল। এই বন্দোবস্ত তুলে দেওয়ার কারণ ছিল-
- অনেক বাইরের লোক বেশি অর্থ দিয়ে নিলামে জমির ইজারা নিয়েছিলেন। তাদের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিল না। ধার্য রাজস্ব ও আদায় করা রাজস্বের মধ্যে অনেক তফাত ছিল। রাজস্ব আদায় কম হওয়ার ফলে তারা ধার্য রাজস্ব পরিশোধ করতে পারত না।
- ইজারাদার সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় করার জন্য কৃষকদের উপর অত্যাচার করত। তারা কৃষির উন্নতির দিকেও নজর দিত না।
- অনেক ইজারাদার রাজস্ব জমা না দিতে পেরে পলাতক হত।
ইজারাদারি’ বা ‘পাঁচসালা বন্দোবস্ত’ বলতে কী বোঝায়? ‘ইজারাদার’ কাদের বলা হয়? এই বন্দোবস্তের ত্রুটি কী ছিল?
ইজারাদারি বন্দোবস্ত: ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারের পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর হয়ে আসেন। তিনি নিলামের মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য জমিদার বা ইজারাদারদের সঙ্গে জমি বন্দোবস্ত করেন (১৭৭২ খ্রি.)। এই ব্যবস্থা ইজারাদারি বন্দোবস্ত বা পাঁচসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
ইজারাদার: ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলায় দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটান। তিনি বাংলা ও বিহারের দুই নায়েব-দেওয়ান রেজা খাঁ ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করেন এবং র চর্যা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব কোম্পানির এক্তিয়ারে নিয়ে আসেন। নিলামের মাধ্যমে যিনি সর্বোচ্চ হারে রাজস্ব দিতে সম্মত হতেন তাকেই পাঁচ বছরের জন্য জমি ইজারা দেওয়া হত। এই নিলামদাররা ইজারাদার নামেও পরিচিত ছিল।
ইজারাদারি বন্দোবস্ত সময়কাল: এই বন্দোবস্ত ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
ইজারাদারি বন্দোবস্তের ত্রুটি: কিছুদিনের মধ্যে হেস্টিংস প্রবর্তিত ইজারাদারি বা পাঁচসালা বন্দোবস্তের ত্রুটিগুলি প্রকট হয়ে ওঠে।
- রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থতা: নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ রাজস্ব দেওয়ার শর্তে ভুঁইফোঁড় ইজারাদাররা জমি পেলেও তারা নির্দিষ্ট রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হয়।
- অনিশ্চিত আয়: এই ব্যবস্থায় সরকারের আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
- কৃষক শোষণ : এই ব্যবস্থায় কৃষকদের উপর অত্যাচার বেড়েছিল। কারণ- জমিতে জমিদারের স্বত্ব অনিশ্চিত হওয়ায় জমিদাররা কৃষকদের সর্বস্বান্ত করে রাজস্ব আদায় করত।
পাঁচসালা বন্দোবস্তের অবসান: ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে পাঁচসালা বন্দোবস্তের অবসান ঘটান এবং একসালা বন্দোবস্ত চালু করেন।
আরও পড়ুন | Link |
ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর | Click Here |