ইউরোপে প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা কী ধরনের ছিল? এর বৈশিষ্ট্যগুলির পরিচয় দাও

ইউরোপে প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা কী ধরনের ছিল? এর বৈশিষ্ট্যগুলির পরিচয় দাও

ইউরোপে প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা কী ধরনের ছিল? এর বৈশিষ্ট্যগুলির পরিচয় দাও
ইউরোপে প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা কী ধরনের ছিল? এর বৈশিষ্ট্যগুলির পরিচয় দাও

ইউরোপে প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন এবং বর্বর জাতির বারংবার আক্রমণের প্রভাবে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দী পর্যন্ত কালপর্বে ইউরোপীয় সমাজ ও অর্থনীতিতে এক চরম সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। অবশ্য দশম শতকের গোড়া থেকে এই পরিস্থিতির বদল ঘটতে থাকে এবং কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে আসে এক অভাবনীয় পরিবর্তন। এই সময়কালে কৃষিক্ষেত্রে যেমন ভূস্বামী ও কৃষকদের আন্তঃসম্পর্কে পরিবর্তন আসে, তেমনই জমিকর্ষণ, উন্নত সারের প্রয়োগ, খাদ্যশস্য উৎপাদন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ইউরোপের অর্থনৈতিক জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

(1) কৃষি উৎপাদন: বস্তুত মধ্যযুগের কৃষিজ উৎপাদনের পরিমাণ আধুনিক যুগের থেকে যথেষ্ট কম ছিল। অবশ্য এই পর্বে ইউরোপে জনসংখ্যা কম থাকায় বিশেষ কোনও সমস্যা দেখা যায়নি। উৎপাদনের এই স্বল্পতার জন্য মূলত দায়ী ছিল নিকৃষ্ট মানের বীজ, সারের ঘাটতি, অপর্যাপ্ত ভূমিকর্ষণ এবং জলসেচ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি।

(2) কৃষি পদ্ধতি: একাদশ শতাব্দী থেকে ইউরোপের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলে কৃষিক্ষেত্রে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই সময় বহু অনাবাদি জমিকে কৃষিযোগ্য জমিতে পরিণত করা হয়। জলসেচ ও জল নিষ্কাশন পদ্ধতির প্রবর্তন হয় বহুদেশে। এমনকি ত্রয়োদশ শতকে জমিতে কী কী ফসল ফলানো হবে তাও কৃষকরা ঠিক করত। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি কার্পাস তুলা, তুঁত গাছ ও বিভিন্ন ফলের চাষও শুরু হয়েছিল। ক্যারোলিঞ্জীয় রেনেসাঁর সময়কাল থেকে শীতকালীন ও বর্ষাকালীন শস্য উৎপাদনে পরীক্ষানিরীক্ষা চলত। মধ্যযুগে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োগ করা হত জিরেন কর্ষণ পদ্ধতি বা টু ফিল্ড সিস্টেম (Two Field System)। এই পদ্ধতিতে পরপর কয়েক বছর ফসল ফলানোর পর সেই জমিকে বা জমির কিছু অংশকে ২ থেকে ৪ বছর চাষ না করে ফেলে রাখা হত।

কৃষিব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

ইউরোপে প্রচলিত কৃষিব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(1) কৃষির যন্ত্রপাতি: চাকাযুক্ত ভারী লাঙল, ফসল কাটার কাস্তে, আগাছা পরিষ্কার করার জন্য নিড়ানি যন্ত্র ইত্যাদি কিছু কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হত কৃষিক্ষেত্রে। মূলত কৃষকের দৈহিক শ্রমই ছিল কৃষি উৎপাদনের মূল ভিত্তি।

(2) তিনস্থর পদ্ধতি: মধ্যযুগের শেষের দিক থেকে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে জমিকে তিনভাগে ভাগ করে একভাগে গ্রীষ্মের ফসল, দ্বিতীয় ভাগে শীতের ফসল ও তৃতীয় ভাগকে পতিত রাখা হত জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য।

(3) স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক উৎপাদন: এই সময় কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হত মূলত স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে। ফলে কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল কম এবং বাণিজ্যিক ফসলের তুলনায় মূলত খাদ্যশস্যের চাষই করা হত। যদিও পরবর্তীতে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছিল।

(4) কৃষিজ ফসল: ক্রুসেডের সময় প্রাচ্যের বিভিন্ন নতুন নতুন কৃষিজ পণ্যের সঙ্গে ইউরোপের মানুষদের পরিচয় ঘটে। তারা তখন নিজেদের দেশে সেই সকল কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে শুরু করেন। এর ফলে জমিকে অনাবাদি রাখার যে চিরাচরিত প্রথা, তাতে দেখা দেয় পরিবর্তন। উৎপাদিত হতে থাকে সারা বছর ফলনশীল বিশেষ এক প্রকার গম। অবশ্য অলিভ, বাদাম, ডুমুর, আখ, চেরি, কমলালেবু, আপেল, আঙুর, বার্লি, যব, রাই- এসবও প্রচুর উৎপাদিত হত।

মূলত এই বৈশিষ্ট্যগুলিকে কেন্দ্র করে ইউরোপের কৃষিব্যবস্থা আবর্তিত হয়। যদিও পঞ্চদশ শতক থেকে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষিব্যবস্থায় এনেছিল আমূল পরিবর্তন।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment