ইউরোপে সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে দুর্গ নির্মাণে কী নতুনত্ব ছিল

ইউরোপে সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে দুর্গ নির্মাণে কী নতুনত্ব ছিল

অথবা, আধুনিক প্রযুক্তির ফলে দুর্গ নির্মাণ রীতিতে কী পরিবর্তন এসেছিল

ইউরোপে সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে দুর্গ নির্মাণে কী নতুনত্ব ছিল
ইউরোপে সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে দুর্গ নির্মাণে কী নতুনত্ব ছিল

আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কারের ফলে, বিশেষত অটোমানদের গোলাবর্ষণে কনস্ট্যান্টিনোপলের প্রাকার ধ্বংসের পর থেকে নতুন ধরনের দুর্গ বানানোর প্রয়োজন অনুভূত হয়। ইতিপূর্বে ইটালির স্থপতি আলবার্টি (Leon Battista Alberti) On the Art of Building in Ten Books (১৪৬০ খ্রিস্টাব্দ) নামক একটি পুস্তিকায় দুর্গের প্রাকার করাতের দাঁতের মতো হওয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর ষোড়শ শতক থেকে আগ্নেয়াস্ত্র তথা গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দুর্গ বানানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়।

ইউরোপে সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে দুর্গ নির্মাণে নতুনত্ব 

ইউরোপে সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে দুর্গ নির্মাণে যে নতুনত্বগুলি দেখা গিয়েছিল সেসম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

(1) ‘Trace Italienne’ দুর্গ: উত্তর ইটালিতে সর্বপ্রথম নতুন ধরনের দুর্গ নির্মাণের প্রয়াস লক্ষ করা গিয়েছিল। পঞ্চদশ শতকের শেষ ও ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে ইটালির প্রকৌশলীরা এই ধরনের দুর্গ নির্মাণ শুরু করেছিলেন। পরে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও সেই স্থাপত্যরীতি ছড়িয়ে পড়ে। সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি ভবাঁ (Vauban) এইপ্রকার বহু প্রতি-আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মক দুর্গের নকশা তৈরি করেছিলেন। এই শৈলীর দুর্গগুলি ত্রাস ইতালিয়ান (Trace Italienne) নামে প্রখ্যাত। যদিও এগুলি পুরোপুরি অভেদ্য ছিল না, কিন্তু এ ধরনের দুর্গগুলি অবরোধ করতে হলে প্রতিপক্ষের প্রচুর সময়, লোকবল ও জিনিসপত্রের প্রয়োজন হত। ফলে অবরুদ্ধ দুর্গটি কিছুটা সুযোগ পেত। এই প্রকার দুর্গের কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যথা-

  • বাস্তিএন: এই জাতীয় নতুন দুর্গের বৈশিষ্ট্য হল Bastion অর্থাৎ, এইসব দুর্গের দেয়াল ছিল তিরের ফলার মতো কোণবিশিষ্ট। মধ্যযুগের দুর্গগুলিতে বৃত্তাকার বা চারকোণবিশিষ্ট টাওয়ার থাকত। এই বুরুজ বা টাওয়ারগুলির নীচে শত্রুপক্ষ সহজে দুর্গ থেকে হওয়া আক্রমণের হাত থেকে আশ্রয় নিতে পারত। কিন্তু নতুন ধরনের দুর্গে তা করতে পারত না।
  • দুর্গ প্রাকার: নতুন ধরনের দুর্গগুলির প্রাকার কামানের গোলার আঘাত সহ্য করার উপযুক্ত (অপেক্ষাকৃত নীচু ও স্থূল) করে বানানো হত। শুধুমাত্র রক্ষণের কাজেই নয়, এই দুর্গগুলির প্রাকারের ওপরে অনুরূপ খাঁজযুক্ত দেয়ালের আড়াল থেকে শত্রুর দিকে গুলি-গোলাবর্ষণ করাও নিরাপদ ছিল।
  • পরিখা ও ঢাল: এই সময় থেকেই প্রাকারের চারপাশে প্রশস্ত পরিখা (Trench) খনন করা হয়। দুর্গগুলিকে অতিরিক্ত সুরক্ষাদানের জন্য দুর্গের বাইরে বিশেষ ধরনের মাটির ঢাল বা গ্লাসিস (Glacis) ব্যবহার করা হত।
  •  রসদ: দুর্গগুলির আয়তন বৃহৎ হওয়ায় সেনাবাহিনী ও বহু মানুষের জন্য দীর্ঘদিনের খাদ্য, পানীয় মজুত রাখা যেত। কাজেই বহুক্ষেত্রেই প্রতিপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পশ্চাদপসারণ করত।

(2) অন্য প্রকার দুর্গ: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ত্রাস ইতালিয়ান ছাড়াও ইটালির কোনও কোনও অঞ্চলে অপর এক ধরনের ছোটো কিন্তু মজবুত দুর্গ নির্মাণ করা হত। মাতুয়া ও গনজাগা-র শাসকেরা এই প্রকার দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন।

মূল্যায়ন

পরিশেষে বলা যায়, সামরিক বিপ্লবের সময়কালে দুর্গ নির্মাণের রীতিতে নানা পরিবর্তন ঘটেছিল। ষোড়শ শতকে এইরূপ উন্নতমানের দুর্গ নির্মাণের ঘটনাকে জেফ্রি পার্কার ‘সামরিক বিপ্লব’-এর অন্যতম অঙ্গ বলে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment