সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ইংল্যান্ডের ভূমিকা কী ছিল

সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ইংল্যান্ডের ভূমিকা কী ছিল

সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ইংল্যান্ডের ভূমিকা কী ছিল
সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ইংল্যান্ডের ভূমিকা কী ছিল

সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে ইংল্যান্ডের ভূমিকা

ভৌগোলিক অন্বেষণের কালপর্বে ধারাবাহিকতার দিক থেকে বিচার করলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও হল্যান্ড এসেছিল অনেকটাই পরে। এই দেশগুলির মধ্যে ইংল্যান্ড সাধারণভাবে অগ্রণী ঔপনিবেশিক দেশ হিসেবেই পরিচিত। পোর্তুগাল বা স্পেনের মতো নতুন নতুন দেশ আবিষ্কারের কাজে তাদের ভূমিকা ছিল নগণ্য। তবে পোর্তুগিজ ও স্পেনীয় নাবিকদের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে কয়েকজন ইংরেজ নাবিক সামুদ্রিক অন্বেষণে লিপ্ত হয়েছিলেন।

(1) ইংল্যান্ডের সমুদ্র অভিযানের উদ্দেশ্য: ইংল্যান্ডের সামুদ্রিক অভিযানের পশ্চাতে কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল-

  • বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য: ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মশলা এবং বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের ইউরোপে প্রচুর চাহিদা ছিল। পোর্তুগিজ বণিকেরা দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যাবসায় একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করত। পরবর্তীতে বিপুল লাভের আশায় ইংরেজ বণিকেরা সক্রিয় হয়ে ওঠে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাণিজ্যক্ষেত্রের সন্ধান করতে থাকে। এজন্য তারা সমুদ্র অভিযানে উদ্যোগী হয়।
  • উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা: এশিয়া এবং নতুন বিশ্বে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করাও ছিল ইংল্যান্ডের অপর উদ্দেশ্য। এই উপনিবেশগুলি থেকে তারা প্রচুর সম্পদ সংগ্রহ করত।
  • রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাববিস্তার: সামুদ্রিক অভিযানগুলির মাধ্যমে ইংল্যান্ড সমুদ্রপথে নিজেদের প্রভাববিস্তারের দ্বারা অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য স্থাপনে উদ্যোগী হয়।

(2) জন ক্যাবট: রাজা সপ্তম হেনরির উদ্যোগে জন ক্যাবট (John Cabot, ইতালীয় নাম জিওভান্নি ক্যাবোটো) ব্রিস্টল বন্দর থেকে নৌযাত্রা শুরু করেন (১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দ)। জানা যায় যে, ম্যাথু নামক জাহাজ নিয়ে তিনি আটল্যান্টিক অতিক্রম করে নিউফাউন্ডল্যান্ডে (Newfoundland) পৌঁছোন। এর পাশে নোভাস্কোশিয়া (Nova Scotia) দ্বীপটিও সম্ভবত তিনি আবিষ্কার করেন। ক্যাবট দাবি করেন যে, এই পথ ধরেই রেশমের দেশ ক্যাথে (চিন) পৌঁছোনো যাবে। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্যাথের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তবে এর পরিণতি সম্পর্কে জানা যায় না।

(3) সেবাস্টিয়ান ক্যাবট: জন ক্যাবটের পুত্র সেবাস্টিয়ান ক্যাবট (Sebastian Cabot) মানচিত্রকার হিসেবে খ্যাত ছিলেন। অষ্টম হেনরির রাজত্বকালে তিনি উত্তর-পূর্ব পথ ধরে এশিয়া পৌঁছোনোর জলপথ আবিষ্কারের চেষ্টা চালান।

(4) ক্যাপ্টেন ফোবিশার: রানি এলিজাবেথের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্যাপ্টেন ফ্রোবিশার (Sir Martin Frobisher) উত্তরমুখী সমুদ্রযাত্রা করেন। নানা বিপর্যয় কাটিয়ে তিনি হাডসন প্রণালীতে পৌঁছোন। তাঁর ধারণা ছিল, এটিই ক্যাথে যাওয়ার পথ। এই উপসাগরটি তাঁর নামানুসারে ফ্রোবিশার বে (Frobisher Bay) নামে পরিচিত হয়।

(5) স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক: স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক (Sir Francis Drake) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ইংরেজ অভিযাত্রী এবং দক্ষ ও নির্ভীক নাবিক। রানি এলিজাবেথের আনুকূল্যে তিনি পৃথিবী প্রদক্ষিণের প্রথম সফল ব্রিটিশ নাবিক হিসেবে খ্যাতি পান। তিনিই সর্বপ্রথম কানাডার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছোতে পেরেছিলেন। জানা যায় যে, ম্যাগেলান প্রণালী পেরিয়ে ড্রেক উপস্থিত হয়েছিলেন আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে। এরপর ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি ও উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রম করে তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন।

(6) জেমস কুফ: ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন জেমস কুক (James Cook) অষ্টাদশ শতকে দীর্ঘ নৌ-অভিযান চালান। শেষপর্যন্ত তিনিই আবিষ্কার করেন আরও একটি নতুন মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া। সমুদ্র অভিযানের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাভিত্তিক তাঁর রচনাগুলি সামুদ্রিক অভিযানের কাজে অমূল্য সম্পদ বলে বন্দিত হয়।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment