প্রাচীন কালে চিনদেশে জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির পরিচয় দাও

প্রাচীন চিনের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি
চিনে প্রাচীন কালে জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়।
(1) দুর্গ জাহাজ: চিনে চৌ (Zhou Dynasty) বংশের রাজত্বকালে এক ধরনের বিশাল দুর্গ জাহাজ (Castle Ship) তৈরি করা হত, যেগুলি অনেকটা ভাসমান দুর্গের মতো ছিল। এই জাহাজে অনেকগুলি সুরক্ষিত বেড়া (Rampart)-সহ ডেক থাকত।
(2) জাঙ্ক জাহাজ: চিনে হান বংশের রাজত্বকাল থেকে জাঙ্ক (Junk) জাহাজ তৈরি হতে শুরু করে। বলা হয়, বাণিজ্য ও যুদ্ধের প্রয়োজনে নির্মিত এই জাহাজগুলি নাকি ১০০০ টন পর্যন্ত মাল বহনে সক্ষম ছিল এবং মিশর পর্যন্ত এগুলি পাড়ি জমাত। তবে চিনের জাঙ্ক পোত উপকূল বাণিজ্যে কার্যকরী হলেও, গভীর সমুদ্রে অভিযানের পক্ষে তা নিরাপদ ছিল না।
(3) বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পালের ব্যবহার: চৈনিক জাহাজ, বিশেষত জাঙ্ক জাহাজগুলির পালের নকশা ছিল সুদৃশ্য। পালগুলি মূলত বাঁশের কাঠামোর উপর কাপড় দিয়ে তৈরি করা হত। পালগুলি জাহাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করত এবং দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপযোগী ছিল।
(4) স্তর নির্মাণ: চিনা জাহাজগুলিতে বেশ কয়েকটি স্তর নির্মাণ করা হত। এতে জাহাজগুলির স্থায়িত্ব বাড়ত এবং তা দীর্ঘ দূরত্বে সমুদ্রযাত্রার জন্য উপযোগী হয়ে উঠত।
(5) অন্যান্য জাহাজ: চিনে গ্রিকো-রোমান জাহাজের মতো তিনকোণা জাহাজ (Fluvial Ramming Vessels) নির্মিত হত বলে শোনা যায়। সুং, মিং ও ইউয়ান যুগে চিনে বড়ো বড়ো জলযান নির্মিত হতে থাকে।
(6) উল্লেখযোগ্য জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র: উন্নত জাহাজ নির্মাণের জন্য চিনের ফুজিয়ান প্রদেশ ছিল বিখ্যাত। এ ছাড়া গুয়ানঝাউ, কোয়ানঝাউ প্রভৃতি বন্দরগুলিও উন্নত মানের জলযান নির্মাণে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছিল। পরিশেষে বলা যায়, উন্নত নৌ-প্রযুক্তির সাহায্যে দ্বাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে চিনে এক সুদক্ষ নৌবাহিনী গঠিত হয়েছিল। জাপান ও মিশরের সঙ্গে তাদের সামুদ্রিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর