ভাইকিংদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির বিবরণ দাও

ভাইকিংদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির বিবরণ দাও

ভাইকিংদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির বিবরণ দাও
ভাইকিংদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির বিবরণ দাও

মধ্যযুগের ইউরোপের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভাইকিং জলদস্যুদের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। অষ্টম-নবম শতক থেকে একাদশ শতকের মধ্যে তাদের তৈরি জাহাজ দ্বারা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে সামুদ্রিক অভিযান চালানো হত।

ভাইকিংদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির বিবরণ

(1) গঠন কাঠামো : ভাইকিং জলদস্যুদের দ্বারা নির্মিত জাহাজগুলি ছিল সরু, লম্বা ও অত্যন্ত দ্রুতগামী। ৬০ ফুট লম্বা এবং ১৪ ফুট চওড়া এই জাহাজগুলি তৈরির জন্য হালকা ও শক্ত কাঠ ব্যবহার করা হত। গভীর সমুদ্র বা অগভীর উপকূল অঞ্চলে দ্রুত চলাচলের উপযোগী করে বানানো হত জাহাজগুলিকে।

(2) জাহাজের নকশা: ভাইকিং জলদস্যুরা মূলত লুণ্ঠন ও আকস্মিক আক্রমণ করার কাজে জাহাজগুলিকে ব্যবহার করত। ফলে জাহাজগুলির সম্মুখভাগের নকশা হত ভয়ংকর, যেমন- ড্রাগনের মাথা বা এধরনের কোনও দৃষ্টি আকর্ষণীয় শিল্পকর্ম-যা শত্রুদের ভয় দেখানোর জন্য বানানো হত।

(3) পাল, বৈঠা ও রাডারের ব্যবহার: ভাইকিংদের জাহাজগুলিতে বড়ো আয়তাকার পাল থাকত, যা বাতাসের দিক অনুযায়ী সহজে ঘোরানো যেত। প্রয়োজন অনুযায়ী পাল তোলা বা নামানো যেত। পাশাপাশি ভাইকিং জাহাজগুলিতে থাকত বৈঠা, যা শুধুমাত্র শক্তি সঞ্চয় করত না, সেইসঙ্গে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে চালকের নিয়ন্ত্রণ বাড়াত। এ ছাড়া জাহাজগুলিতে একপ্রকার সাইড রাডার ব্যবহার করা হত, যা জাহাজের গতি ও দিক পরিবর্তনে সাহায্য করত।

(4) বিভিন্ন ধরনের জাহাজের ব্যবহার: ভাইকিংরা মূলত লংশিপ (Longship) নামে পরিচিত দ্রুতগামী জাহাজ তৈরি করত। নবম শতকে ভাইকিং জলদস্যুরা (Vikings) দাঁড় টানা সমুদ্রগামী দুদিক বাঁকানো জলযান আবিষ্কার করে উপকূল বরাবর দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়। দ্বাদশ শতকে উত্তর ইউরোপে নির্মিত হয় উঁচু হালযুক্ত জাহাজ, যা কম সময়ে দীর্ঘ যাত্রাকে সম্ভব করে তোলে। সেইসঙ্গে দুদিক বাঁকানো গোলাকার নৌকাও তৈরি করা হত।

এ ছাড়া পাল ও দাঁড়বিশিষ্ট নৌকা স্যালি (Sally)-র নির্মাণ ছিল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আবার বাণিজ্যিক কার্যকলাপের জন্য তারা নার (Knarr) নামক একপ্রকার জাহাজ ব্যবহার করত, যা ভারী বোঝা বহন করতে বিশেষ সক্ষম হত। পরিশেষে বলা যায়, ভাইকিংদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি তাদের নৌশক্তিকে আরও উন্নত করে তোলে। জাহাজের এই উন্নতি ইউরোপ-সহ অন্যান্য স্থানে বাণিজ্য বিস্তার, বসতি স্থাপন ও লুণ্ঠনের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে ভাইকিংদের প্রভূত সহায়তা করেছিল।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment