পোর্তুগিজদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির পরিচয় দাও

পোর্তুগিজদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির উন্নতি পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে সামরিক ক্ষেত্র ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল। তাদের দ্বারা নির্মিত উন্নত প্রযুক্তির জাহাজগুলির মাধ্যমে সমুদ্রপথে নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার করা সহজ হয়েছিল- যা তাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এবং সামুদ্রিক শক্তি হিসেবে ইউরোপ মহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছিল।
পোর্তুগিজদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি
(1) আরবীয় প্রযুক্তির প্রয়োগ: পোর্তুগালে জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছিল। এর মধ্যে আরবীয় প্রযুক্তি ছিল অন্যতম। ইতিপূর্বে আরবে জাহাজ তৈরির ক্ষেত্রে একটি মাস্তুলে অনেকগুলি তিনকোণা পাল ব্যবহার করা হত। তাদের তৈরি জাহাজগুলি হত হালকা এবং কম ওজনবিশিষ্ট।
(2) ইউরোপীয় প্রযুক্তির ব্যবহার: ইউরোপে মধ্যযুগের শেষের দিকে জাহাজ তৈরিতে ব্যবহৃত হত ক্লিংকার বিল্ট (Clinker-built) ও কারভেল বিল্ট (Carvel-built) নামক দুটি পদ্ধতি। পোর্তুগিজরা তাদের জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করত। ক্লিংকার ছিল জাহাজের খোল বা দেহকাঠামো তৈরিতে কাঠের পাটাগুলিকে একটার উপর একটা চাপিয়ে অর্ধ গোলাকারভাবে জাহাজটিকে তৈরি করার পদ্ধতি। আবার কারভেল পদ্ধতিতে মসৃণভাবে জাহাজের অবতল কাঠামো নির্মিত হত।
(3) পোর্তুগিজ জাহাজের বৈশিষ্ট্য: আরব ও ইউরোপীয় প্রযুক্তির সমন্বয়ে নির্মিত জাহাজগুলি আকারে ছোট এবং ওজনে হাল্কা হত। আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা সুসজ্জিত জাহাজগুলি জলস্তর থেকে উঁচু ও একটি মাস্তুলে একাধিক তিনকোণা পালবিশিষ্ট হত।
(4) ক্যারাডেল ও নাও জাহাজ : পোর্তুগালে দুটি উল্লেখযোগ্য জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির উদাহরণ হল ক্যারাভেল (Caravel) ও নাও (Nau) জাহাজ।
(a) ক্যারাভেল জাহাজ বাতাসের বিপরীতে বা প্রতিকূলে চলাচলে সক্ষম ছিল। আকার ছোটো হওয়ার কারণে উপকূল বরাবর অগভীর জলে এই জাহাজ চলতে পারত। জানা যায় যে, ব্রাজিল ও আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল অন্বেষণে এই জাহাজের ব্যবহার করেছিল পোর্তুগিজরা।
(b) নাও জাহাজটি মূলত বাণিজ্যিক অভিযানের কাজে ব্যবহৃত হত। আকারে বড়ো হওয়ায় দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার জন্য এটি উপযুক্ত ছিল। তৎকালীন সময় বৃহৎ পরিমাণ পণ্য পরিবহণের জন্য ‘নাও’ জাহাজে বর্গাকৃতি পাল ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর