ইউরোপে সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে অশ্বারোহী, গোলন্দাজ ও পদাতিক বাহিনীর কী ভূমিকা ছিল

ইউরোপে সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে অশ্বারোহী, পদাতিক ও গোলন্দাজ বাহিনীর ভূমিকা
যুদ্ধরীতি তথা যুদ্ধকৌশলের পরিবর্তন হল সামরিক বিপ্লবের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক। এই সময় অশ্বারোহী, গোলন্দাজ বাহিনী ও পদাতিক বাহিনীতে বেশকিছু পরিবর্তন আসে। ইউরোপীয় রণক্ষেত্রগুলিতে সাধারণ মানুষের ভূমিকা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
(1) অশ্বারোহী বাহিনী: মধ্যযুগে নাইট অভিধায় সম্মানিত অভিজাত অশ্বারোহীগণ ছিলেন সেকালের গর্ব ও মর্যাদার প্রতীক। কিন্তু সামরিক বিপ্লবের কালে মধ্যযুগীয় এই নাইটদের বীরগাথার অবসান ঘটেছিল। আসলে পূর্বে যেখানে অশ্বারোহীদের যুদ্ধে একটা নৈতিকতা, বীরত্ব, সম্মান, সাহসিকতার জায়গা ছিল, সেখানে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের যুদ্ধে পরিশ্রম, শঠতা ও ধূর্ততাই প্রাধান্য পেতে থাকে। আবার যুদ্ধক্ষেত্রেও পাইক এবং বন্দুক- সহ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত গোলন্দাজদের কার্যকারিতা এই সময় বৃদ্ধি পেলে এবং ব্যক্তিগত বীরত্বের পরিবর্তে সমগ্র সেনাবাহিনীর উপর জোর দেওয়া হলে অশ্বারোহী বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হয়ে পড়ে।
(2) পদাতিক বাহিনী: আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কারের পরে ইউরোপে যুদ্ধক্ষেত্রে পদাতিক বাহিনীর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বাহিনীতে পদাতিকদের হার ছিল ১/১০ অংশ, আর স্পেনীয় সেনাদলে ছিল ১/১২ অংশ। যদিও পরবর্তীতে এদের অপরিহার্যতা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। *2 ইউরোপের একাধিক রণাঙ্গনে ক্রমে পদাতিক বাহিনী অপেক্ষাকৃত বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে উঠেছিল। এই পদাতিকেরা মূলত ছিলেন অভিজাতদের চোখে ঘৃণিত প্লেবিয়ান (Plebeian) তথা সাধারণ শ্রেণির। কিন্তু এদের বীরত্ব কোনোক্ষেত্রেই উপেক্ষণীয় ছিল না। ইংরেজ এবং সুইসরা যুদ্ধের কৌশলগত পরিবর্তন ঘটিয়ে পদাতিকদের গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছিল।
(3) গোলন্দাজ বাহিনী: ইউরোপে পদাতিক বাহিনীই এরপর হালকা এবং উন্নততর আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। পঞ্চদশ শতকের শুরুর দিকে পাইক বা বল্লমের হাতলের সঙ্গে ছোটো কামান জুড়ে দেওয়া হত। এরপর প্রথমে আর্কেবুস (Arquebus) নামক একপ্রকার হাতবন্দুক এবং পরবর্তীতে (১৫২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ) আরও উন্নত মাস্কেট (Musket) বন্দুক নির্মিত হয়। ষোড়শ শতকের শুরু থেকে অনেক পদাতিক সৈনিকরাই আর্কেবুস ও মাস্কেটের অধিকারী ছিলেন। এদের সহযোগী হিসেবে পাইক বা দীর্ঘ বল্লমধারী বাহিনী থাকত। বন্দুকে গুলি ভরার বিরতিকালে শত্রুসেনার আক্রমণ থেকে মাস্কেট বাহিনীকে নিরাপত্তা দিত এই পাইক বাহিনী। বল্লম ও বন্দুকধারী বাহিনীর এই পারস্পরিক নির্ভরশীল রণনীতির উদ্ভাবক ছিলেন স্পেনীয় সেনাপতি ফার্নান্দো ফ্রান্সেসকো ডি আভালোস ডি আকুইনো (Fernando Francesco d’Avalos d’Aquino) I
মূল্যায়ন
উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রব্যবস্থার এক শক্তিশালী হাতিয়ার হল যুদ্ধ। আর পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপীয় রণাঙ্গণে অশ্বারোহী, পদাতিক ও গোলন্দাজ বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি কেবল প্রচলিত যুদ্ধকৌশলে বদলই আনেনি, বরং এই সময় থেকে যুদ্ধের রীতি হয়ে উঠল আক্রমণাত্মক।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর