প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে স্বপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো | বিতর্কের বিষয়: ‘পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি নয়’

বিতর্কের বিষয়: ‘পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি নয়’
মতের পক্ষে
পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীর মান নির্ণয়ের মাপকাঠি হলেও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে তা সর্বদা প্রাধান্য পায় না। পরীক্ষার সাফল্য বা ব্যর্থতা অভিভাবকদের কাছে অতিরিক্ত গুরুত্ব পাওয়ার ফলে তা শিক্ষার্থীদের জীবনে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। ফলে আশানুরূপ ফল না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী জীবন সম্পর্কে উদাসীন ও হতাশ হয়ে জীবনহানিকর সিদ্ধান্তের শিকার হয়।
আমাদের সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত এমন অনেক মানুষ আছেন যারা পরীক্ষার সাফল্যকে শুধুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে নিজ নিজ দক্ষতায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘তোতাকাহিনি’ রচনায় এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে শিক্ষা বোঝা নয়। শিক্ষার আনন্দই মুখ্য। পাঠ্যপুস্তকের সীমাবদ্ধ জগতের বাইরে যে সীমাহীন জ্ঞানভান্ডার বিরাজিত শিক্ষার্থীকে সেই মুক্তির স্বাদ থেকে বঞ্চিত করা শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। তাই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর জীবনের শেষ কথা বলে না।
মতের বিপক্ষে
তাত্ত্বিকেরা বলেন পরীক্ষার নম্বর সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি নয়। প্রকৃত জ্ঞান অর্জন ও জীবনে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নম্বরের বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। এই যুক্তির পক্ষে অনেক মহাপুরুষের কথাও হয়তো উল্লেখ করবেন। কিন্তু আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা এই যুক্তির অসারতা লক্ষ করি।
১. পরীক্ষার নম্বরই ছাত্রছাত্রীর মান নির্ণয়ের মাপকাঠি। পরীক্ষার লব্ধ নম্বর জানিয়ে দেয় শিক্ষার্থীর গুণগত মান। পরীক্ষার নম্বর ছাত্রছাত্রীদের পরবর্তী শ্রেণিতে পড়বার ছাড়পত্র।
২. পরীক্ষায় নম্বরের মানদণ্ড থাকলে ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি করে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হবে। ধীরে ধীরে তাদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। তাদের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা গড়ে উঠবে শৈশব থেকেই।
৩. শিক্ষার্থীর প্রিয় বিষয় নিয়ে পড়বার ক্ষেত্রে এমনকি উচ্চশিক্ষা, গবেষণার ক্ষেত্রেও পরীক্ষার নম্বর প্রয়োজন। পরীক্ষায় ভালো নম্বর না পেলে ছাত্রছাত্রীরা ভালো স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সুযোগ পায় না। বর্তমানে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলেও ভালো নম্বর না পেলে মেধাতালিকায় স্থান পায় না। ফলস্বরূপ, তাদের স্বপ্নও পূরণ হয় না।
৪. পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর ছাত্রছাত্রীদের মানসিক জোর বাড়িয়ে দেয়। এই মানসিক জোরকে পাথেয় করে তারা জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছোতে সফল হয়। তারা পরবর্তী ধাপগুলিতে মসৃণভাবে এগিয়ে যেতে পারে এবং আরও বেশি জ্ঞানার্জনে সচেষ্ট হয়।
৫. জীবনে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বর্তমানে পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর খুব জরুরি। বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কোর্সে ভরতির জন্য নম্বরের শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়।
৬. অনেকের স্বপ্ন থাকে বিদেশে গিয়ে শিক্ষা অর্জন করার। সেই বিদেশে শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে নম্বরের প্রয়োজন হয়। পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরই শিক্ষার্থীর কাছে পাশ্চাত্যের দরজা খুলে দেয়।
৭. বর্তমানকালে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন স্কলারশিপ পায় তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রেও একটা নম্বর বেঁধে দেওয়া হয়। তাই জন্যে পরীক্ষার নম্বর সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
৮. বর্তমানে একটা চাকরির পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে প্রতিষ্ঠা, সাফল্য, সুন্দর জীবনযাপন, পেশাগত দিক সবক্ষেত্রেই পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর প্রয়োজন।
৯. যদি পরীক্ষা না থাকে, নম্বর না থাকে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই থাকবে না। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা উঠে গেলে ছাত্রসমাজ দিশেহারা হয়ে পড়বে।
১০. যদি নম্বরই না থাকে, তবে মেধার মূল্যায়ন হবে কী করে? তাই বলা যায় পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরই জীবনের শেষ কথা বলে।
আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা