সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্য

অধ্যাপক অ্যালান বলের মতানুসারে 1900 খ্রিস্টাব্দের পূর্বের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় তিনটি ধারা প্রচলিত ছিল-দর্শনমূলক, ইতিহাসগত এবং আইনগত। এদের সার্বিক দিক থেকে সনাতন বা পরম্পরাগত দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
প্রথমত, সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা হত মূল্যবোধের ওপর বিশেষ আবেদনসাপেক্ষে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি, মানুষের প্রকৃতি, শ্রেষ্ঠ শাসন ও শাসনব্যবস্থার রূপ, আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস-সব কিছুই মূল্যবোধ দ্বারা আলোচিত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাগণ মনে করেন, মানুষের সুন্দর ও সুখী জীবনের গঠনই হল রাজনীতি আলোচনার মূলকথা। তারা সুখী জীবন ও সুখী সমাজ গঠনের তাগিদে উভয়ের মধ্যে ‘সমন্বয়’-এর কথা বলেছেন।
তৃতীয়ত, এই পর্বের দার্শনিকগণ তাদের আলোচনায় ব্যবহার করেছেন অবরোহ পদ্ধতি। এর মাধ্যম তাঁরা একটি কাল্পনিক সিদ্ধান্ডে এসেছেন। যেমন-প্লেটো রচনা করেছেন এক ‘দার্শনিক রাজা’-র, ম্যাকিয়াভেলি নিয়ে এসেছেন নীতিবর্জিত রাজনৈতিক ক্ষমতার আলোচনা, যেখানে শাসককে ‘শৃগাল ও সিংহ’র চারিত্রিক রূপটি দ্বারা সমালোচনা করা হয়েছে।
চতুর্থত, সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির প্রবত্তাগণ ইতিহাস থেকে যে রসদ পেতেন, তাকেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাজনীতি গবেষণার কাজে লাগিয়ে একটি নতুন ধারশালাভের চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের জীবনালেখ্য, সরকারি দলিল ও চিঠিপত্র, কোনো ঘটনার সংবাদমাধ্যমের দ্বারা উৎকীর্ণ ব্যাখ্যা প্রভৃতি দ্বারা গড়ে ওঠে রাজনৈতিক আলোচনার সিদ্ধান্ত।
পঞ্চমত, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ের আলোচনাও এর ফলে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে স্থান লাভ করত। সরকার ও রাজনীতির সমন্বয়ে প্রতিফলিত আনুষ্ঠানিক বিষয়সমূহের ওপর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার, আদালত, আইনসভার গঠন, প্রশাসনিক বিষয়সমূহ, রাজনৈতিক দল প্রভৃতির ওপর আলোচনার মাধ্যমে একটি অনুসিদ্ধান্তে আসা হয়।

উপসংহার: 

এই দৃষ্টিভঙ্গি মূলত প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিকতা ও বর্ণনামূলক দিকটি তুলে ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আইনের আলোচনার মাধ্যমে সরকারের ধরন, আইনের প্রকৃতি, বিচারব্যবস্থার রায়, বিচারব্যবস্থার গঠনকাঠামো, তার প্রকৃতি নিয়েই আলোচনা করে এবং রাজনৈতিক কাঠামোগত বিষয়টি ব্যাখ্যা করে।

Leave a Comment