![]() |
অব-উপনিবেশিকরণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করো। |
অব-উপনিবেশিকরণের রাজনৈতিক তাৎপর্য
তৃতীয় বিশ্বের আবির্ভাব : অব-উপনিবেশিকরণের পর এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলি তৃতীয় বিশ্ব (Third World) নামে পরিচিত হয়।
রাজনীতির আন্তর্জাতিকীকরণ ও জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ: অব-উপনিবেশিকরণের যুগে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের বদলে বিশ্বরাজনীতিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেয় আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ফলে বিশ্বরাজনীতির আন্তর্জাতিকীকরণ ঘটে এবং বহু নতুন জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ঠান্ডা লড়াইয়ের সম্প্রসারণ: সদ্যস্বাধীন দেশগুলির উপর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা যথাক্রমে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। ফলে রুশ-মার্কিন প্রতিদ্বন্দিতাকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা লড়াইয়ের সৃষ্টি হয়।
আঞ্চলিক সংঘাত: ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত সদ্যস্বাধীন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে (ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ভারত-চিন যুদ্ধ, কোরিয়ার যুদ্ধ) বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আঞ্চলিক সংঘাত শুরু হয়।
জাতিপুঞ্জের প্রসার : অব-উপনিবেশিকরণের সূত্রে এশিয়া ও আফ্রিকার স্বাধীন দেশগুলি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে যোগদান করলে জাতিপুঞ্জের প্রসার ঘটে। ওই সময়ে জাতিপুঞ্জের মোট ১৭৯টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১০০টি রাষ্ট্র ছিল সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্ত।
অব-উপনিবেশিকরাণর অর্থনৈতিক তাৎপর্য
সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা: অব-উপনিবেশিকরণের ফলে উপনিবেশগুলি স্বাধীনতা লাভ করলেও দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শোষণে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ফলে সদ্যস্বাধীন দেশগুলি তাদের আর্থিক বিকাশের জন্য পাশ্চাত্য শক্তির অর্থসাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।
নতুন রূপে উপনিবেশবাদ: আর্থিকভাবে নিঃস্ব সদ্যস্বাধীন দেশগুলির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলি তাদের অর্থনৈতিক সহায়তা দানের মাধ্যমে সুকৌশলে সেখানে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সাহায্যের নামে চলতে থাকে শোষণ। এই ঘটনাকেই নয়া উপনিবেশবাদ বলা হয়।
বাজার অর্থনীতির উপর নির্ভরশীলতা: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বহুলাংশেই বৈদেশিক সংগঠন বা বহুজাতিক সংস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই উদ্দেশ্যে তারা GATT (General Agreement on Tariffs and Trade)-এর আপত্তিজনক শর্তাবলিও মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং বাজার অর্থনীতির উপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা: সদ্যস্বাধীন দেশগুলি ঐক্যবদ্ধ থেকে নিজেদের সমস্যার সমাধান ও সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে তোলে। যথা- আসিয়ান বা ASEAN (Association of South-East Asian Nations), সার্ক বা SAARC (South Asian Association for Regional Co-operation), আরব লিগ প্রভৃতি।