![]() |
“অভিনেতা মানে একটা চাকর-একটা জোকার, একটা ক্লাউন। লোকেরা সারাদিন খেটেখুটে এলে তাদের আনন্দ দেওয়াই হল নাটকওয়ালাদের একমাত্র কর্তব্য।”-বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা করো। |
প্রসঙ্গ
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটক থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত। নাটকটিতে এক আটষট্টি বছরের প্রবীণ অভিনেতার অভিনয় জীবনের পর্যালোচনা রয়েছে। এক রাতে অভিনয়ের পর নেশাচ্ছন্ন অবস্থায় রজনীকান্ত হঠাৎ জেগে উঠে রাতের অন্ধকারে, মোমের আলোয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে যেন নিজেকে চিনতে পারেন।
তাৎপর্য
রজনীকান্ত যখন তার অভিনয় জীবন এবং নাট্যশিল্প নিয়ে চিন্তা করছিলেন তখন প্রম্পটার কালীনাথ তার ভাবনার জগৎকে উসকে দিয়েছিল। ফলে একে একে অতীতের হতাশার প্রকাশ ঘটতে থাকে। কিন্তু বিগত প্রেমজীবনের প্রসঙ্গে এসে থমকে যান রজনীকান্ত। নাটকের প্রতি যে ভালোবাসার জন্য তিনি সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে ত্যাগ করেছিলেন সেই নাট্যাভিনয়ের জন্য তার দীর্ঘদিনের প্রেমসম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল।
রজনীকান্ত জীবনে এই আঘাত থেকেই সত্য উপলব্ধি করেছেন। নিজেকে তার মনে হয়েছে ‘চাকর’, ক্লান্ত মানুষদের মনোরঞ্জন করাই তাদের কাজ। এখানে শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতার কোনো প্রসঙ্গই যেন নেই। সার্কাসের জোকার যেমন মানুষদের আনন্দ দেয়, অভিনেতাও তেমনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাধারণ মানুষের বিনোদনের জোগান দেয়। বিনিময়ে মানুষ তাদের প্রশংসা করে, সম্মান জানায়। কিন্তু তা শুধু মঞ্চের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেখান থেকে নামলে থিয়েটারওলাদের সামাজিক মর্যাদাটুকুও কেউ দেয় না। সমাজের চোখে অভিনেতা নিছক বিনোদনের প্রতীক, যার সঙ্গে সারাজীবন প্রেম চলে, কিন্তু সংসার করা অসম্ভব।