আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা – ১৯৩০ সালের ৬ই এপ্রিল ডান্ডির সমুদ্র উপকূলে লবণ আইন ভঙ্গ করে তিনি স্বহস্তে লবণ তৈরি করে ভারতব্যাপী আইন আমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা পড়ে নেওয়া যাক।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা
![]() |
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা
|
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা
দেশবাসীকে স্বায়ত্তশাসন দানে সরকারের তীব্র অনীহা এবং সরকারি দমন পীড়নের জন্য ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গান্ধিজির নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৩০ সালের ৬ই এপ্রিল ডান্ডির সমুদ্র উপকূলে লবণ আইন ভঙ্গ করে তিনি স্বহস্তে লবণ তৈরি করে ভারতব্যাপী আইন আমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন। ভারতীয় নারী সমাজের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে তিনি বলেন যে, “এই অহিংস যুদ্ধে পুরুষদের চেয়ে নারীদের দানই অধিক হওয়া উচিত।” নারী সমাজ গান্ধিজির আবেদনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছিল এবং তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ এই আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দিল্লি, বোম্বাই, কলকাতা ও গ্রামাঞ্চলে পর্দানশীল নারী সমাজ আন্দোলনে যোগ দিয়ে আবগারি দোকান ও বিদেশি পণ্যগারের সামনে পিকেটিং শুরু করে। কেবলমাত্র দিল্লিতেই ১৬০০ মহিলা কারারুদ্ধ হন। গান্ধি-পত্নী কস্তুরবা, কমলা নেহরু, স্বরূপরাণী নেহরু, সরোজিনী নাইডু, নেলী সেনগুপ্তা, বাসন্তী দেবী, সরলাবালা দেবী, লীলা নাগ প্রমুখ মহিলা নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
এই সময় বাংলায়
- ‘মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ’ নামে একটি সংগঠন কলকাতা এবং বিভিন্ন জেলা শহরে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। এই সংগঠনের নেতৃত্বে হাজারে হাজারে মেয়েরা জনসভা, শোভাযাত্রা এবং বিদেশি পণ্যাগারের সামনে পিকেটিং করতে থাকে। পুলিশের লাঠি, কারাগার বা অন্য কোনো অত্যাচার তাদের দমাতে পারেনি।
- ‘ছাত্রী সংঘ’ নামক সংগঠনের কর্মীরা স্কুল-কলেজের সামনে পিকেটিং করতেন।
- মহাত্মা গান্ধির ডান্ডি যাত্রার পরদিনই ১৩ মার্চ, ১৯৩০ কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’। দেশবন্ধু-ভগিনী ঊর্মিলা দেবী, মোহিনী দেবী, জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায়, নিস্তারিনী দেবী, আশালতা দাস, বিমল প্রতিভা দেবী এবং বেশ কিছু অবাঙালি মহিলা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সংগঠনের নেতৃত্বে কলকাতা এবং বাংলার বিভিন্ন জেলায় সভা, শোভাযাত্রা, বিদেশি পণ্যাগারের সামনে পিকেটিং প্রভৃতি চলতে থাকে। পুলিশের নির্মম অত্যাচার সত্ত্বেও সমিতির সদস্যরা তাঁদের লক্ষ থেকে বিচ্যুত হন নি। মাদক বর্জন, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, তাঁত ও চরকা প্রচলন এবং খাদির প্রচার প্রভৃতি গঠনমূলক কর্মের সঙ্গেও তাঁরা যুক্ত ছিলেন। ঢাকায় আশালতা সেন, রবিশালে ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা ও প্রফুল্লমুখী বসু, নোয়াখালিতে উষা গৃহ, বাঁকুড়ায় শান্তশীলা পালিত, হাওড়ায় পারুল মুখোপাধ্যায়, দিনাজপুরে প্রভা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীহট্টে সরলাবালা দেবী, নোয়াখালিতে সুশীলা মিত্র, কুমিল্লায় লাবণ্যলতা চন্দ প্রমুখ অতি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন।
- মুসলিম মেয়েরাও পিছিয়ে ছিলেন না। দীর্ঘদিনের অবরোধের প্রাচীর ভেঙে যে সব মেয়েরা স্বাধীনতার সন্ধানে ঘর ছেড়ে প্রকাশ্য রণক্ষেত্রে আর্বিভূতা হন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ২৪ পরগনার হাড়োয়া থানার হোসেন আরা বেগম, সিলেটের জোবেদা খাতুন, গাইবান্ধার দৌলতুন্নেসা খাতুন, ময়মনসিংহের রাজিয়া খাতুন ও হালিমা খাতুন, বিক্রমপুরের ফুলবাহার বিবি।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।