আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয় দাও – ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই সরকার ‘শ্রম বিরোধ আইন’ (Bombay Trade Dispute Act) পাশ করে শ্রমিক-মালিক বিরোধের বাধ্যতামূলক নিষ্পত্তি ও বেআইনি ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করলে শ্রমিক সম্প্রদায় আবার উত্তাল হয়ে ওঠে।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয় দাও পড়ে নেওয়া যাক।
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয় দাও
![]() |
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয় দাও |
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয়
শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপ্তি দেখে সরকার আশঙ্কিত হন। এই কারণে শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য সরকার কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সরকারি দমননীতি এবং অন্যান্য আরও কিছু কারণে এ সময় কমিউনিস্ট আন্দোলন বেশ কিছুটা ধাক্কা খায় এবং তাঁরা শ্রমিকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ১৯২৮-এর ডিসেম্বরে যেখানে ‘গিরনি কামগার ইউনিয়ন’-এর সদস্য ছিল ৫৪,০০০ জন, ১৯২৯-এর শেষের দিকে তা নেমে আসে ৮০০-তে। ‘নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসে’-ও তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ১৯৩০-এ আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে কমিউনিস্টরা তা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়। ১৯৩০-এ প্রকাশিত কমিউনিস্ট পার্টির একটি দলিলে স্বীকার করা হয়েছে যে, কমিউনিস্টরা সরে যাওয়ায় তাদের শূন্যস্থান দখল করে কংগ্রেস। এর ফলে শ্রমিকদের মনে ধারণা জন্মায় যে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসই একমাত্র প্রতিষ্ঠান। ১৯৩০-এর বিশ্বব্যাপী মন্দা, সরকারি নিপীড়ন ও আইন অমান্য আন্দোলন থেকে কমিউনিস্টদের দূরে সরে থাকার ফলে শ্রমিকশ্রেণিও বিশেষ সক্রিয়ভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেয় নি। এ সত্ত্বেও এ সময় শ্রমিক আন্দোলন চলতে থাকে। শোলাপুরের বস্ত্রকল, করাচির বন্দর, কলকাতার পরিবহন ও চটকল, কানপুরের বস্ত্রকল এবং মাদ্রাজের শিল্প শ্রমিকরা ধর্মঘটে নামে। শোলাপুরে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। বিদ্রোহী শ্রমিকরা সরকারি ভবনগুলির ওপর আক্রমণ চালায়। ১৯৩০ সালের ৬ই এপ্রিল গান্ধীজি যে-দিন লবণ সত্যাগ্রহ শুরু করেন সেদিন বোম্বাইয়ে ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে মেনস্ ইউনিয়নের’ শ্রমিকরা এক অভিনব উপায়ে সত্যাগ্রহ শুরু করে। শ্রমিকরা দলে দলে উত্তর বোম্বাই শহরতলির রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়ে। লাইন পরিষ্কার করতে পুলিশ গুলি চালায়। ব্যাপক গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে জাতীয় কংগ্রেস ৬ই জুলাই ‘গান্ধী দিবস’ পালন করে। সেদিন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেয় এবং ৪৯টি কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে হাজির হলেও কর্মবিরতি পালন করে। ১৯৩১ সালে গান্ধী-আরউইন চুক্তি এবং জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের ফলে শ্রমিকশ্রেণি হতাশ হয়ে পড়ে। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলন নিষ্প্রভ ছিল।
কংগ্রেস মন্ত্রিসভা ও শ্রমিক আন্দোলন
১৯৩৫ সাল থেকে শ্রমিক আন্দোলনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের নতুন শাসন সংস্কার আইনে প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে শ্রমিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি পাঠাবার ব্যবস্থা রাখা হয়। এর ফলে নির্বাচনী বাধ্যবাধকতার দিকে তাকিয়ে জাতীয় কংগ্রেস শ্রমিকদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করে। কমিউনিস্ট পার্টি তখন বেআইনি বলে ঘোষিত হলেও কমিউনিস্টরা ব্যক্তিগতভাবে ‘কংগ্রেস সোসালিস্ট’-দের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করে। নতুন শাসন সংস্কার অনুসারে ১৯৩৭-এ যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে ‘নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ সর্বত্র কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থন করে এবং তাদের পক্ষে মিছিল ও সভা করে। কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে দমনমূলক আইন প্রত্যাহার, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিদান, শ্রমিকদের জন্য আট ঘণ্টা কাজের বিধি প্রবর্তন, ন্যায্য মজুরি দান, বেকার ভাতা প্রবর্তন, শ্রম-বিরোধের মীমাংসা এবং ইউনিয়ন গঠন ও ধর্মঘট করার অধিকারের কথা ঘোষণা করা হয়। এই নির্বাচনে ১১টির মধ্যে ৭টি প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা প্রতিষ্ঠিত হলে শ্রমিকদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা দেখা দেয় এবং শ্রমিক আন্দোলনে পুনরায় জোয়ার আসে। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯-এর মধ্যে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ২৭১ থেকে বেড়ে হয় ৫৬২ এবং এগুলির সদস্যসংখ্যা ২, ৬১, ০৪৭ থেকে হয় ৩,৯৯,১৫৯। ১৯৩৭-এ বাংলার চটকলগুলিতে – ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হয়। ২৫ হাজার শ্রমিক তাতে অংশ নেয়। এ ছাড়া, এ সময় কানপুর, অমৃতসর, বোম্বাই, আমেদাবাদ ও মাদ্রাজের কাপড়ের কল, ১৯৩৮-এ কুলটি ও হীরাপুরে মার্টিন বার্ন লৌহ ও ইস্পাত কারখানা এবং ১৯৩৯-এ ডিগবয়ে খনিজ তৈল শিল্পে শ্রমিক ধর্মঘট সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই সরকার ‘শ্রম বিরোধ আইন’ (Bombay Trade Dispute Act) পাশ করে শ্রমিক-মালিক বিরোধের বাধ্যতামূলক নিষ্পত্তি ও বেআইনি ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করলে শ্রমিক সম্প্রদায় আবার উত্তাল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের পরিচয় দাও -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।