আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন – আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রিঃ): ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের কৃষক সমাজ এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন পড়ে নেওয়া যাক।

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন
আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রিঃ): ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের কৃষক সমাজ এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। জমিদারের অত্যাচার এবং সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ফলে কৃষিপণ্যের মূল্যহ্রাস জনিত সমস্যা কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় করে তোলে। বাংলার মেদিনীপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, যশোহর, মানভূম, সিংভূম, দিনাজপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালি, ঢাকা ও হুগলিতে কৃষকরা প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এইসব স্থানে বাজার লুঠ ও খাজনা বন্ধ আন্দোলন শুরু হয়। মাদ্রাজ, তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক, মাদুরাই ও অস্ত্রে কৃষকরা রাজস্ব হ্রাস করবার জন্য আন্দোলন শুরু করে এবং নানা স্থানে মহাজনদের বাড়ি ও শস্যগোলা লুঠ শুরু হয়। বহু স্থানে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের দাবি ওঠে। বেরারে কৃষকরা খাজনা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে জমিদার ও মহাজনদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং তাদের গৃহে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। পাঞ্জাবে কিষাণ সভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং খাজনা বন্ধ শুরু হয়। উত্তরপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন প্রবল রূপ ধারণ করে এবং সেখানে আইন অমান্য আন্দোলন ছিল মূলত কৃষক আন্দোলন। উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি, এলাহাবাদ, রায়বেরিলি, লক্ষ্ণৌ, মীরাট প্রভৃতি স্থানে কর বন্ধ আন্দোলন চলতে থাকে। বহু স্থানে এই আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ ধারণ করে। গুজরাটের খেদা ও সুরাট অঞ্চলে কৃষকরা খাজনা দিতে অস্বীকার করে। সরকারি দমননীতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা প্রতিবেশি বরোদা রাজ্যে আশ্রয় নেয়। সরকার বহু কৃষকের জমি নিলামে বিক্রি করে দেয়। উড়িষ্যায় ‘কৃষং সঙ্ঘ’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

সারা ভারত কিষাণ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা

আইন অমান্য আন্দোলনের পর থেকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ও সমাজতন্ত্রীদের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে অক্টোবর আচার্য নরেন্দ্র দেব, জয়প্রকাশ নারায়ণ, ডঃ রামমনোহর লোহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধন প্রমুখের নেতৃত্বে বোম্বাই শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ‘কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল’ (Congress Socialist Party) প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল’, কংগ্রেসের বামপন্থী অংশ এবং কমিউনিস্টরা একত্রে কাজ করার পক্ষপাতী ছিল। তাঁরা একত্রে একটি সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। এই মর্মে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশন-কালে জওহরলাল নেহরুর সমর্থনপুষ্ট হয়ে কংগ্রেসের বামপন্থী অংশ, ‘কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল’ ও কমিউনিস্টরা ‘সারা ভারত কিষাণ কংগ্রেস’ (All India Kishan Congress) প্রতিষ্ঠা করে। ‘বিহার কিষাণ সভা’-র প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট চরমপন্থী নেতা স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী এবং অন্ধে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ অধ্যাপক এন. জি. রঙ্গ যথাক্রমে এই নবগঠিত সংস্থার সভাপতি ও সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্ট নেতৃমণ্ডলীর মধ্যে ছিলেন ইন্দুলাল যাজ্ঞিক (গুজরাট), মোহনলাল গৌতম ও ডঃ কে. এম. আশরফ (যুক্তপ্রদেশ), সোহন সিং যোশ ও আহমদ দীন মহম্মদ (পাঞ্জাব), কমল সরকার ও সুধীন প্রামাণিক (বাংলা), এবং জয়প্রকাশ নারায়ণ ও ডঃ রামমনোহর লোহিয়া (কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল)। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে কিষাণ কংগ্রেস একটি ‘ইস্তাহার’ প্রকাশ করে কৃষকদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। এই ইস্তাহারে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ, কৃষি-ঋণ মকুব, বেগার প্রথার উচ্ছেদ, খাজনার হার ৫০ শতাংশ হ্রাস, কৃষকদের বন-সম্পদ আহরণের পূর্ণ অধিকার, অনাবাদি সরকারি জমি ও জমিদারদের খাস জমি কৃষকদের প্রদান, সামন্ত করের বিলোপ, ক্ষেত-মজুরদের মজুরি বৃদ্ধি প্রভৃতি দাবি জানানো হয়। এই সব দাবির সমর্থনে কৃষকদের নিয়ে দেশের নানা স্থানে সভা-সমিতি ও মিছিল অনুষ্ঠিত হতে থাকে।

কংগ্রেস মন্ত্রিসভা (১৯৩৮-৩৯ খ্রিঃ)

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কার্যকরী হলে কংগ্রেস কয়েকটি প্রদেশে মন্ত্রিসভা গঠন করে। এই মন্ত্রিসভাগুলি পূর্ব-প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃষক-স্বার্থে বেশ কিছু আইন প্রবর্তন করে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কৃষি-ঋণ হ্রাস বা সহজ কিস্তিতে তা প্রদান, কৃষককে ভূমিস্বত্ব দান, জমিতে ভাগচাষির অধিকার দান, উচ্ছেদ হওয়া জমিতে কৃষককে পুনর্বহাল প্রভৃতি। মহারাষ্ট্রে গোচারণ কর এবং অরণ্যে গোচারণ ও জ্বালানি সংগ্রহের জন্য কর বিলোপ করা হয়। উড়িষ্যা ও মাদ্রাজে মহাজনের সুদের হার কমানোর জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। বাংলায় ফজলুল হক নিয়ন্ত্রণাধীন (মুসলিম লিগ ও কৃষক-প্রজা পার্টি) মন্ত্রিসভা খাজনাবৃদ্ধি রদ ও সুদের হার কমাতে আইন তৈরি করে।

বিভিন্ন প্রদেশে কংগ্রেসি মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে প্রবল উৎসাহের সঞ্চার হয় এবং কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সারা ১৯৩৮ সাল জুড়ে নানা দাবিতে দেশের বিভিন্ন অংশে কৃষক আন্দোলন চলতে থাকে। ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার কৃষকের জমায়েত ও শোভাযাত্রা, বুলেটিন ও প্রচারপত্র প্রকাশ, কর্মশালা গঠন প্রভৃতি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়। থানা, তালুক ও গ্রামভিত্তিক কৃষক সংগঠন গড়ে তোলা শুরু হয়।

আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment