আধুনিক আইনের শ্রেণিবিভাগ করো

আধুনিক আইনের শ্রেণিবিভাগ করো

আধুনিক আইনের শ্রেণিবিভাগ করো
আধুনিক আইনের শ্রেণিবিভাগ করো

আইনের বিষয়বস্তু ও প্রকৃতির ভিত্তিতে আইনের শ্রেণিবিভাজন করা হয়। যদিও এই শ্রেণিবিভাজন সম্পর্কে মতভেদ বিদ্যমান। হল্যান্ড এবং ম্যাকাইভার-দুজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আইনের শ্রেণিবিভাগ করেছেন।*1 এই দুজনের শ্রেণিবিভাগের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করে আধুনিক আইনের শ্রেণিবিভাগ লক্ষণীয়। আধুনিক আইনের শ্রেণিবিভাগ নিম্নে চার্ট আকারে দেওয়া হল-

জাতীয় আইন বা দেশীয় আইন

জাতীয় আইন হল সেই আইন, যা দেশ বা জাতির ইচ্ছায় বা স্বার্থে পরিচালিত হয়। এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য হল-জাতীয় নিরাপত্তা, দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা।”*2 হল্যান্ড জাতীয় আইনকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-সরকারি আইন এবং বেসরকারি আইন।

[1] সরকারি আইন

রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত আইন হল সরকারি আইন। সরকারি আইনকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

(i) সাংবিধানিক আইন: সাংবিধানিক আইন হল রাষ্ট্রের মৌলিক আইন। কেবলমাত্র দেশের অন্যান্য আইনের উৎসই নয়, এই আইন হল সকলের ঊর্ধ্বে।” অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেন, প্রতিটি দেশেই সাংবিধানিক আইন দেখতে পাওয়া যায় এবং এই সাংবিধানিক আইন লিখিত বা অলিখিত হতে পারে।

(ii) শাসন সংক্রান্ত বা প্রশাসনিক আইন: যে-সমস্ত আইনের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে শাসন সংক্রান্ত বা প্রশাসনিক আইন বলে। প্রশাসনিক নীতি, দুর্নীতি, নিয়োগ, নির্বাহ সবকিছুই এই আইনের আওতায় আসে।

(iii) ফৌজদারি আইন: ফৌজদারি আইন হল, অপরাধ বিষয়ক মামলা ও দেওয়ানি বিচারের আইন। দেশের মধ্যে ফৌজদারি আইনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল-চুরি, ডাকাতি, খুন ইত্যাদি।

[2] বেসরকারি আইন

বেসরকারি আইন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত নয়। এই আইন দেশের নাগরিকদের পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আন্তর্জাতিক আইন

যে আইনগুলি মেনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়, তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে।*6 আন্তর্জাতিক আইনকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সরকারি আন্তর্জাতিক আইন এবং • বেসরকারি আন্তর্জাতিক আইন।

[1] সরকারি আন্তর্জাতিক আইন: যেসব নিয়মকানুন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে সরকারি আন্তর্জাতিক আইন বলে। সরকারি আন্তর্জাতিক আইনকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

(i) শান্তি বিষয়ক আইন: শান্তি চলাকালীন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যে-সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন বলবৎ থাকে, সেগুলিকে শান্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন বলা হয়। যেমন-কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিটি দেশে রাষ্ট্রদূত প্রেরণ ও গ্রহণ শান্তি বিষয়ক আইনের ব্যাখ্যাকারীরূপে পরিচিত।

(ⅱ) যুদ্ধ বিষয়ক আইন: যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় যুদ্ধরত দেশগুলি যে-সমস্ত নিয়মাবলি মেনে চলে, সেগুলিকে যুদ্ধ বিষয়ক আইন বলা হয়। যেমন-যুদ্ধকালীন বিদ্যালয়, হাসপাতাল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের উপর বোমাবর্ষণ নিষিদ্ধ করা।

(iii) নিরপেক্ষতা বিষয়ক আইন: দুই বা ততোধিক যুদ্ধরত রাষ্ট্রের বাইরে অবস্থিত নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলি যখন নিজেদের মধ্যে অথবা যুদ্ধরত দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করে, তখন তাকে নিরপেক্ষতা বিষয়ক আইন বলে। যেমন-যুদ্ধরত দেশগুলির মধ্যে পণ্য সরবরাহ নিষিদ্ধকরণ এই আইনের অন্তর্ভুক্ত।

[2] ব্যক্তিগত বা বেসরকারি আন্তর্জাতিক আইন: দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে অধিকার বা স্বার্থ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে, যে নিয়মনীতি অনুসরণ করে ওই বিরোধের মীমাংসা করা হয়, তাকে ব্যক্তিগত বা বেসরকারি আন্তর্জাতিক আইন বলে। যেমন-বিবাহবিচ্ছেদ, অবৈধ সন্তানের অধিকার প্রভৃতি বিষয়গুলি এইরূপ আইনের অন্তর্ভুক্ত। তবে, অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্যক্তিগত আন্তর্জাতিক আইনের অস্তিত্বকে স্বীকার করেন না।

পরিশেষে বলা যায়, আন্তর্জাতিক আইনে রাষ্ট্রসমূহের অধিকার ও তার প্রতিবিধানের উপায় উল্লেখ করা আছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনকে কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন – আইনের অর্থ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো

Leave a Comment