![]() |
আফ্রিকা ব্যবচ্ছেদ টিকা |
সমুদ্র-পরিবেষ্টিত এবং শ্বাপদসঙ্কুল গহন অরণ্যমন্ডিত আফ্রিকা এক বিচিত্র মহাদেশ। অন্যান্য মহাদেশ অপেক্ষা ইউরোপের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও উনিশ শতকের তৃতীয় পাদ পর্যন্ত ইউরোপের কাছে আফ্রিকা ছিল অজ্ঞাত ও অনাবিষ্কৃত। এ কারণে আফ্রিকাকে বলা হত ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ‘। তখন পর্যন্ত যে-সব জাতি আফ্রিকার সংস্পর্শে এসেছিল তাদের কর্তৃত্ব একমাত্র আফ্রিকার উপকূল বা উপকূলবর্তী অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল- দেশের অভ্যন্তর ভাগ সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে একমাত্র আবিসিনিয়া ও লাইবেরিয়া নিজেদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছিল। পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে আফ্রিকায় নবজাগরণ ও জাতীয়তা- বাদের সূচনা হয়। আফ্রিকার দিকে দিকে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়।
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ইতালি ও জার্মানির ঐক্যসাধনের পর রিও-ডি-ওরো) উপনিবেশ স্থাপন জাতীয় গৌরবের মানদন্ড বলে বিবেচিত হয়। অজ্ঞাত, অনাবিষ্কৃত ও অনধিকৃত আফ্রিকার দিকে সকলের নজর পড়ে। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য ইউরোপীয় শক্তিবর্গ ঝাঁপিয়ে পড়ে। আফ্রিকা বণ্টনের ব্যাপারে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
- এই বণ্টনকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে কখনোই কোনো যুদ্ধ সংঘঠিত হয় নি- সবই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
- অন্যান্য অঞ্চলের মতো আফ্রিকা বণ্টন ধীরগতিতে সম্পন্ন হয় নি- মাত্র ত্রিশ-চল্লিশ বছরের মধ্যে এই বন্টন সম্পন্ন হয়েছে।
- ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজ-রা উত্তমাশা অন্তরীপ (কেপ কলোনি ও কেপ অফ গুড় হোপ) দখল করে। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে তারা ইংরেজদের কাছে কেপ কেলোনি বিক্রি করে দেয়।
- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পোর্তুগিজরা আফ্রিকায় তিনটি উপনিবেশ গড়ে তোলে। সেগুলি হল- গিয়ানা উপকূল, শোফালা, অ্যাঙ্গোলা। কালক্রমে তারা আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ও পশ্চিম উপকূলে ‘পোর্তুগিজ পূর্ব আফ্রিকা’ ও ‘পোর্তুগিজ পশ্চিম আফ্রিকা’ নামে দুটি রাজ্য গড়ে তোলে।
- কঙ্গোতে বেলজিয়াম-এর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ফ্রান্স অনেক আগেই আলজেরিয়া দখল করেছিল। পরবর্তীকালে তারা টিউনিস, চাঁদ, সেনেগাল, দাহোমে, গিনি, মরক্কো, মাদাগাস্কার, সোমালিল্যান্ডের একাংশ, সমগ্র সাহারা প্রভৃতি দখল করে।
- আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বেশি অঞ্চল ইংল্যান্ড দখল করে। উত্তরে কায়রো থেকে দক্ষিণে উত্তমাশা অন্তরীপ পর্যন্ত প্রায় সব স্থানই ইংল্যান্ডের দখলে আসে- একমাত্র জার্মান পূর্ব আফ্রিকা এই বিশাল ভূখন্ডের যোগাযোগ ছিন্ন করে। এছাড়াও গাম্বিয়া, সিয়েরা লিয়োন, গোল্ডকোস্ট, নাইজেরিয়া, সোমালিল্যান্ডের একাংশও ব্রিটিশ অধিকারে আসে।
- জার্মান রাষ্ট্রনায়ক বিসমার্ক উপনিবেশ স্থাপনের বিরোধী ছিলেন। এসত্ত্বেও জার্মান পুঁজিপতিদের চাপে তিনি বিস্তারনীতি গ্রহণে বাধ্য হয়। এই সময়ে জার্মানি দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা, ক্যামেরুন ও টোগোল্যান্ড দখল করে।
- ইতালি ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে লোহিত সাগরে অবস্থিত ইরিত্রিয়া এবং ইতালির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত সোমালিল্যান্ড দখল করে। এই দুটি স্থানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ইতালি আবিসিনিয়া দখলে উদ্যোগী হয়। কিন্তু এ্যাডোয়ার যুদ্ধে (১৮৯৬ খ্রিঃ) পরাজিত হয়। পরবর্তীকালে মুসোলিনি স্থানটি দখল করেন (১৯৩৫ খ্রিঃ)। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ইতালি তুরস্কের কাছ থেকে ত্রিপোলি দখল করে।
- স্পেন আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে রিও-ডি-ওরো প্রদেশ এবং জিব্রাল্টারের বিপরীতে আফ্রিকার উপকূলে কতকগুলি স্থান দখল করে।