![]() |
ইংল্যান্ড ও মহাদেশে শিল্পবিপ্লবের তুলনামূলক আলোচনা করো। |
ভূমিকা
তুলনামূলক আলোচনা
[১] সময়গত পার্থক্য: ১৭৬০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ ছিল ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের সময়কাল; পক্ষান্তরে ফ্রান্সের এই সময়কাল ছিল ১৮১৪-১৮৬০ খ্রি., জার্মানির ১৮৫০-১৮৭৩ খ্রি., রাশিয়ার ১৮৬০-১৯০৫ খ্রি.।
[২] প্রেক্ষাপটের পার্থক্য: ইংল্যান্ড ও মহাদেশীয় শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটগত পার্থক্য আলোচনায় দেখা যায় যে, ইংল্যান্ডে কৃষি বিপ্লব, জনসংখ্যাগত বিপ্লব, বাণিজ্য ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে শিল্পবিপ্লব সম্পূর্ণ হয়েছিল, কিন্তু উনিশ শতকেও জার্মানি ও রাশিয়ায় ছিল সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা এবং কৃষি বিপ্লবের অনুপস্থিতি।
[৩] উদ্যোগগত পার্থক্য : ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবে মূলত বেসরকারি উদ্যোগেই পরিচালিত হয়েছিল। শিল্পবিপ্লব কিন্তু ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়াতে বেসরকারি উদ্যোগ অপেক্ষা সরকারি উদ্যোগের ভূমিকা ছিল অধিক।
[৪] অগ্রগতি সংক্রান্ত পার্থক্য: শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে যে আর্থ-সামাজিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছিল সেক্ষেত্রেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়-ইংল্যান্ডে এই প্রক্রিয়া ছিল ধারাবাহিক, ফ্রান্সে তা ছিল শ্লথগতিসম্পন্ন, জার্মানিতে তা ছিল বিলম্বিত ও দ্রুত এবং রাশিয়ায় তা ছিল সর্বাধিক বিলম্বিত। শিক্ষ
[৫] অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত পার্থক্য: ইংল্যান্ডে শিল্পায়ন হয়েছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং ইংল্যান্ড শিল্পবিপ্লবের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই এগোতে থাকে, কিন্তু ইউরোপের দেশগুলিতে শিল্পায়ন ইংল্যান্ডের পরে শুরু হয়ে যায় এবং তারা ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিল।
[৬] উৎপাদন ক্ষেত্রগত পার্থক্য: উৎপাদন ক্ষেত্রগত পার্থক্য আলোচনার ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য লক্ষণীয়-
- ইংল্যান্ড: ইংল্যান্ডে মূলত বস্ত্রশিল্প ছিল শিল্পবিপ্লবের প্রাথমিক ক্ষেত্র এবং পরবর্তীকালে লৌহ, খনি শিল্পে ও পরিবহণ শিল্পে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল।
- ফ্রান্স: ফ্রান্স ইংল্যান্ডের অনুকরণে বস্ত্রশিল্প, খনি শিল্প ও লৌহ শিল্প স্থাপনে অগ্রসর হয়েছিল, কিন্তু নেপোলিয়নীয় যুদ্ধের কারণে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীকালে তৃতীয় নেপোলিয়নের শাসনকালে রেলপথ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছিল।
- জার্মানি: জার্মানিতে শিল্পবিপ্লবের ক্ষেত্র ছিল রেলপথ নির্মাণ, বয়ন শিল্প ও খনিজ শিল্প এবং উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কয়লা ও লৌহ শিল্পের অগ্রগতি ঘটে।
- রাশিয়া: রাশিয়ার শিল্পবিপ্লব ছিল বিদেশি মূলধন নির্ভর এবং এর প্রাথমিক ক্ষেত্র ছিল কয়লাখনি, পেট্রোল উত্তোলন, লৌহ-ইস্পাত শিল্প।