ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরোধের কারণ কি ছিল। পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো – নবাব সিরাজ উদ-দৌলার সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধের পিছনে একাধিক কারণ ছিল। সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরোধের কারণ কি ছিল। পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো পড়ে নেওয়া যাক।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরোধের কারণ কি ছিল। পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো |
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে কোম্পানির সঙ্গে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরোধের কারণ উল্লেখ করো। পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। |
সিরাজ উদ-দৌলার সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণ
নবাব সিরাজকে অসম্মান : সিরাজ মসনদে বসলে ইংরেজরা নবাবের প্রতি সম্মান বা আনুগত্যসূচক কোনো নজরানা বা উপঢৌকন পাঠায়নি, যা সিরাজকে ঘোরতর অসন্তুষ্ট করে।
পারিবারিক দ্বন্দ্ব: সিরাজ উদ-দৌলার নবাবপদ লাভকে কেন্দ্র করে ঘসেটি বেগম ও সৌকত জঙ্গ-এর নেতৃত্বে যে ষড়যন্ত্র ঘনীভূত হয়েছিল তাতে ইংরেজ কোম্পানিও যোগদান করে।
কৃষ্ণদাস সমস্যা: ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ঘসেটি বেগম বন্দি হলে ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃম্নদাস তাঁর অরক্ষিত কোশাগারের সমস্ত ধনরত্ন চুরি করে কলকাতায় আশ্রয় নেয়। নবাব কৃষ্ণদাসের প্রত্যার্পণ দাবি করলে ইংরেজরা তা অগ্রাহ্য করে।
দস্তকের অপব্যবহার: ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়র ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাণিজ্যিক সুবিধা দান করে একটি দস্তক বা ছাড়পত্র মঞ্জুর করেন। কিন্তু এই দস্তককে কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত বাণিজ্যে কাজে লাগিয়ে নবাবের রাজস্ব ফাঁকি দিতে থাকে। নবাব বারংবার আপত্তি জানালেও তারা নবাবের কথায় কান দেয়নি।
বেঅহিনি দুর্গ নির্মাণ: সিরাজের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইংরেজরা বেআইনিভাবে কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ করতে থাকে।
সিরাজের দূত নারায়ণ দাসকে অপমান: উপরোক্ত সমস্যাগুলির ব্যাপারে ইংরেজদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে সিরাজ তাঁর দূত নারায়ণ দাসকে প্রেরণ করলে কোম্পানির কর্মকর্তারা তাকে অপমান করে।
কলকাতা আক্রমণ: অতঃপর ক্ষুব্ধ সিরাজ ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন ফোর্ট উইলিয়ম দুর্গ আক্রমণ ও দখল করেন, যা পরে ইংরেজরা পুনর্দখল করে নিয়েছিল।
পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারাত সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা: ভারতে ইংরেজ কোম্পানির সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে। বাংলার সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ইংরেজরা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলগুলিকে নিজেদের অধিকারে আনার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
ভারতীয় রাজনীতিতে কোম্পানির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা: ভারতীয় রাজনীতিতে কোম্পানির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় পলাশির যুদ্ধের মাধ্যমে। কোম্পানি হয়ে ওঠে বাংলার মসনদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি: পলাশির যুদ্ধের পরবর্তীতে বাংলার সিংহাসনে একের পর এক নবাবকে বসিয়ে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করতে গিয়ে কোম্পানি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতার মুখে পড়ে।
বাণিজ্যে একচেটিয়া কর্তৃত্ব : পলাশির যুদ্ধজয়ের ফলে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার পায় ইংরেজ কোম্পানি। কোম্পানির একচেটিয়া কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় বাংলার ব্যাবসাবাণিজ্যে।
ক্ষমতাহীন নবাব: এই যুদ্ধের পর নবনিযুক্ত নবাব মির জাফর কার্যত কোম্পানির হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিলেন।
নবযুগের সূচনা: পলাশির যুদ্ধে সিরাজ উদ-দৌলার পরাজয়ের ফলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে ইংরেজ শাসন প্রসারলাভের মাধ্যমে।