উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা

উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে বিশ্বে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ ভার্সাই শান্তি সম্মেলনে মিলিত হয়। তাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে সর্বতোভাবে দায়ী করে, জার্মানি যাতে আর ভবিষ্যতে ইউরোপের শান্তিভঙ্গ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। 
 
সুস্বাগতম প্রিয় শিক্ষার্থী। Prayaswb-এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবো।
 
উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা সম্পর্কে আরো জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটে অন্যান্য পোস্টগুলো পড়তে পারেন অথবা গুগলে সার্চ করতে পারেন। তো চলুন আজকের মূল বিষয় উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা পড়ে নেওয়া যাক।

উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা

উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা
উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা

উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে বিশ্বে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ ভার্সাই শান্তি সম্মেলনে মিলিত হয়। তাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে সর্বতোভাবে দায়ী করে, জার্মানি যাতে আর ভবিষ্যতে ইউরোপের শান্তিভঙ্গ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। সম্মেলনের নেতৃবৃন্দ জার্মানির প্রতি অস্বাভাবিক কঠোর নীতি গ্রহণ করে তার মৌলিক স্বার্থ ও মর্যাদার ওপর চরম আঘাত হানেন। অপমানিত জার্মানি শুরু থেকেই এই অপমানজনক সন্ধির বিরোধিতা করতে থাকে এবং সন্ধি স্বাক্ষরিত হওয়ার কুড়ি বছরের মধ্যেই এই ‘অপমানজনক সন্ধি’ ভেঙে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তাই বলা হয় যে, এই সন্ধির শর্তগুলির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল।

ন্যায়নীতি লঙ্ঘিত

এই সন্ধিতে ন্যায়নীতি সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘিত হয়। যুদ্ধের জন্য সব দেশই কমবেশি দায়ী থাকলেও একতরফাভাবে জার্মানির ওপরেই সেই দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়। জার্মানি তার ২৫ হাজার বর্গমাইল অঞ্চল মিত্রপক্ষের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়। উইলসনের চোদ্দ দফা নীতি অনুসারে স্থির হয়েছিল যে, এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রতিটি দেশই যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম ও উদ্‌বৃত্ত সামরিক অস্ত্রাদি হ্রাস করবে। বলা বাহুল্য, এ নীতি কেবল পরাজিত জার্মানির ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হয়- বিজয়ী মিত্রশক্তির প্রতি নয়। জার্মানির সামরিক শক্তি শোচনীয়ভাবে হ্রাস করা হয়। জার্মানির জল, স্থল ও বিমান বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। তাঁর সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে এক লক্ষ করা হয় এবং বলা হয় যে, এই বাহিনী কেবলমাত্র জার্মানির সীমান্ত রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হবে। জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষাদানও নিষিদ্ধ হয়। জার্মানির যুদ্ধজাহাজগুলি ইংল্যান্ডকে প্রদান করতে বাধ্য হয়। রাইন নদীর পূর্বতীরে ত্রিশ মাইলব্যাপী এলাকায় জার্মান সামরিক ঘাঁটি ও দূর্গগুলি ভেঙে ফেলে একে বেসামরিক অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়। জার্মানিতে ট্যাঙ্ক, বোমারু বিমান, কামান নির্মাণ নিষিদ্ধ হয়। জার্মানির মতো বৃহৎ দেশের সামরিক শক্তি বেলজিয়ামের মতো ক্ষুদ্র দেশ অপেক্ষাও হ্রাস করা হয়। সুশাসন প্রবর্তন ও স্বায়ত্তশাসনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার অজুহাতে জার্মানির উপনিবেশগুলি কেড়ে নিয়ে মিত্রপক্ষ সেগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়। উপনিবেশগুলিতে কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী শাসনব্যবস্থাই প্রবর্তিত হয়।

জাতীয়তাবাদ উপেক্ষিত

উইলসনের চোদ্দো দফা নীতি-তে জাতীয়তাবাদ ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের কথা বলা হলেও জার্মানির ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযুক্ত হয়নি এবং জার্মানি থেকে জার্মান-অধ্যুষিত বহু অঞ্চল বিচ্ছিন্ন করে প্রতিবেশী অ-জার্মান রাজ্যগুলির সঙ্গে সংযুক্ত করে জার্মান জাতীয়তাবাদকে উপেক্ষা করা হয়। এর ফলে পিতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন জার্মানরা অন্যান্য দেশে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। পক্ষপাতদুষ্ট এই নীতি জার্মানির মনে প্রবল বিক্ষোভের সঞ্চার করে এবং এর ফলে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু সমস্যার উদ্ভব হয়। জার্মানির মধ্য দিয়ে পোল্যান্ডকে সংযোগপথ বা ‘করিডোর’ (Corridor) দেওয়ার ফলে জার্মানির দ্বিখন্ডীকরণ, জার্মান বন্দর ডানজিগ ও বিভিন্ন নদীকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা, সার অঞ্চলকে জার্মানি থেকে পৃথক করা এবং অন্যান্য কারণে জার্মান জাতীয়তাবাদ প্রবলভাবে আহত হয়। জার্মানিতে উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাবের বিকাশ ঘটে এবং জার্মানবাসী এই চুক্তি বাতিল করার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
আমরা মনে করি আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের ক্ষেত্রে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির ভূমিকা -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment