উড্রো উইলসন ও চোদ্দো দফা নীতির প্রেক্ষিত

উড্রো উইলসন ও চোদ্দো দফা নীতির প্রেক্ষিত
উড্রো উইলসন ও চোদ্দো দফা নীতির প্রেক্ষিত

পটভূমি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল একটি ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’। জল-স্থল-অন্তরীক্ষ সর্বত্রই এই যুদ্ধ বিস্তার লাভ করে এবং ইউরোপের সীমা অতিক্রম করে সুদূর প্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর প্রায় সব জাতিই নানাভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধে নানা ধরনের ভয়াবহ মারণাস্ত্র ব্যবহৃত। হয়। সেনাদল ও বেসামরিক জনসাধারণের মৃত্যু এবং সম্পত্তির ধ্বংস এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। যুদ্ধে যোগদানকারী ৬ কোটি সেনার মধ্যে ১ কোটি ৩০ লক্ষ প্রাণ হারায়। চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় ৭৯ লক্ষ।

মূল বক্তব্য

যুদ্ধের ভয়াবহতায় আতঙ্কিত বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বে স্থায়ী শান্তির কথা চিন্তা করতে থাকেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র রক্ষা এবং ইউরোপের যথাযোগ্য পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে মার্কিন কংগ্রেসে তাঁর বিখ্যাত ‘চোদ্দো দফা নীতি’ (Fourteen points) ঘোষণা করেন। তিনি এই ঘোষণায় প্রত্যেক জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সমর্থন করেন। এর ভিত্তিতে মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অনেকগুলি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। উপনিবেশগুলির জনসাধারণ উইলসনের ঘোষণায় আশান্বিত হয়। এই ঘোষণার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নিরস্ত্রীকরণ এবং এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ ও সংঘাতের নিষ্পত্তি করা যাবে।

কার্যকারিতা

উইলসনের প্রস্তাবিত শর্তাবলি অবলম্বন করে যথার্থ সন্ধি স্থাপন করা সম্ভব ছিল না। তাঁর প্রস্তাবিত শর্তাবলীর অধিকাংশই ছিল অস্পষ্ট ও আদর্শবাদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাঁর প্রস্তাবগুলি ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের প্রতিশোধ-স্পৃহাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। এ সত্ত্বেও বলতে হয় যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই ঘোষণার গুরুত্ব অপরিসীম কারণ এই ঘোষণায় উল্লিখিত নীতির ভিত্তিতেই সন্ধি-চুক্তিগুলি সম্পাদিত হবার কথা। ফলে পরবর্তী সময়ে এই নীতি থেকে বিচ্যুতির জন্য ভার্সাই সন্ধির সমালোচনা করা হয়েছিল।

Leave a Comment