![]() |
উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো। |
হবসন-লেনিন তত্ত্ব
সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-এর বক্তব্য
পুঁজির উদ্ভব: হবসন তাঁর ‘Imperialism: A Study’ গ্রন্থে বলেছেন, শিল্পবিপ্লবের ফলে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত পণ্য প্রচুর পরিমাণে উদ্বৃত্ত পুঁজি গড়ে তোলে। এই উদ্বৃত্ত পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে মালিক শ্রেণি মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে। যখন নিজ নিজ দেশে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছোয় (Saturated) তখন অন্য দেশের বাজারে শিল্পদ্রব্য ও পুঁজি রফতানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই নতুন বাজার বা ক্ষেত্রই হল নতুন উপনিবেশ।
অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্ষতি: শিল্পবিপ্লবের ফলে যে প্রচুর মুনাফা অর্জিত হয় তা মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির হাতে চলে যায়। ফলে সমাজের বড়ো একটি অংশ যাদের হাতে কোনো অতিরিক্ত পুঁজি ছিল না, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায় এবং অভ্যন্তরীণ বাজার গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও বিনষ্ট হয়।
পুঁজিব বিকাশ: পুঁজির বিকাশ ও গতিশীলতার ক্ষেত্রে উপনিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সস্তা কাঁচামাল, সস্তা শ্রমিক এবং শিল্পদ্রব্য বিক্রির জন্য প্রতিযোগিতাহীন বাজার ইত্যাদি কারণে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঔপনিবেশিক নীতি : হবসন উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা ও সাম্রাজ্যবাদের পথের কথা বলেছেন। এই পথ হল, সরাসরি আক্রমণ বা যুদ্ধের মাধ্যমে অন্য দেশ দখল না করে আর্থিক শক্তি বা উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রশক্তির পরিচয় দান করা।
সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে লেনিনের তত্ত্ব
পুঁজির কেন্দ্রীভবন: পুঁজিবাদ যত বিকশিত হবে তত পুঁজির কেন্দ্রীভবন হবে। এর ফলে সিন্ডিকেট, কারটেল, ট্রাস্ট গড়ে ওঠে। ছোটো ছোটো পুঁজি প্রতিযোগিতায় হেরে বড়ো পুঁজিতে পরিণত হয় এবং সমস্ত পুঁজিকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। পুঁজিবাদ তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয় এবং আর্থিক স্বার্থরক্ষার জন্য সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠে।
পুঁজির আন্তর্জাতিকীকরণ: লেনিন-এর মতে, সাম্রাজ্যবাদ হল একচেটিয়া পুঁজিবাদ। এই পর্বে পুঁজির একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্য দেশে পুঁজি রফতানি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। বিশ্ববাজার আন্তর্জাতিক ট্রাস্ট (Trust)-এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।
লেনিন মনে করেন ১৮৭১-১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীতে যত যুদ্ধবিগ্রহ ঘটেছিল, তার সবগুলিই ছিল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ।