![]() |
উপভোক্তার সচেতনতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা |
ভূমিকা
বিশ্বায়ন উত্তর কালে সমগ্র পৃথিবী যেহেতু একট বাজার তাই সমস্ত কিছুই দ্রব্য-যা ক্রয় বা বিক্রয় হয়। পৃথিবী যেহেতু একটি বাজারের একক (Unit) তাই সব দ্রব্যই ভোগের সামগ্রী। তাছাড়া এই ভোগবাদী যুগে যে দ্রব্য ক্রয় করছে তাকে বলা হয় উপভোক্তা, কেননা ভোগের জন্যই উৎপাদন। সুতরাং উৎপাদিত সামগ্রীর গুণমান নির্ধারণ করবে উপভোক্তা এবং সে কারণে উপভোক্তার সচেতনতাই পারে উৎপাদিত সামগ্রীর গুণমান ও পরিষেবাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যদিও আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যথাযথ সচেতনতার অভাবে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ক্ষেত্র
উপভোক্তা যদি তাঁর ক্ষেত্র বা ক্ষমতা সম্বন্ধে সচেতন হন তাহলে উৎপাদক বা প্রস্তুতকারী সংস্থা বা সরবরাহকারী সংস্থা বা দোকানদার উপভোক্তার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তার সামগ্রী বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অনেক সৎ ও স্বচ্ছ হতে পারেন। কেননা কোনো দ্রব্য কেনার সময় তার দাম, প্রস্তুতের তারিখ ও ব্যবহারের সীমার সময় পেরিয়ে গেছে কিনা দেখে নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি ক্যাশমেমো নিয়ে নেওয়া। কিন্তু এই কাজ অনেকেই করেন না বলেই তাঁরা প্রতারিত হন। এজন্য আমাদের রাজ্যে ‘জাগো গ্রাহক জাগো’ নামে ওয়েব সাইট তৈরি করে উপভোক্তার বক্তব্য জানাবার ব্যবস্থা হয়েছে। এজন্য যেসব ক্ষেত্রকে বেছে নেওয়া হয়েছে তা হল-গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিকম, ব্যাংক, ইনসিওর্যান্স, ক্রেডিট কার্ড, অটোমোবাইল, ডাক, পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, জল, কুরিয়ার, বাড়িতে ব্যবহার্য জিনিষ যেমন টিভি, কুলার, ফ্যান, ওয়াশিং মেসিন, এসি, মাইক্রোওয়েভ, গ্যাস বার্নার, ওয়াটার পিউরিফায়ার, মোবাইল ফোন, ইনভার্টার, জুতো, সিডি, ডিভিডি প্রভৃতি।
গ্রাহক সচেতনতা
উপভোক্তাকে সামাজিক মর্যাদা ও আইনি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে উপভোক্তা সুরক্ষা দপ্তর। এর উদ্দেশ্য হল উপভোক্তাকে সচেতন করানো এবং সেই লক্ষ্যে ফোনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দান, বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য প্রদান, সহযোগিতা ও সঠিক পরিচালনার ব্যবস্থা। এছাড়া বিভিন্ন জিনিষের আদর্শগত (Standard) ও গুণগত (Quality) মান সম্বন্ধে উপভোক্তাদের সচেতন করা। কেননা উপভোক্তার জানার অধিকার আছে কোনটি জীবনধারণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর ও কল্যাণদায়ক। উপভোক্তার জানার অধিকার আছে জিনিষের ওজন, গুণমান, শুদ্ধতা, আদর্শ, সামগ্রীর মানের সূচক, মূল্য প্রভৃতি সম্বন্দ্বে। উপভোক্তার ক্ষমতা রয়েছে নানা বৈচিত্রধর্মী দ্রব্যের মধ্যে সঠিকটি নির্বাচন করার। এছাড়া উপভোক্তার মতামত ও তার প্রতিক্রিয়া জানাবার অধিকার রয়েছে, অধিকার রয়েছে উপভোক্তার অসন্তুষ্টির সমাধানের জন্য আইনি আশ্রয় নেওয়ার। সেই সঙ্গে উপভোক্তাকে বাজারের অসাধুতা, প্রতারণা বিষয়ে সচেতন করতে উপভোক্তা সংগঠন গড়ার অধিকারও দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্ব ও কর্তব্য
উপভোক্তাকে জানতে হবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য কী? যেমন, বিদ্যুৎ-এর ক্ষেত্রে মিটার না দিলে, ভুল বিল পাঠালে, নোটিস না দিয়ে লাইন কেটে দিলে অভিযোগ জানানো যাবে। ডাকঘরের ক্ষেত্রে চিঠি দেরিতে দিলে বা না দিলে, অ্যাকাউন্ট খুলতে দেরি করলে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অ্যাকাউন্ট পরিবর্তনে দেরি করলে, নির্দিষ্ট সময়ে সুদ দিতে দেরি করলে আবেদন করা যাবে। খাদ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে নিম্নমানের খাবার, অস্বাস্থ্যকর খাবার, জলের বোতলে গুঁড়া বা শ্যাওলা, প্যাকেট খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহারের শেষ তারিখ পেরিয়ে যাওয়া প্রভৃতির ক্ষেত্রে আবেদন করা যাবে। ইনসিওরেন্স-এর ক্ষেত্রে পলিসি ডকুমেন্ট দিতে দেরি করলে, দাবি নস্যাৎ করে দিলে, ইনসিওরেন্স বাতিল করে দেওয়ার আবেদন গ্রহণ না করলে আবেদন করা যাবে। আবার ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ঋণের ক্ষেত্রে বেশি সুদ দাবি করলে, এ. টি. এম-এর গোলমাল হলে, ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত বিল পাঠালে, ঋণ মঞ্জুর-এর জন্য দেরি করলে আবেদন করা যাবে। এই আবেদন করা যাবে ক্রমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান/দোকানদারকে তারপর স্থানীয় প্রশাসনকে এবং সবশেষে Consumer Forum-এর কাছে। টোল ফ্রি নম্বরে (১৮০০-১১-৪০০০) ফোন করে বা ৮১৩০০০৯৮০৯ এই নম্বরে SMS পাঠিয়ে বা Web @ nationalconsumerhelpline.in-এ loging করে অভিযোগ জানানো যাবে। জেলা স্তরে ২০ লক্ষ, রাজ্য স্তরে ১ কোটি এবং কেন্দ্রস্তরে ১ কোটির বেশি অর্থ দাবি করে আবেদন করা যাবে। দৈনিক শিক্ষা ব্লগ
উপসংহার
এজন্য চাই সচেতনতা ও উপযুক্ত পদক্ষেপ এবং অবশ্যই সম্মিলিত প্রয়াস। কোনো ঔষধ দোকানে কোন উপভোক্তা ক্যাশমেমো চাইলে অন্য উপভোক্তা আড়চোখে তাকায়, অনেকেই Expiry date-এর ঔষধ কিনে নিয়ে গিয়ে বিপদে পড়েন, বাড়িতে ব্যবহার্য জিনিস কিনে নিয়ে গিয়ে তা খারাপ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা দেখান, গড়িমসি করেন এবং তা ফেলে দিয়ে আবার নতুন জিনিস কিনে আনেন। এখানেই প্রশ্ন ওঠে উপভোক্তার দায়িত্ব বিষয়ে। তাই উপভোক্তাদের সচেতনতাই পারে অসাধু ব্যবসায়ীদের মুখোশ খুলে ফেলতে ও বাজারে নিত্য ব্যবহার্য জিনিষের গুণমান ও আদর্শকে ঠিক রাখতে।