এদিকে সন্ধ্যাবেলা আশ্রমে উপমন্যুকে ফিরতে না-দেখে গুরু অন্যান্য শিষ্যকে জানালেন যে, তিনি উপমন্যুকে সমস্ত প্রকার আহার গ্রহণ করতে বাধা দেওয়ায় সে অবশ্যই ক্রুদ্ধ হয়েছে। সেজন্যই সে বহুক্ষণ গেছে আর আসে না। এই কথা বলে বনে গিয়ে তিনি উপমন্যুকে আশ্রমে ফিরে আসার জন্য ডাক দিলেন। উপমন্যু কূপ থেকে উত্তর দিল সে (উপমন্যু) আকন্দের পাতা খেয়ে অন্ধ হয়ে কূপে পড়ে গেছে। তখন গুরু তাকে দেবচিকিৎসক অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের স্তব করতে বললেন। উপমন্যুর স্তবে সন্তুষ্ট অশ্বিনীকুমারদ্বয় সেখানে উপস্থিত হয়ে উপমন্যুর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন এবং তাঁরা উপমন্যুকে পিষ্টক (পিঠে) খেতে দেন। কিন্তু উপমন্যু জানায় যে গুরুকে নিবেদন না-করে তা গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি যখন তাকে বলা হল যে তার গুরুও অনুরূপ অবস্থায় তাঁর গুরুকে নিবেদন না-করেই পিঠে খেয়েছিলেন, তখনও শিষ্য উপমন্যু দৃঢ়তার সঙ্গে তা গ্রহণে অসম্মতি জানায়। তখন দেবচিকিৎসক অশ্বিনীকুমারদ্বয় উপমন্যুর অপূর্ব গুরুভক্তি দেখে পরম প্রীত হয়ে আশীর্বাদ করেন। তাঁরা বর দিলেন গুরুর দাঁতগুলি কৃষ্ণলৌহময়, কিন্তু উপমন্যুর দাঁত হবে স্বর্ণময়। সে দৃষ্টিসম্পন্ন হবে এবং কল্যাণ লাভ করবে। অশ্বিনীকুমারদ্বয় এরূপ বললে উপমন্যু দৃষ্টিশক্তি লাভ করে গুরুর চরণে প্রণাম জানায়। আর সমস্ত বৃত্তান্ত গুরুকে নিবেদন করে। গুরুও সন্তুষ্ট হয়ে উপমন্যুকে আশীর্বাদ করে বলেন অশ্বিনীকুমারদ্বয় যেমন বলেছেন উপমন্যু সেইরূপই শ্রেয়োলাভ করবে (কল্যাণ লাভ করবে) এবং সমস্ত বেদ তার অধিগত হবে। এইরূপে গুরুভক্তির পুরস্কারস্বরূপ উপমন্যু লাভ করে গুরুর আশীর্বাদ বেদবিদ্যা।
উপমন্যু গল্পের বিষয়বস্তু ১ম সেমিস্টার একাদশ শ্রেণি সংস্কৃত
উপমন্যু কাহিনিতে দেখা যায়- গুরু ঋষি আয়োদ ধৌম্যের উপমন্যু নামে অপর (দ্বিতীয়) এক শিষ্য ছিল। গুরু তাঁর শিষ্য উপমন্যুকে গোরু চরানোর আদেশ দিলেন। প্রতিদিন গোরু চরিয়ে সন্ধ্যায় শিষ্য গুরুগৃহে এসে গুরুকে প্রণাম জানালে গুরু তাকে হৃষ্টপুষ্ট দেখে জিজ্ঞাসা করে জানলেন যে, সে ভিক্ষান্নে জীবনধারণ করে। এই কথা শুনে গুরু আদেশ করলেন যে গুরুকে নিবেদন না-করে ভিক্ষান্ন গ্রহণে তার অধিকার নেই। সেই থেকে উপমন্যু ভিক্ষালব্ধ অন্ন সমস্তই গুরুকে নিবেদন করে। শিষ্যের স্বাস্থ্য তবুও অটুট। পুনরায় উপমন্যুকে সেইরূপ হৃষ্টপুষ্ট দেখে গুরু জানতে পারলেন যে, সে দ্বিতীয়বার ভিক্ষা করে জীবনধারণ করে। এতে গুরু বাধা দিয়ে বলেন যে, এটা লোভের পরিচায়ক। শুধু তাই নয়, অন্যান্য ভিক্ষাজীবীরা এর ফলে বৃত্তিহীন হবে। উপমন্যু আর ভিক্ষায় বের হয় না। তবু তাকে আগের মতো হৃষ্টপুষ্ট দেখে গুরু জানলেন যে, উপমন্যু গোরুর দুধ পান করে। পুনরায় গুরু তাকে আদেশ দিলেন যে, গোরুর দুধ পান করা তার অধিকার নয়। উপমন্যু পুনরায় গোরক্ষায় রত থাকল। গুরু আবার জানতে চাইলেন কী খেয়ে উপমন্যু হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে। উত্তরে উপমন্যু বলে যে, গোবৎসদের দুধ পান করার সময় মুখ দিয়ে যে ফেনা বের হয় তা পান করে সে কালযাপন করে। গুরু তা শুনে বলেন যে, এইরকম বৃত্তির ব্যবস্থা করে সে বাছুরগুলোর জীবিকার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ফেনাও তার পান করা উচিত নয়। শিষ্য উপমন্যু গুরুর সেই আদেশও মাথা পেতে নেয়। গুরুর কাছে বারবার বাধা পেয়ে শেষে ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে অর্কপত্র (আকন্দের পাতা) খেয়ে অন্ধ হয়ে যায় এবং এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে এক কূপের মধ্যে পড়ে যায়।