![]() |
ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ আলোচনা করো। অবশিল্পায়নের ফলাফল আলোচনা করো। |
ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ
ভারত থোক ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রফতানি : ইংল্যান্ডের কলকারখানার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাঁচামাল, যেমন- তুলো, নীল, চা, রেশম, কফি প্রভৃতি ইংল্যান্ডে পাঠাতে থাকে কোম্পানি। ফলে দেশীয় শিল্পের অবনতি দেখা দেয় কাঁচামালের অভাবে।
ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব: ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব ঘটলে সেখানকার কলকারখানায় উন্নতমানের অথচ সস্তা শিল্পসামগ্রীর উৎপাদন শুরু হয়। এই উন্নতমানের সস্তা শিল্পসামগ্রী ভারত ও বিশ্বের বাজার দখল করে ফেলে। এর ফলে দেশীয় শিল্পের অবক্ষয় ঘটে।
কোম্পানির অসম শুল্কনীতি: ইংরেজ কোম্পানি দেশীয় শিল্প ধ্বংস করার জন্য ভারতে উৎপাদিত শিল্পসামগ্রীর উপর অধিকহারে শুল্ক আরোপ করেছিল।
কোম্পানির অবাধ বাণিজ্যনীতি: ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান ঘটে ও অবাধ বাণিজ্যনীতি ঘোষিত হয়। ফলে ইংল্যান্ডের উৎপাদিত সামগ্রীতে ভারতের বাজার ভরে যাওয়ায় ভারতীয় শিল্পগুলি ধ্বংস হতে থাকে।
নির্যাতন ও বঞ্চনা: ঔপনিবেশিক শাসনকালে দাদন প্রথা, কমিশন প্রথা প্রভৃতির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের শোষণ, নির্যাতন এবং বঞ্চনায় দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভারতীয় শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ও ক্রেতার অভাব: ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রসারের ফলে দেশীয় রাজন্যবর্গের ও রাজকর্মচারীদের পতন ঘটে। ফলে ভারতীয় শিল্পে পৃষ্ঠপোষক ও ক্রেতার অভাব দেখা দেয়।
বিদেশি পণ্যের ব্যবহার ও কারিগরি অনুন্নয়ন : ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিদেশি পণ্যের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হয়। অন্যদিকে দেশীয় শিল্পের কারিগরি ক্ষেত্রে কোনোরকম উন্নয়ন না ঘটার কারণে দেশীয় শিল্প ধ্বংসের মুখে পতিত হয়।
অবশিল্পায়নের ফলাফল
কৃষির উপর চাপ বৃদ্ধি: শিল্পী ও কারিগরেরা কর্মচ্যুত হয়ে জমির উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এইভাবে কৃষিকাজে নিযুক্ত হওয়ার কারণে কৃষির উপর চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কাঁচামাল রফতানি : অবশিল্পায়ন ভারতকে নিছক কাঁচামাল রফতানিকারক এক দেশে পরিণত করেছিল। ইংরেজ বণিক সম্প্রদায় ও ইংরেজ সরকারের স্বার্থে বিপুল পরিমাণে কাঁচামাল উৎপাদন করতে গিয়ে ভারতীয়দের কৃষির উপর নির্ভরতা উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকে।
শহরগুলির জনবিরল অঞ্চলে পরিণত হওয়া: অবশিল্পায়নের ফলে ঢাকা, মুরশিদাবাদ, সুরাট প্রভৃতি ঘনবসতি ও শিল্পসমৃদ্ধ শহরগুলি জনবিরল অঞ্চলে পরিণত হয়।
ভারতীয় গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভাঙন: ভারতীয় গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভাঙন ধরেছিল অবশিল্পায়নের ফলে। কৃষির মরশুম ছাড়া অন্য সময়ে মানুষ কোনো কাজ না পাওয়ায় আয়ের গড় কমতে থাকে।
এ ছাড়া অবশিল্পায়নের ফলে দেশীয় হস্তশিল্পী ও কারিগরদের কর্মহীনতা, ভারতে বিলাতি পণ্যের আমদানি ইত্যাদি বিষয় ভারতকে পরিণত করে দরিদ্র এক দেশে।