![]() |
ঔপনিবেশিক সমাজে জাতি সংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো। |
জাতি সংক্রান্ত প্রশ্ন
জাতিগত ব্যবধানের প্রভাব
সদর্থক প্রভাব
যুক্তিবোধের বিকাশ: এশিয়া ও আফ্রিকা নিজ সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী হলেও তাদের সমাজ ছিল মধ্যযুগীয় কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। এই ঔপনিবেশিক মানুষগুলিকে উন্নত করার বিষয়কে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি মহান কর্তব্য বলে মনে করত। সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটে। ফলে পাশ্চাত্যের যুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভাবে উপনিবেশগুলিতে সমাজসংস্কার আন্দোলন ঘটে।
গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবোধের প্রসার: এশিয়া ও আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পূর্বে রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলবৎ ছিল। উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ফলে প্রাচ্যবাসীরা পাশ্চাত্যের সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমানাধিকার ইত্যাদি আদর্শ সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ পায়।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লাভ: ঔপনিবেশিকরা ব্যাবসাবাণিজ্যের সহযোগী হিসেবে উপনিবেশবাসীদের নিয়োগ করে, ফলে তারাও লাভবান হয়। বিভিন্ন সড়ক ও রেলপথ নির্মিত হয়। বহু বন্দর ও শহর গড়ে ওঠে এবং বিভিন্ন শিল্প বিকাশ লাভ করে। এর মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় এবং সূচনা হয় আধুনিক অর্থনীতির।
নঞর্থক প্রভাব
জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব: শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা তাদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে ঘোষণা করে যে, কালো চামড়ার অসভ্য মানুষকে শাসন করতে ঈশ্বর তাদের উপর পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করেছে। কবি রুডইয়ার্ড কিপলিং তাঁর শ্বেতাঙ্গদের বোঝা (The White Man’s Burden) নামক কবিতায় এই দায়িত্বের কথাই তুলে ধরেছেন।
অমানবিক আচরণ : শ্বেতাঙ্গ শাসক জাতি এবং কৃম্নাঙ্গ জনগণের মধ্যে সম্পর্ক ছিল শাসন ও শোষণের। কৃম্নাঙ্গদের স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। শ্বেতাঙ্গরা তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করে অমানবিক অত্যাচার চালাত। সিয়ার-উল-মুতাখরিন গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, ইংরেজরা ইচ্ছে করে ভারতীয়দের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলত। ইউরোপীয় ক্লাবের বাইরে বোর্ডে লেখা থাকত- কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ (Dogs and Indians are not allowed) |
দেশীয় ঐতিহ্যকে আক্রমণ: ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি নিজেদের ঐতিহ্য, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদিকে উন্নত বলে মনে করত। অনুরূপভাবে, উপনিবেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে তারা অনুন্নত অ্যাখ্যায় ভূষিত করে। উপনিবেশগুলি থেকে বহু মূল্যবান ঐতিহাসিক বস্তু তারা নিজ দেশে পাঠিয়ে নিজেদের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করলেও উপনিবেশগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিঃস্ব করে দিয়েছিল।
শ্রম রফতানি : জাতিগত ব্যবধানের একটি নির্লজ্জ দিক হল শ্রমের রফতানি। মূলত আফ্রিকা থেকে ক্রীতদাসদের রফতানি করা হত। ভারত, চিন ইত্যাদি উপনিবেশ থেকে ইউরোপীয়রা বহু চুক্তিভিত্তিক শ্রমিককে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দিত। ওইসব দেশে তাদের পশুর মতো খাটানো হত।