কম্পাস কীভাবে পঞ্চদশ শতকে সমুদ্র অভিযানের সহায়ক হয়েছিল

পঞ্চদশ শতকে সমুদ্র অভিযানে কম্পাসের ভূমিকা
(1) কম্পাসের উদ্ভবের ইতিহাস: স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্ত চুম্বক বা চুম্বকপাথরের উপর পৃথিবীর চুম্বকশক্তি একটি নির্দিষ্ট দিক অভিমুখে ক্রিয়া করে- মানুষের এরূপ পর্যবেক্ষণটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলির মধ্যে অন্যতম। সম্ভবত গ্রিসে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ বা সপ্তম শতকে চুম্বকের আকর্ষণী ধর্মের উদ্ভাবন ঘটে। অবশ্য চুম্বকের দিগ্দর্শন ধর্মের আবিষ্কারক চৈনিকরা। বস্তুত চুম্বকের এই ধর্মকে কাজে লাগিয়েই উদ্ভব ঘটে কম্পাস (Compass)-এর। তবে চিনারা জলপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিদেশিদের এই প্রয়োগের আবিষ্কর্তা বলে তুলে ধরেছে।
(2) কম্পাসের বিবর্তন: ত্রয়োদশ শতক নাগাদ ল্যাটিন ও মুসলিম বিজ্ঞানীদের রচনায় কম্পাসের উল্লেখ ও বর্ণনা মেলে। মোটামুটিভাবে এই শতক থেকেই ইউরোপীয় নাবিকগণ অল্প অল্প করে এই যন্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করে। চতুর্দশ শতকে ইতালীয় নাবিক ফ্লাভিও গিয়োজা (Flavio Gioja)-এর সময়কালে কম্পাসের বিশেষ উন্নতি সাধিত হয়। এই পর্বে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম-ঈশান-নৈঋত প্রভৃতি দিকগুলি চিহ্নিত করে কম্পাস কার্ডের প্রবর্তনও ঘটে। পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতকের সামুদ্রিক অভিযানগুলিতে চৈনিক-মুসলিম আবিষ্কার হিসেবে কম্পাসের ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছিল।
(3) নির্ভুল দিকনির্দেশ: কম্পাস ব্যবহারের পূর্বে নাবিকগণ ও নৌ অভিযাত্রীরা দিকনির্ধারণের জন্য সূর্য, তারার অবস্থান, পাখিদের ওড়ার পথ বিশ্লেষণ, বাতাসের প্রবাহ এসকল প্রাকৃতিক পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। পরবর্তীকালে কম্পাসের আবিষ্কার ও ব্যবহারের দরুন সমুদ্রে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নির্ভুল দিকনির্ধারণ সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল। কম্পাসে দিকনির্ণয়ের ক্ষেত্রে চৌম্বক সূচ ব্যবহৃত হয়।
(4) সাহসী অভিযানে সহায়তা: কম্পাসের উপর নির্ভর করেই অনুসন্ধানকারীরা কোনোরকম হারিয়ে যাওয়ার ভয় ছাড়াই অনেক দূরে ও অজানা অঞ্চলে অভিযান চালানোর সাহস পেয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ক্রিস্টোফার কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামার মতো দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের কথা বলা যায়, যারা কম্পাসের উপর ভিত্তি করে উপকূল অঞ্চল ছাড়িয়ে নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন।
(5) উন্নত মানচিত্র তৈরিতে সাহায্য: কম্পাসের মাধ্যমে নাবিকগণ নির্ভুলভাবে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম দিকনির্ধারণ করতে পারতেন। নতুন নতুন অঞ্চলগুলির এরূপ নির্ভুল দিকনির্দেশ উন্নত মানচিত্র তৈরির ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। ভবিষ্যৎ সমুদ্রযাত্রার ক্ষেত্রেও যা ছিল সমানভাবে কার্যকরী। সবশেষে বলা যায় যে, কম্পাসের ব্যবহারের ফলে সমুদ্রে যাতায়াত নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ হওয়ায় ভাস্কো-ডা-গামা, কলম্বাস, ম্যাগেলান প্রমুখের দ্বারা যুগান্তকারী ভৌগোলিক আবিষ্কার করা সহজতর হয়েছিল।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর