গণনাট্য হিসাবে ‘আগুন’ নাটকের সার্থকতা কতখানি তা বিশ্লেষণ করো

গণনাট্য হিসাবে ‘আগুন’ নাটকের সার্থকতা কতখানি তা বিশ্লেষণ করো।

গণনাট্য হিসাবে 'আগুন' নাটকের সার্থকতা কতখানি তা বিশ্লেষণ করো
গণনাট্য হিসাবে ‘আগুন’ নাটকের সার্থকতা কতখানি তা বিশ্লেষণ করো

‘ইতিহাসের দাবিতেই গড়ে উঠেছিল নয়া সাংস্কৃতিক আন্দোলন।’ বাংলা নাটকে রামনারায়ণ তর্করত্ন, দীনবন্ধু মিত্র, মধুসূদন দত্ত-এর ঐতিহ্যকে স্মরণ করেও বলা যায় নতুন যুগের দর্শনভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন বিজন ভট্টাচার্য। ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পীসংঘের অঙ্গ হিসাবে গণনাট্যের আবির্ভাব ঘটে।

নাটক শুধু বিনোদন বা রুজিরোজগারের মাধ্যম নয়। মানুষের প্রতি কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করে, তাদের চেতনার উজ্জীবন ঘটাতে গণনাট্যের ভূমিকা ছিল গগনস্পর্শী।

গণনাট্যের বৈশিষ্ট্য

(ক) উপেক্ষিত, অবহেলিত প্রান্তিক মানুষের পদচারণা।

(খ) ব্যক্তিচরিত্রের বদলে সমষ্টি-চরিত্রের প্রাধান্য এবং সেই শ্রেণির প্রতিনিধি নির্মাণ।

(গ) বস্তুতান্ত্রিক জীবনভাবনা ও শ্রেণি-দ্বন্দ্বের চিত্রপ্রদর্শন।

(ঘ) জীবনমুখী নাট্যধারার অনুপ্রবেশ ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শ।

(ঙ) সাধারণ মঞ্চে উপস্থাপনা।

(চ) নাটক এখানে গণচেতনা ও গণজাগরণের হাতিয়ার। উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির আলোকে ‘আগুন’ নাটকের সার্থকতা বিচার্য- পঞ্চাশের মন্বন্তরের সংকটময় পরিস্থিতে বাংলার নিরন্ন কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ উপেক্ষিত অবহেলিত নিম্নশ্রেণির মানুষ-যারা এতদিন বাবুদের চাকরবাকরের চরিত্রে শোভা পেত, কিংবা বিরতির ফাঁক পূরণে সাহায্য করত; তারাই মঞ্চে এল নিজেদের কথা বলার জন্য। জীবনের বাস্তব সমস্যাকে কেন্দ্র করে কাহিনি যেমন আবর্তিত তেমনই সমষ্টি চরিত্রের প্রাধান্য দেখা গেল। সেই অর্থে ‘আগুন’ সত্যিই গণজীবনের প্রতিচ্ছবি। সাধারণ মানুষের জীবন উঠে এল সবজি বিক্রেতা, কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত চরিত্রগুলিতে। তাই তাদের পোশাক-পরিচ্ছদও সাধারণ। ব্যয়বহুল মঞ্চসজ্জার পরিবর্তে ‘স্রেফ চট টাঙিয়ে অভিনয়’ প্রদর্শন।

আকালের পটভূমিতে কালোবাজারি ও মুনাফাবাজ মজুতদারেরা ক্ষুদ্র • স্বার্থসিদ্ধিতে উদ্‌গ্রীব। তারা কৃত্রিমভাবে খাদ্যাভাবকে আরও সংকটময় করে : তুলেছিল-‘যে রক্ষক সেই হল গিয়ে তোমার ভক্ষক।’ এই বস্তুতান্ত্রিক জীবনভাবনা ও শ্রেণিবৈষম্য ‘আগুন’ নাটকে প্রতিফলিত।

ভয়ানক, বীভৎস, প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক দুর্বিপাকের কাছে লড়াকু মানুষগুলি নতিস্বীকার করেনি, মুখ থুবড়ে পড়েনি। বরং নবচেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও সংগ্রামের মাধ্যমে, শপথের অঙ্গীকারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে-

“যথেষ্ট তো হয়েছে। এখন বাঁচতে হবে।”
-তাই গণনাট্য হিসাবে ‘আগুন’ সার্থক ও যথাযথ।


আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো

Leave a Comment