![]() |
গণসংগীত বলতে কী বোঝ? বাংলা গণসংগীতের ধারাটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। |
গণসংগীত কী
উদ্ভব ও ইতিহাস
বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি কারণে বিশ শতকের পরের দশকের বাংলা এক উত্তাল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বাংলা গানেও এই অস্থির সময়ের প্রভাব পড়ে। শোষিত জনগণের জীবনযন্ত্রণা স্থান করে নেয় সংগীতেও। এই প্রেক্ষাপটে পাশ্চাত্য সংগীত, পশ্চিমের বৃন্দগান, দেশজ সংগীত এবং লোকসংগীতের বিভিন্ন ধারার সমন্বয়ে গণসংগীতের জন্ম হয়। আর বিংশ শতকের চারের দশকেই বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী শিল্পীরা নতুন ধরনের এই গানকে বোঝাতে গণসংগীত শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। ‘হই হই হই জাপান ওই, আসিছে ওই’, ‘ঢেউ উঠেছে কারা টুটছে’ কিংবা ‘জাগো দেশবাসী, জাগোরে কিষান’ প্রভৃতি গান সেসময় জনমানসে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল।
বাংলা গণসংগীতের ধারা ও এতিহ্য
বাংলা গণসংগীতের ক্ষেত্রে যে নামগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তার মধ্যে রয়েছে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, বিজন ভট্টাচার্য, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী, অনল চট্টোপাধ্যায়, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। বাংলা গানের ইতিহাসে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ‘নবজীবনের গান’ আজও অবিস্মরণীয় হয়ে রয়ে গেছে। এ ছাড়া সলিল চৌধুরীর সুরে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’, সত্যেন্দ্রনাথের ‘পালকির গান’ কিংবা তাঁর নিজেরই কথায় ‘কোনো এক গাঁয়ের বধূ’ প্রভৃতি গানগুলি গণসংগীত না-হলেও সেই ধারারই সার্থক সম্প্রসারণ। এখানে বলা উচিত সেসময়ে গঠিত ভারতীয় গণনাট্য সংঘের পক্ষ থেকে গণসংগীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, হেমাঙ্গ বিশ্বাস-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গণসংগীতের ধারাটি ক্ষীণ হয়ে এলেও; পরবর্তীকালে অজিত পাণ্ডে, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, বিপুল ও অনুশ্রীরা এই ধারাটিকে বহমান রাখার প্রয়াসী হয়েছিলেন।