চুয়াংৎসি সম্পর্কে কী জানো

চুয়াংৎসি
তাও দর্শন বা তাওবাদ মানুষকে ঋত সত্যের পথ দেখায়। তাওকে আশ্রয় করে কর্ম করলে সন্ধান মেলে আদিতত্ত্বের। এই দর্শনের একজন পুরোধা দার্শনিক ছিলেন চুয়াংৎসি (আনুমানিক ৩৬৯-২৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। তিনি লাওৎসির পরবর্তীতে তাও দর্শনকে শাখাপ্লবিত করে এক মহীরুহে পরিণত করেছিলেন।
(1) পরিচয়: চিনের সুং প্রদেশে খি-ইউয়ান নগরে চুয়াংৎসি জন্মগ্রহণ করেন। জানা যায় যে, তিনি নাকি দুবার উচ্চরাজপদ গ্রহণের প্রস্তাবকে অবহেলাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর দর্শনবোধের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, সভ্যতার মুখোশ পরিত্যাগ করে প্রকৃতির জীবনে প্রত্যাবর্তন।
(2) মতাদর্শ: গুরু লাওৎসির মতোই চুয়াংৎসিও সকলপ্রকার প্রশাসনের বিরোধিতা করেছেন। রাজা ও রাজ্যপালদের গুণাবলি তাঁর কাছে ছিল তস্করবৃত্তির সমান। চুয়াংৎসি মনে করতেন, যদি কোনও প্রকৃত দার্শনিকের হাতে রাজ্যের শাসনভার ন্যস্ত হয়, তবে তিনি নিজে কোনও কাজ না করে প্রজাদের ইচ্ছানুযায়ী স্বায়ত্তশাসন গঠন করার স্বাধীনতা দেবেন। চিনের সত্যযুগে এইরূপ স্বাধীনতাই ছিল। সেখানে সকল জীবের মর্যাদা ছিল সমান। চুয়াংৎসি কৃত্রিম সভ্যতা, বিজ্ঞানে আবিষ্কৃত যন্ত্রাদির প্রতিও ঘোর অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। কনফুসিয়াসের নীতির সঙ্গে তাঁর ছিল তীব্র বিরোধিতা।
(3) রচনা: চুয়াংৎসি ছিলেন চৌ যুগের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক। তাঁর লেখা তাও তত্ত্বের বিস্তারিত ভাষ্য গ্রন্থটি (Zhuangzi) তাওবাদীদের কাছে আজও সমাদৃত।
(4) অবদান: চুয়াংৎসির রচনাগুলি ছিল চিনের প্রচলিত ব্যাবহারিক জীবনদর্শনের বিরোধী। বাহ্যিক লোকাচার ও নীতিধর্মের বাইরেও মানুষের একটা জীবন আছে, যেখানে তার অন্তরাত্মা সামাজিক বন্ধনের ঊর্ধ্বে মুক্তির উদ্দেশ্যে ধাবমান হতে চায়- চুয়াংৎসির দর্শন সেই কথাই উপলব্ধি করায়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর