![]() |
জনজীবনে মোবাইল ফোন ও তার প্রভাব রচনা |
ভূমিকা
বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী মোবাইল ফোনের ব্যবহার সর্বজনবিদিত। পৃথিবীর মোট লোকসংখ্যার মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ এই ফোন ব্যবহার করেন এবং বর্তমানে ভূমিকা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫.৬ মিলিয়ন। মোবাইল ফোন ছাড়া এমন কোনো ইলেকট্রনিক পণ্য নেই যা এত মানুষ ব্যবহার করে। এই ফোন আজ মানুষের যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। তবে এর সুফল যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কুফল। মানুষকে তা যেমন যান্ত্রিক করে তুলেছে, তেমনি এর অস্বাস্থ্যকর দিকটিও প্রকট হয়ে উঠছে।
ইতিহাস
প্রথম মোবাইল টেলিফোন কলটি করা হয় ১৭ই জুন, ১৯৪৬-এ আমেরিকাতে, বেল পদ্ধতির মাধ্যমে। ১৯৫৬তে সুইডেনে গাড়ি থেকে ফোন করা হয় যার নাম হয় এম. টি. এ. (MTA)-যা একটি টিউব-এর মাধ্যমে সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়, যার ওজন ছিল প্রায় ৪০ কেজি। মার্টিন কুপার, যিনি মোটোরোলা সেলুলার ফোনের গবেষক তিনি হ্যান্ড ফোনের ব্যবহার শুরু করলেন এপ্রিল ৩, ১৯৭৩-এ। এরপর ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ১৯৭৯-তে জাপানের টোকিও শহরে শুরু হয়। ১৯৮০-তে আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকো এবং ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনে তা ছড়িয়ে পড়ে। আর ১৯৮৩-তে ১জি এবং ১৯৯১-তে ২জি সেলুলার ফোন চালু হয়, যথাক্রমে আমেরিকা ও ফিনল্যান্ডে। ২০০১-এ জাপানে ৩জি নেটওয়ার্ক চালু হয় এবং ২০১১-তে দক্ষিণ কোরিয়া ৪জি বাজারে চালু করেছে।
উপাদান
মোবাইল ফোনে সাধারণত যে উপাদানগুলি থাকে তা হল: (ক) ব্যাটারি, (খ) কিপ্যাড, (গ) মেসজ পাঠাবার ব্যবস্থা, (ঘ) সিম কার্ড প্রভৃতি। ১৯৯২-তে মোবাইল মেসজ পাঠাবার প্রযুক্তি চালু হলেও একটি ফোন থেকে আর একটি ফোনে মেসজ পাঠাবার সুযোগ গড়ে ওঠে ১৯৯৩-এ ফিনল্যান্ডে। সিম (Subscriber Identity Module or SIM) কার্ড-এর চিপটি ব্যাটারির নীচে রাখা হয় এবং প্রয়োজনে তা বারবার পরিবর্তন করা যায়। বর্তমানে বিচিত্র ধরনের উপাদানে তৈরি হচ্ছে মোবাইল ফোন-যার মধ্যে রয়েছে ফটো তোলার ব্যবস্থা, বক্তব্য নথিবদ্ধ করার ব্যবস্থা, ইন্টারনেটের ব্যবস্থা, খেলাধুলার ব্যবস্থা, ব্যবসায়িক প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান, গান শোনার ব্যবস্থা, ব্লুটুথ-এর প্রযুক্তি প্রভৃতি।
প্রস্তুতকারক সংস্থা
মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির মধ্যে ২০১০-এর আগে পর্যন্ত নোকিয়া-ই ছিল সবার উপরে। কিন্তু নোকিয়া কোম্পানি বিশ্বে যে ৫৬ শতাংশ বাজার পেয়েছিল তা বর্তমানে নেমে এসেছে ৩১ শতাংশে। কেননা এই কোম্পানির বেশিরভাগ শেয়ার চিন ও ভারতের ভেন্ডারদের দখলে। বর্তমানে স্যামসং নোকিয়াকে হারিয়ে ২০১২-তে প্রস্তুতকারক সংস্থা হিসেবে সর্বোচ্চ বাজার দখল করে ফেলেছে।
ব্যবহার
মোবাইল ফোনের ব্যবহারের পরিধি যথেষ্ট বেড়েছে। মানুষের জীবনে ব্যস্ততা বেড়েছে, বেড়েছে স্বাচ্ছন্দ্য এবং একে কেন্দ্র করেই মোবাইল ফোনের রমরমা। মানুষ আজ নানা কারণে পরিবার কিম্বা আত্মীয়-স্বজন থেকে বাইরে থাকে। তাই এই দূরত্ব ঘোচাবার ক্ষেত্রে এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইলের গুরুত্ব সর্বজনস্বীকৃত। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে মোবাইল ফোন বিশেষ কার্যকরী। আবার কেউ ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য একাধিক মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখেন। কেউ কেউ গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য একের অধিক মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন-তা ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক যে কারণেই হোক না কেন। জরুরি প্রয়োজনে মোবাইলের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত। ল্যান্ড লাইন ফোনের চেয়ে মোবাইল ফোন অনেক সহজ ও দ্রুত পরিষেবা দেয় এবং তা যে কোনো জায়গায় পেতে অসুবিধাও নেই। বহন করাও সুবিধে। পকেটে রেখে দিলেই হল। গ্রামাঞ্চলে এখন প্রায় সব বাড়িতেই মোবাইল ফোন আছে। মোবাইল ফোনের খরচ এখন সাধারণের নাগালের মধ্যে এবং এর উপযোগিতাও যথেষ্ট, তাই ব্যবহার ঊর্ধ্বমুখী।
কুফল
উপসংহার
সুতরাং মোবাইল ফোনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ব্যবহারকারীরা যদি সচেতন না হন, মোবাইলের ব্যবহার কীভাবে কখন কেন করা উচিত তা যদি ভুলে যান, একে যদি দোষগুণ বিচার না করে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয় তাহলে তার কুফলের মাশুল তো গুনে দিতেই হবে। এজন্য চাই সচেতনতা ও অহেতুক পরানুকরণ থেকে নিজেকে মুক্ত করা।