![]() |
জনশ্রুতি বলতে কী বোঝো? ইতিহাস পাঠে জনশ্রুতির গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো। |
জনশ্রুতি
জনশ্রুতির গুরুত্ব
প্রথমত, ইতিহাস ও জনশ্রুতির বিষয়বস্তু এক- মানুষ। তবে দুটির মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, দুটি ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর উপস্থাপন করা হয় ভিন্ন ভিন্নভাবে। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়েই লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারা দেখতে পাওয়া যায় এবং এগুলির সঙ্গে ইতিহাসের পারস্পরিক আদানপ্রদান ও লেনদেন ঘটে। অনেক বিষয়ই নানান পর্যায়ে জনশ্রুতি থেকে মূলধারার ইতিহাসের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক কালে কিছু গবেষক দেখিয়েছেন যে, জনশ্রুতির উপাদান ব্যবহার করে ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ করা সম্ভবপর হয়। এই বিষয়টি ‘Historical Reconstruction Theory’ বা ইতিহাস পুনর্নির্মাণ তত্ত্ব নামে পরিচিত। জর্জ লরেন্স এই তত্ত্ব প্রয়োগ করে ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস রচনা করেন।
তৃতীয়ত, মূলধারার ইতিহাস থেকে অনেকক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। সমাজের নিম্নবর্গীয়দের ইতিহাস রচনার জন্য উপাদানের অভাবের কারণে আমাদের জনশ্রুতির উপর নির্ভর করতে হয়।
চতুর্থত, ক্ষেত্রবিশেষে প্রথাগত ইতিহাসের উপাদান থেকে একপেশে দৃষ্টিকোণ গড়ে ওঠে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় লেখকরা যেভাবে ভারতের ইতিহাসকে লিখিতরূপে উপস্থাপন করেছেন, সেই উপস্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিমুক্ত নয় এবং তা সকলের মনের মতো নাও হতে পারে। তাই ইতিহাস রচনার কাজে ইংরেজদের সরকারি নথিপত্রের উপর পুরোপুরি নির্ভর না করে যদি জনশ্রুতি থেকেও প্রাপ্ত তথ্য আহরণ করা হয়, তাহলে ইতিহাসচর্চা নিরপেক্ষ হতে পারে।