জাতিসঙ্ঘের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব

জাতিসঙ্ঘের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব – প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকরা পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ও শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এভাবেই গড়ে ওঠে ‘জাতিসঙ্ঘ’ বা ‘লিগ অব নেশনস্’।
 
সুস্বাগতম প্রিয় শিক্ষার্থী। Prayaswb-এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে জাতিসঙ্ঘের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় জাতিসঙ্ঘের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব পড়ে নেওয়া যাক।

জাতিসঙ্ঘের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব

জাতিসঙ্ঘের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব
জাতিসঙ্ঘের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব

জাতিসঙ্ঘের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা সমগ্র বিশ্বে শান্তির জন্য এক প্রবল ব্যাকুলতা সৃষ্টি করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকরা পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ও শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এভাবেই গড়ে ওঠে ‘জাতিসঙ্ঘ’ বা ‘লিগ অব নেশনস্’। মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন-কে ‘জাতিসঙ্ঘের জনক’ বলা হয়। তাঁর বিখ্যাত ‘চোদ্দো দফা শর্ত’-র (৮ই জানুয়ারি, ১৯১৮ খ্রিঃ) শেষ দফায় জাতিসঙ্ঘের কথা বলা হয়েছে। লিগের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা দিবস হল ১৯১৯ সালের ২৮ এপ্রিল। এর প্রথম অধিবেশন বসে ১৯২০ সালের ১০ জানুয়ারি। এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি হলেন উড্রো উইলসন।

জাতিসঙ্ঘের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য

জাতিসঙ্ঘ বা ‘লিগের চুক্তিপত্রে’ জাতিসঙ্ঘের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের বিশদ বিবরণ আছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল যুদ্ধের পরিবর্তে আপস-মীমাংসা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা। লিগের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলি প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তারা পারস্পরিক সহযোগিতার দ্বারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখবে।

জাতিসঙ্ঘের গঠন

  • ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে লিগের প্রথম অধিবেশনে এর সদস্যসংখ্যা ছিল ৪০। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে হয় ৬০। ১৯৩৯-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে এর সদস্যা-সংখ্যা হ্রাস পেয়ে হয় ৪৬।
  • একটি সাধারণ সভা, একটি পরিষদ বা কাউন্সিল ও একটি সচিবালয় নিয়ে জাতিসঙ্ঘ গঠিত হয়। জাতিসঙ্ঘের প্রধান কার্যালয় বা সদর দপ্তর স্থাপিত হয় নিরপেক্ষ দেশ সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভা শহরে। এ ছাড়া, এর অধীনে একটি আন্তর্জাতিক বিচারালয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা ছিল। এ ছাড়া, আরও কিছু উন্নয়নমূলক সংস্থা এর অধীনে ছিল। 
  • লিগের কার্যাবলি পরিচালনা এবং সাধারণ সভা ও লিগ পরিষদের সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করার জন্য একজন মহাসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেলের অধীনে লিগের একটি সচিবালয় (Secretariat) ছিল। লিগের প্রথম মহাসচিব ছিলেন স্যার এরিক ড্রমন্ড।

জাতিসঙ্ঘের কৃতিত্ব

জাতিসঙ্ঘ তার উদ্দেশ্যপূরণে ব্যর্থ হলেও তার কৃতিত্বকে অস্বীকার করা যায় না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও রণক্লান্ত পৃথিবীতে শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ বিসম্বাদের মীমাংসা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসঙ্ঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। অন্তত ১৯২০-র দশকে জাতিসংঘ বেশ কয়েকটি বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছিল। বিশ্বের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থিক উন্নয়নেও এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শ্রমিক কল্যাণ, দাসপ্রথার উচ্ছেদ, শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ প্রভৃতি কাজেও জাতিসঙ্ঘের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। সবশেষে বলা যায় যে, জাতিসঙ্ঘই প্রথম আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির ধারণাটিকে জনপ্রিয় করে তোলে। এই আদর্শেই অনুপ্রাণিত হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ’

Leave a Comment