জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কীভাবে প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়

জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কীভাবে প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়

জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কীভাবে প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কীভাবে প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কীভাবে প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়

ভূমিকা

বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ও প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতি আধুনিক যুগের প্রতিটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছিল। এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হল জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের অগ্রগতি শিল্প, বাণিজ্য, সামরিক ক্ষেত্র-সব কিছুকেই প্রভাবিত করেছিল।

(1) সহায়ক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার: খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে কম্পাস ও চতুর্দশ শতকে কম্পাস আবিষ্কার অজানা সমুদ্রযাত্রাকে কিছুটা সহজ করে দিয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র (১৬১০ খ্রিস্টাব্দ) আবিষ্কার, যার দ্বারা নাবিকরা জলপথে যাত্রাকালীন বহুদুরের দৃশ্য দেখার সুযোগ পান।

(2) মানচিত্র তৈরি: মানচিত্র হল পথনির্দেশকারী একটি মাধ্যম। যে-কোনো যাত্রায় এটি ব্যবহৃত হয়। চতুর্দশ শতক থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি উন্নত মানচিত্র তৈরি করেন, যা সামুদ্রিক অভিযানে বিশেষ গতি এনেছিল। ম্যাগেলান, পীরি-দ্য-রাইস, ফান-দেন-ব্রুক, জ্যাভ-দ্য-বারোস প্রমুখ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

(3) হাল ও মাস্তুলের ব্যবহার: জাহাজে হাল, মাস্তুল, পাল ও দড়িদড়া ব্যবহারের প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হলে জাহাজের গতি বৃদ্ধি পায়। সেইসঙ্গে জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণসহ আরও বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি জাহাজ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়।

(4) ইংল্যান্ডে জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার: টিউডর বংশের রাজা সপ্তম হেনরি পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে সভরেন ও রিজেন্ট নামে দুটি জাহাজ নির্মাণ করেন। অষ্টম হেনরিও নতুন নতুন জাহাজ নিয়ে নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। ব্যবসায়ী হকিন্স রিভেঞ্জ নামে একটি বড়ো জাহাজ তৈরি করেন, যা গভীর সমুদ্রে যাতায়াতের উপযোগী এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন ছোটো জাহাজও তৈরি করেন।

(5) যুদ্ধজাহাজ তৈরি: ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ১৫০০ টন ওজনের একটি বড়ো ও উন্নত যুদ্ধজাহাজ তৈরি হয় যা গ্রেট হ্যারি নামে খ্যাত। এটি সহ অন্যান্য যুদ্ধজাহাজে কামান বসানোর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় এই সময় থেকে। ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে রানি এলিজাবেথের নৌবাহিনীতে ২৪টি যুদ্ধজাহাজ ছিল।

(6) ক্যারাভেল ও ক্যারাক : আইবেরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলের নাবিকরা ক্যারাভেল নামে একপ্রকার ত্রিকোণাকৃতি হালকা পোতাশ্রয় আবিষ্কার করে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে, যা গভীর সমুদ্রে যাতায়াতে সুবিধার সৃষ্টি করে। এর পরবর্তীকালে ক্যারাক নামে ভারী জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়। এ ছাড়া ‘ক্লিঙ্কার-বিল্ট-শিপ’ নামে এক ধরনের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। উত্তর ও পশ্চিম ইউরোপে যা জাহাজ চলাচলে সাবলীলতা আনে।

মূল্যায়ন

ইউরোপের প্রায় সব দেশই পঞ্চদশ-সপ্তদশ শতকে জাহাজ (পণ্যবাহী ও সামরিক উভয়ই) নির্মাণ শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে যা সার্বিকভাবে দেশগুলির রাজনীতি ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment