টীকা লেখো: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্নরূপে রপ্তানিকারক ভারত থেকে আমদানিকারক ভারত

টীকা লেখো: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্নরূপে রপ্তানিকারক ভারত থেকে আমদানিকারক ভারত
টীকা লেখো: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্নরূপে রপ্তানিকারক ভারত থেকে আমদানিকারক ভারত।

ভূমিকা

শিল্পবিপ্লব ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশ বিস্তার ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। ধীরে ধীরে ইংল্যান্ড হয়ে উঠেছিল বিশ্বের প্রধান সাম্রাজ্যবাদী দেশ। ইংল্যান্ডের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অধিকাংশই চলত ভারতের সঙ্গে এবং একারণেই ভারত ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন।

আমদানিকারক ভারত

অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারত ছিল রপ্তানিকারী একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং এসময়ে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একচেটিয়া বাণিজ্যের মাধ্যমে ভারতীয় দ্রব্যসামগ্রী ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। বিভিন্ন কারণে ভারতের এই অনুকূল রপ্তানি-বাণিজ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল এবং রপ্তানিকারী দেশ ভারত আমদানিকারী দেশে পরিণত হয়েছিল, যেমন:

[১] বিদেশি বণিক সংগঠনের চাপ : ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্য অধিকারের বিলোপ ঘটিয়ে অবাধ বাণিজ্য নীতি গ্রহণের জন্য ইংল্যান্ডের বণিক সংগঠনগুলি ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল।

[২] শিল্পবিপ্লব : শিল্পবিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে উৎপন্ন বিপুল পরিমাণ পণ্য ভারতের বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করার জন্য সেদেশের শিল্পপতিরা ব্রিটিশ সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ দিতে শুরু করেছিল।

[৩] ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট প্রবর্তনের মাধ্যমে ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার রদ করা হয় এবং অবাধ বাণিজ্য নীতি চালু করা হয়। এর ফলে ব্রিটেনের কলকারখানায় তৈরি পণ্যসামগ্রীতে ভারতের বাজার ছেয়ে যায়।

[৪] সরকারের অসম শুল্ক নীতি: ইংল্যান্ডে উৎপন্ন পণ্যসামগ্রী যাতে ভারতের বাজারে অবাধে আসতে পারে সেজন্য ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমদানি শুল্ক হ্রাস করে এবং অন্যদিকে অষ্টাদশ শতকের শেষ ও উনিশ শতকে ব্রিটেনে ভারত থেকে রপ্তানি করা পণ্যের উপর উঁচু হারে শুল্ক চাপিয়ে দেয়। ফলে ভারতে ব্রিটেনের রপ্তানিজাত পণ্য সম্ভারের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল শতকরা নয় ভাগ। বিশ বছরের মধ্যে তার পরিমাণ দাঁড়াল শতকরা বারো ভাগ।

Leave a Comment