![]() |
টীকা লেখো: মরক্কো সংকট। |
ভূমিকা
বিশ শতকের প্রথম দশকে ইউরোপের রাজনীতিতে সংকটের মেঘ জমতে শুরু করে। আফ্রিকা মহাদেশে মরক্কো এমনই একটি সংকটের বলয় পরিণত হয়।
প্রেক্ষাপট
(১) ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে আফ্রিকায় বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হয়। মরক্কোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি এখানে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে উদ্যত হয়। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল এই দেশ। (২) ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ইঙ্গ-ফরাসি মৈত্রী-চুক্তি অনুসারে ফ্রান্স মরক্কোতে বিশেষ অধিকার পায়। এই পরিস্থিতিতে জার্মানি মরক্কোতে নিজের প্রভাব বিস্তারে ব্যগ্র হয়ে ওঠে।
সমস্যার পর্যায়
প্রথম পর্যায় : জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম মরক্কোর তাহ্যিয়ান বন্দরে এসে হাজির। হলেন। তিনি নিজেকে মুসলমানদের রক্ষাকর্তা বলে ঘোষণা করলেন। পাশাপাশি তিনি মরক্কোর আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেন। কাইজারের এই ঘোষণার ফলে অশান্তকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মরক্কো-সমস্যা সমাধানকল্পে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ এক আন্তর্জাতিক বৈঠকে মিলিত হতে রাজি হন এবং ফলে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে আলজিসেরাসে এক সম্মেলন বসে। এই সম্মেলনে স্থির হল, (১) মরক্কোতে কোনো রাষ্ট্রের একাধিপত্য থাকবে না এবং (২) মরক্কোর শান্তিরক্ষার জন্য ফ্রান্স ও স্পেনকে বিশেষ অধিকার দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়
কিন্তু আলজিসেরাসের সন্ধির ফলে মরক্কোতে ফ্রান্সের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু জার্মানি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর রাজধানী ফেজ শহরে এক উপজাতি বিদ্রোহ শুরু হয়। এর ফলে কিছু ইউরোপীয়দের প্রাণহানি ঘটে। জার্মানির স্বার্থ রক্ষার অজুহাতে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে জার্মান সম্রাট কাইজার আগাদির বন্দরে প্যান্থার নামে একটি গানবোট পাঠিয়ে মরক্কোতে ফ্রান্সের একতরফা আধিপত্য বিনাশ করতে উদ্যত হন। কিন্তু ব্রিটেন ফ্রান্সের পক্ষ অবলম্বন করার ফলে জার্মানি বাধ্য হয়ে পিছিয়ে আসে এবং ফ্রান্সের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
উপসংহার
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত মরক্কোর দ্বিতীয় সন্ধি অনুসারে জার্মানি মরক্কোতে ফ্রান্সের আধিপত্য স্বীকার করে নেয়। এভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মরক্কো সমস্যার সমাধান ঘটে এবং ফরাসি-জার্মান যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর হয়।