তাওবাদের সীমাবদ্ধতাগুলি উল্লেখ করো

তাওবাদের সীমাবদ্ধতা
চিনা দর্শনের একটি অন্যতম প্রধান ধারা হল তাওবাদ। তাওবাদের কিছু সাধারণ সীমান্ধতা হল-
(1) অস্পষ্টতা বা বিমূর্ততা: তাওবাদের বেশকিছু ধারণাই অস্পষ্ট বা বিমূর্ত। যেমন- তাও বা দাও (পথ), উ-ওয়েই (কর্মহীন কর্ম)-এর ধারণাগুলি অনেকটাই অস্পষ্ট। এগুলি সঠিকভাবে বোঝা ও তা প্রয়োগ করা যথেষ্ট কঠিন। কারণ এই বিষয়গুলি কোনও সরাসরি নির্দেশিকা প্রদান করে না।
(2) বেপরীত্যের অভাব: তাওবাদে বৈপরীত্যের যথা- ভালোমন্দ বা আলো-অন্ধকারের মতো দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে। এর ফলে এই দর্শন মানুষের কাছে জীবনের বাস্তবতার সঠিক প্রতিফলন হতে পারেনি।
(3) কর্মহীন কর্মের সমালোচনা: তাও দর্শনে উ-ওয়েই বা কর্মহীন কর্মের ধারণাটি বিশেষজ্ঞদের কাছে সমালোচিত হয়েছে। কারণ তাঁদের মতে, এই ধারণা মানুষকে কর্মহীনতার দিকে ঠেলে দেয়। বিশিষ্ট চিনা দার্শনিক হান ফেই (Han Fei) মনে করেন যে, তাওবাদীরা প্রকৃতপক্ষে অলস ও নিষ্ক্রিয়। সমাজে এদের কোনও অবদান নেই।
(4) ব্যাবহারিক বাস্তবতা থেকে দূরত্ব: তাওবাদের অন্যতম মুখ্য কথা হল, প্রাকৃতিক ও সরল জীবনযাপন। কিন্তু আধুনিক সমাজের জটিলতার কারণে তাওবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলা হয়ে পড়ে কঠিন। তাও দর্শনের এই তত্ত্বটি আসলে প্রায়োগিক দিক থেকে দুর্বল। ব্যাবহারিক বাস্তবতা থেকে এই দূরত্ব তাওবাদের অপর এক সীমাবদ্ধতা। রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরোধী: ‘তাও’ ধারণা রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরোধিতা করে। তাই বিভিন্ন সমালোচকেরা মনে করেন যে, তাওবাদ রাষ্ট্রীয় অস্থিরতার জন্য দায়ী হতে পারে।
মূল্যায়ন
তবে সমালোচনা সত্ত্বেও তাওবাদের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাওবাদে শত্রু-মিত্রে সমদৃষ্টি এবং অহিংসার জয়গান গাওয়া হয়েছে। বাহুবল দ্বারা দিগ্বিজয় তাওয়ের পথ নয়। বরং মৈত্রী, করুণা ও প্রেম দ্বারা অহিংসার দিকে যাত্রাই হল প্রকৃত যাত্রা। ঘৃণার প্রতিদানে দাক্ষিণ্য-এই হল তাওবাদের সারমর্ম।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর