তাওবাদ চিনা সংস্কৃতিকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে তা সংক্ষেপে আলোচনা করো

চিনা সংস্কৃতিতে তাওবাদের প্রভাব
প্রাচীন চিনে কনফুসীয় মতধারার সমান্তরালে বিকশিত হয়েছিল তাওবাদ। লাওৎসি কর্তৃক প্রবর্তিত এই তাওবাদ চিনা সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনৈতিক চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাওবাদকে কেন্দ্র করে যে তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা প্রসারিত হয়েছে চিন-সহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। তাওবাদের প্রভাবকে বেশ কয়েকটি দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। যথা-
(1) ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রভাব: তাওবাদ চিনে একটি অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কাজেই এর বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, ধ্যান, ঐতিহ্যবাহী প্রথা ইত্যাদি চিনা সমাজে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। তাওবাদে মনে করা হত, মানবজীবন এবং প্রকৃতি আসলে একটি নিরবচ্ছিন্ন চক্রেরই অংশ। এর সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধান করলে জীবনে সুখলাভ সম্ভব।
(2) দর্শনে প্রভাব: তাও আদর্শ অনুযায়ী, বিশ্বে সমস্তকিছুই একটি নির্দিষ্ট পথে (তাও) চলে। মানুষ যদি এর সাথে ভারসাম্য রেখে জীবনযাপন করে, তাহলে সে সাফল্য অর্জন করবে। এই চিন্তাধারা মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং আত্মোন্নতির ইচ্ছাকে উৎসাহিত করেছিল।
(3) শিল্পকলা: তাওবাদ চিনা চিত্রকলা, সংগীত, কবিতা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক ধারাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। তাও ধর্মমতে প্রকৃতির সাথে যেভাবে মানুষের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা চিনের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
(4) সাহিত্যে প্রভাব: চিনা সাহিত্যের বিকাশে তাও দর্শনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ প্রসঙ্গে লাওৎসির লেখা তাও-তে-চিং এবং চুয়াংৎসির গ্রন্থের কথা উল্লেখযোগ্য।
(5) রাজনীতিতে প্রভাব: তাওবাদী মতাদর্শ প্রাচীন কালে চিনের রাজনীতি তথা রাষ্ট্রনীতিকেও প্রভাবিত করেছিল। চিনের অনেক শাসকই ছিলেন তাওবাদের অনুসারী। তাঁরা এই দর্শনে উল্লিখিত নীতিগুলি শাসনকার্যে প্রয়োগ করেছেন। তাও চিন্তাধারায় বলা হয়েছে যে, একজন আদর্শ শাসক তাও-এর নীতি অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করবেন। তাওবাদের উ-ওয়েই বা কর্মহীন কার্যসম্পাদন-এর নীতিটিও চিনের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এইভাবে তাওবাদ চিনা সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখে। যদিও এটা ঠিক যে, এই দর্শনের পাশাপাশি কনফুসিয়াসবাদ ও বৌদ্ধ ধর্মও চিনের সংস্কৃতিতে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর