‘তিয়ান’ কী? কনফুসীয় ভাবধারায় নারীর মর্যাদা কেমন ছিল

তিয়ান
কনফুসীয় মতবাদ অনুযায়ী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, তাদের জীবনের ক্রিয়াকলাপ হল মানুষের নৈতিক প্রকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ, যা তিয়ান দ্বারা নির্ধারিত হয়। ‘তিয়ান’ অর্থাৎ স্বর্গ। কনফুসিয়াসের দর্শনে তিয়ান চেতনার ব্যাবহারিক ব্যবস্থার উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
(1) নৈতিক কর্তৃত্ব: কনফুসিয়াসের মতে, ‘তিয়ান’-কে নৈতিক কর্তৃত্বের উৎস বলা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, শাসকদের তিয়ান-এর ইচ্ছানুযায়ী শাসনকার্য চালানো উচিত। এই শাসন হবে সদাচার ও ন্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
(2) স্বর্গের ম্যান্ডেট: স্বর্গের ম্যান্ডেট (তিয়ান মিং) ধারণাতে বিশ্বাস করা হয় যে, শাসক তাঁর শাসনক্ষমতা স্বর্গ থেকে লাভ করেন। তবে এই ক্ষমতা শর্তহীন নয়। যদি শাসক অত্যাচারী হয়ে ওঠেন, তাহলে তিনি এই স্বর্গীয় ম্যান্ডেটটি হারাবেন এবং তাঁর পতন হবে।
(3) মহাজাগতিক শৃঙ্খলা: তিয়ান মহাজাগতিক শৃঙ্খলার প্রতিনিধিত্ব করে। কনফুসীয় মতাদর্শে মনে করা হয়, মানবসমাজ তিয়ানের শৃঙ্খলা ও সামঞ্জস্যের প্রতিফলন হওয়া উচিত।
(4) নৈতিক নির্দেশনা: তিয়ান কেবলমাত্র একটি দূরবর্তী ধারণাই নয়, এটি নৈতিক জীবনযাপনেরও দিকনির্দেশ করে থাকে। আসলে তিয়ানই মানুষের নৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা ও সমর্থন করে ব্যক্তিকে ন্যায়পরায়ণ জীবনযাপনের দিকে এগিয়ে দেয়।
কনফুসীয় ভাবধারায় নারীর মর্যাদা
কনফুসিয়াস স্ত্রীজাতিকে বিশেষ শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন না। তাঁর মতে-
- অশিক্ষিত এবং নারীদের সঙ্গে সন্তর্পণে ব্যবহার করতে হয়।
- হান (Hun) বংশের আমল থেকে কনফুসীয় নীতি অনুযায়ী নারীদের জীবন পরিচালিত হতে থাকে। সেসময় নারীদের তিনটি আনুগত্য এবং চারটি গুণের অধিকারী হতে হত। নারীরা বিয়ের আগে পিতার কাছে, বিয়ের পর স্বামীর কাছে এবং তার পরে পুত্রের কাছে এই সমস্ত গুণাবলি শিক্ষা নিত।
- হান বংশের শাসনকালের পরবর্তীতে নারীর মর্যাদা আরও হ্রাস পেয়েছিল। এই সময় থেকে বিধবা নারীদের পুনর্বিবাহকে অপরাধের দৃষ্টিতে দেখা হত। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে লেখিকা বান ঝাও (Ban Zhao) উল্লেখ করেছেন যে, সমকালে নারীরা সবরকম অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। নারীদের এই দুরবস্থার কারণ হিসেবে পশ্চিমি লেখকবর্গ এবং চিনের নব্য প্রজন্ম কনফুসীয় ভাবধরাকেই দায়ী করেছেন।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর